টানা দুই বিশ্বকাপের সেরা শিকারি স্টার্ক
১৫ জুলাই ২০১৯ ০২:০০
বিশ্বকাপের আগে মিচেল স্টার্ক শেষ ওয়ানডে ম্যাচে নেমেছিলেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর ইনিজুরির কারণে খেলেননি ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষের সিরিজ। যাননি ভারতের মাটিতে অজিদের সাথে সিরিজ খেলতেও। খেলেননি ২০১৯ মৌসুমের আইপিএলও। বিশ্বকাপে নিজেকে শতভাগ ফিট রাখার জন্য করেছেন সর্বোচ্চ চেষ্টা। আর তার প্রতিদান দিয়েছেন বিশ্বকাপেই।
দ্বাদশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অজিদের ৮ উইকেটে হারিয়ে লর্ডসের ফাইনালে উঠে ইংলিশরা। তাতে অস্ট্রেলিয়ান পেসার স্টার্কের বিশ্বকাপ মিশনটাও থেমে যায়। তবে, এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন স্টার্ক। তাতে টপকে গেছেন তারই স্বদেশি আরেক পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রাকে।
দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টোকে এলবির ফাঁদে ফেলেন অজি স্পিডস্টার স্টার্ক। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ৩৪ রান করা বেয়ারস্টো। আর সেই উইকেট নেওয়ার মধ্যদিয়েই গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন স্টার্ক।
বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট নিয়ে এতোদিন শীর্ষে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেস কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা। তারই উত্তরসূরি আরেক পেসার মিচেল স্টার্ক এবার শীর্ষে উঠলেন (২৭ উইকেট)। গত বিশ্বকাপে ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার উঠেছিল স্টার্কের হাতে। এই বিশ্বকাপে সেখান থেকেই শুরু করেছেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ছিলেন ধারাবাহিক উইকেট শিকারি।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭১ উইকেট নেওয়া ম্যাকগ্রা ২০০৭ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট। কিংবদন্তি এই পেসারের থেকে এক ম্যাচ কম খেলেই স্টার্ক তাকে টপকে গেছেন। এই তালিকায় তিনে থাকা শ্রীলঙ্কান পেসার চামিন্দা ভাস ২০০৩ বিশ্বকাপে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। ২০০৭ বিশ্বকাপে লঙ্কান কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। সমান সংখ্যক উইকেট নিয়েছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে আগুনে ফর্মে থাকা অজি পেসার শন টেইট।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ম্যাকগ্রার অনেক কাছে পৌঁছেছিলেন মিচেল স্টার্ক। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ের ওপর ভর করে অজিরা জিতেছিল পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ। আর নামের পাশে স্টার্ক যোগ করেছিলেন ২২টি উইকেট।
দ্বাদশ বিশ্বকাপে দুইবার চার উইকেট আর দুইবার করে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক।
দ্বাদশ বিশ্বকাপে স্টার্কের বোলিং ফিগার:
আফগানদের বিপক্ষে ৩১/১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৬/৫, ভারতের বিপক্ষে ৭৪/১, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৩/২, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৫/৪, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৫/২, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩/৪, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬/৫, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৯/২ আর দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০/১।
১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১২টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৫ জন বোলার একক এবং যৌথভাবে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন। ১৯৯৯, ২০১১ এবং ২০১৫ সালে যৌথভাবে দুইজন বোলার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের জেফ অ্যালট এবং অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন যৌথভাবে ২০টি উইকেট তুলে নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন।
এরপর ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতীয় পেসার জহির খান এবং পাকিস্তানের স্পিনার শহীদ আফ্রিদি যৌথভাবে ২১টি উইকেট তুলে নিয়ে হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আর ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক এবং নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট উভয়ই নামের পাশে যোগ করেন ২২টি করে উইকেট। আর দু’জনই যৌথভাবে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন। গ্রেট ম্যাকগ্রার ২৬ উইকেট শিকারের রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ ছিল সেবার। স্টার্ক অনেক কাছে গিয়েও স্পর্শ করতে পারেননি ম্যাকগ্রাকে। এবার কিংবদন্তিকে টপকে গেলেন উত্তরসূরি।
এই বিশ্বকাপে স্টার্ক ১০ ম্যাচে বল করেছেন ৯২.২ ওভার। ৫.৪৩ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন ৫০২ আর নামের পাশে অর্জন করেছেন ২৭টি উইকেট। এবারের বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ২৬ রান খরচায় ৫ উইকেট। চলতি বিশ্বকাপে দুই বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন আর চার উইকেট নিয়েছেন দুই ম্যাচে।
সারাবাংলা/এমআরপি
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ গ্লেন ম্যাকগ্রা বিশ্বকাপ স্পেশাল মিচেল স্টার্ক সর্বোচ্চ উইকেট