নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড
১৫ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৪
এই ফাইনাল শুধু ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের ফাইনাল নয়। শুধু নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার ফাইনাল নয়। এই ফাইনালকে বলা হচ্ছিল ক্রিকেটের মুক্তিরও ফাইনাল। ২৭ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড, যারা সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপের আয়োজক। আর টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠে কিউইরা, যারা সর্বোচ্চ আটবার সেমি ফাইনালে উঠেছিল। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ভরা লর্ডসের ফাইনাল গড়িয়েছে সুপার ওভারে। সেখানে ১৫ রান তোলে দুই দলই। পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য বদল হলো অসংখ্যবার। বেশি বাউন্ডারি পাওয়ায় জয়ী হয় ইংল্যান্ড।
শক্তিশালী ভারতকে সেমি ফাইনালের রিজার্ভ-ডে’তে ১৮ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে ইংলিশরা। আর এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দু’দলের ম্যাচে কিউইদের ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংলিশরা। এই ফাইনালের পর নিউজিল্যান্ডকে পরাজিতের তালিকায় রাখা হলেও সেটা কেবল নিয়মরক্ষার খাতিরে। হারেনি কেই, বেশি বাউন্ডারি মারায় ইংলিশরা জয়ী হয়েছে। সুপার ওভারসহ ইংলিশদের চার ও ছক্কা ছিল মোট ২৬টি, নিউজিল্যান্ডের ১৭টি।
রোববার (১৪ জুলাই) লর্ডসের ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড দলপতি কেন উইলিয়ামসন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে কিউইরা তোলে ২৪১ রান। দুই দলের জন্য ছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা বুঝে নেওয়ার সুযোগ। ইংলিশরা ৫০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৪১ রান। ম্যাচ টাই হলে সুপার ওভারে গড়ায় ফাইনালের ভাগ্য।
লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনাল দিয়ে শেষ হলো বিশ্বকাপের ৪৬ দিন ব্যাপী আসর। পর্দা নামলো ইংল্যান্ডে বসা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১২তম আসরের। বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় টস হতে ১৫ মিনিট দেরি হবে বলে জানানো হয়। টস হয় বাংলাদেশ সময় ৩টা ১৫ মিনিটে, ম্যাচ শুরু হয় ৩টা ৪৫ মিনিটে। গাজী টিভির পর্দায় ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ওপেনিংয়ে নামেন মার্টিন গাপটিল এবং হেনরি নিকোলস। দলীয় ২৯ রানের মাথায় বিদায় নেন গাপটিল। ক্রিস ওকসের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে কিউই এই ওপেনার ১৮ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় করেন ১৯ রান। এরপর স্কোরবোর্ডে আরও ৭৪ রান যোগ করেন দলপতি কেন উইলিয়ামসন এবং ওপেনার হেনরি নিকোলস। দলীয় ১০৩ রানের মাথায় বিদায় নেন উইলিয়ামসন। লিয়াম প্লাংকেটের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে কিউই দলপতির ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল দুটি বাউন্ডারি।
দলীয় ১১৮ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার হেনরি নিকোলস। বিদায়ের আগে ফিফটি হাঁকান তিনি। লিয়াম প্লাংকেটের দ্বিতীয় শিকারে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে নিকোলস ৭৭ বলে চারটি বাউন্ডারিতে করেন ৫৫ রান। রস টেইলর বিদায় নেন দলীয় ১৪১ রানের মাথায়। মার্ক উডের করা ৩৪তম ওভারে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায়ের আগে টেইলর ৩১ বলে করেন ১৫ রান। ২৫ বলে তিন বাউন্ডারিতে ১৯ রান করে ফেরেন অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। কলিন ডি গ্রান্ডহোম (১৬) দলকে বেশিদূর নিতে পারেননি। ৪৯তম ওভারে বিদায় নেওয়ার আগে টম ল্যাথাম করেন ৪৭ রান। তার ৫৬ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল দুটি চার, একটি ছয়।
ইংলিশ পেসার লিয়াম প্লাংকেট ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট। মার্ক উড ১০ ওভারে ৪৯ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। বেন স্টোকস ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ৮ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন স্পিনার আদিল রশিদ। ক্রিস ওকস ৯ ওভারে ৩৭ রান খরচায় তুলে নেন তিনটি উইকেট। জোফরা আর্চার ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে একটি উইকেট পান।
২৪২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৮ রানের মাথায় বিদায় নেন জেসন রয়। ব্যক্তিগত ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আরেক ওপেনার ইনফর্ম জনি বেয়ারস্টো ৫৫ বলে সাতটি বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করে বিদায় নেন। তিন নম্বরে নামা জো রুট (৭) নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলপতি ইয়ন মরগানও (৯) খুব বেশিদূর এগুতে পারেননি। দলীয় ৮৬ রানে টপঅর্ডারের চার উইকেট পড়ে ইংলিশদের।
সেখান থেকে ১১০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে টানতে থাকেন বেন স্টোকস এবং জস বাটলার। দলীয় ১৯৬ রানের মাথায় বিদায় নেন বাটলার। ৬০ বলে ছয়টি বাউন্ডারিতে ৫৯ রান করেন তিনি। মাঝে লিয়াম প্লাংকেট ১০ বলে করেন ১০ রান। জোফরা আর্চার কোনো রান না করেই ফেরেন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৫ রান। বেন স্টোকস প্রথম দুই বলে রান পাননি। তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। চতুর্থ বলে ডাবল রান নেওয়ার পথে স্টোকসের ব্যাটে লেগে অতিরিক্ত আরও চার রান আসে। পঞ্চম বলে রানআউট হন আদিল রশিদ। শেষ বলে দরকার হয় ২ রানের। ডাবল রান নেওয়ার পথে রানআউট হন মার্ক উড। ম্যাচ টাই হলে গড়ায় সুপার ওভারে। বেন স্টোকস ৯৮ বলে ৫ চার আর ২ ছক্কায় ৮৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।
নিউজিল্যান্ডের কলিন ডি গ্রান্ডহোম ১০ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেন। ১০ ওভারে ৪০ রান খরচায় একটি উইকেট পান ম্যাট হেনরি। স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ৩ ওভারে ১১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। লুকি ফার্গুসন ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। জিমি নিশাম ৭ ওভারে ৪৩ রান খরচায় তিনটি উইকেট পান। ট্রেন্ট বোল্ট ১০ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
সুপার ওভার: ইংল্যান্ড ব্যাটিং (১৫ রান)
০.১ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু বেন স্টোকস-৩ রান
০.২ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু জস বাটলার-১ রান
০.৩ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু স্টোকস-৪ রান
০.৪ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু স্টোকস-১ রান
০.৫ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু বাটলার-২ রান
০.৬ ওভার: ট্রেন্ট বোল্ট টু বাটলার-৪ রান
নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং: (১৫ রান)
০.১ ওভার: জোফরা আর্চার টু জিমি নিশাম-ওয়াইড বল-১ রান
০.১ ওভার: আর্চার টু নিশাম-২ রান
০.২ ওভার: আর্চার টু নিশাম-৬ রান
০.৩ ওভার: আর্চার টু নিশাম-২ রান
০.৪ ওভার: আর্চার টু নিশাম-২ রান
০.৫ ওভার: আর্চার টু নিশাম-১ রান
০.৬ ওভার: আর্চার টু গাপটিল-১ রান (রানআউট)
ইংল্যান্ড একাদশ: ইয়ন মরগান (অধিনায়ক), জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জোফরা আর্চার, লিয়াম প্লাংকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস এবং মার্ক উড।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, রস টেইলর, টম ল্যাথাম (উইকেটরক্ষক), কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, জিমি নিশাম, ম্যাট হেনরি, লুকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট।
সারাবাংলা/এমআরপি