প্রাপ্তির খাতা কী একেবারেই শূন্য?
৭ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৭
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালে ওঠার হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। হাতছানি ছিল গর্বিত ইতিহাস লেখার। ক্রিকেট কুলীনদের দেখিয়ে দেখার একটি ব্যাপারও ছিল। ‘আমরাও পারি’। কিন্তু ২ জুলাই বার্মিংহামে ভারত বাধায় সব আয়োজনই পণ্ড হয়ে গেল। স্বপ্লীল গন্তব্য অধরা থেকে গেল, লেখা হলো না লাল সবুজের ক্রিকেটে গর্বের ইতিহাস, বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালও হয়ে রইল চিকচিকে মরীচিকা।
নিশ্চিতভাবেই তাতে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভক্তদের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের তৈরি হয়েছে, আফসোসে পুড়েছেন। আর মাশরাফি, সাকিবরা নীল হয়েছেন যত্নে লালিত স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায়।
আবার এটাও সত্যি, সেমি ফাইনাল খেলতে না পারলেও এই বিশ্বকাপ দিয়েই অন্য এক বাংলাদেশকে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। দারুন তেজি ও ধারাবাহিক এক দল। যে কোনো দলকে হারের গ্লানি উপহার দিতে যারা দারুণ পারঙ্গম। ২২ গজের বিশ্বযুদ্ধে এত ভালো ক্রিকেট টাইগাররা কবে খেলেছেন বোধকরি কেউই মনে করতে পারবেন না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম বিশ্বকাপ যেখানে শক্তিমত্তা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে সবসময় এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে রাশি রাশি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন লাল সবুজের দুর্বার যোদ্ধারা। শুরুটাই কী দুর্দান্তই! বড় রান চেজ করে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সংগ্রহটা ছিল নিতান্তই মামুলি (২৪৪)। তারপরেও কী লড়াই! কে দেখেছে কোন কালে? ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বড় মার্জিনের হারের ম্যাচেও সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি।
টানা দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজতো পাত্তাই পেল না। স্রেফ উড়িয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। স্কোরবোর্ডে ৩২১ রান তুলে চোখ রাঙানো ক্যারিবীয়ানদের তুলে পাঠালেন সমারেসেট কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইরে। ৯৯ বল থেকে সাকিব খেললেন ১২১ আর লিটন দাস ৬৯ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ থেকে বের হলেন।
নটিংহ্যামে তো আরো পরাক্রমশালী টাইগাররা। দাপুটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শেষ পর্যন্ত হেরেছে সত্যি, কিন্তু ওই ম্যাচেই ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে করেছে সর্বোচ্চ রান। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৩৮১ রানের বিপরীতে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৩৩৩ রান। ওই ম্যাচেই বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম।
রোজ বোলে ঘূর্নি যাদুকর আফগানদের বিপক্ষে দাপুটে জয়টিও কিন্তু বাংলাদেশের। ভারত, পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে দেওয়া দলটির বিপক্ষে সহজ তুলে নিয়ে সেমির দৌঁড়ে সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছিলেন স্টিভ রোডস শিষ্যরা। ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব। বিশ্বমঞ্চে যা ছিল তার প্রথম ৫ উইকেট। আবার ব্যাট হাতেও করেছিলেন ৫১ রান। যা তাকে একাধীক মাইলফলক ছোঁয়ার পথ উন্মোচন করেছিল।
ক্রিকেট দুনিয়ার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে একই ম্যাচে অর্শতক ও পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ এই অলরাউন্ডার। যা লম্বা সময় একচ্ছত্র দখলে রেখেছিলেন ভারতের যুবরাজ সিং। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ফিফটি ও পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়েছিলেন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। সাকিবই দেশের প্রথম ক্রিকেটার যিনি এই ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেটের কীর্তি গড়েছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বিশ্বকাপে তার রান ছিল ১ হাজার ১৬ আর উইকেট ৩৩টি।
এজবাস্টনে পরাশক্তি ভারতের বিপক্ষেও কী কম গেছে? কোহলি, রোহিতদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই কে না দেখেছে। আর একটু হলে তো জিতেই যেত বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমানের স্বরূপে ফেরাও তো কম অর্জন না।
ক্রিকেট মক্কা লর্ডসও দুহাত ভরে দিয়েছে টাইগারদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে গেলেও এই ম্যাচেই ক্রিকেট ওয়ান্ডার শচীনকে ছুঁয়েছেন সাকিব। এক বিশ্বকাপে সাতটি ফিফটি প্লাস ইনিংস ছোঁয়ার রেকর্ড আগে একমাত্র শচীনেরই ছিল। ২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি ১টি সেঞ্চুরি করেছিলেন ক্রিকেট ওয়ান্ডার। এবারের বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ৫টি ফিফটি ও দুটি সেঞ্চুরিতে তাকে ধরে ফেলেছেন সাকিব। ছুটছিলেন শচীনের মোট সংহের দিকেও কিন্তু। গন্তব্য ছোঁয়া হলা না। ৬৪ রানে আউট হয়ে থামতে হয়েছে মোট ৬০৬ রানে। শচীনের সংগ্রহ ছিল ৬৭৩।
রান বন্যার পাশাপাশি ১১টি উইকেটও নিয়েছেন সাকিব, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। এক টুর্নামেন্টে ১০ উইকেটের সঙ্গে ৪০০ রানের কোটা কোনো ক্রিকেটারই স্পর্শ করতে পারেননি। যা তাকে বিশ্বকাপ সেরা খেলোয়াড়ের দৌঁড়ে টিকিয়ে রেখেছে।
কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান তো লর্ডসের অনার্স বোর্ডই জায়গা করে নিলেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক লর্ডসে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ১০ ওভার বল করে ৭৫ রান দিয়ে ৫ তুলে নিয়েছেন উইকেট। এই পাঁচ উইকেটের মাধ্যমেই ঐতিহাসিক লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন এই টাইগার পেসার। এর আগে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছিলেন তামিম ইকবাল ও পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি