Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৯৯২’র ভূত চেপেছিল পাকিস্তানের ওপর


১৬ জুলাই ২০১৯ ১৬:৩৪ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ২১:০৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বাদশ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের হাতে। নিউজিল্যান্ডকে আটকে দিয়ে সুপার ওভারে গড়ানো ফাইনালে বাউন্ডারির হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংলিশরা। এই বিশ্বকাপে দারুণ সব ম্যাচের সঙ্গে ছিল রোমাঞ্চ ছড়ানো বেশ কিছু ঘটনা। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাকিস্তানের ঘাড়ে চেপে বসা ১৯৯২ বিশ্বকাপের ভূত।

১৯৯২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। সেবার ইমরান খানের হাতে উঠেছিল শিরোপা। ১৯৯২ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এবার বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকে। টেবিলের পাঁচ নম্বরে থেকে দেশে ফিরেছে পাকিস্তান। কাকতালীয়ভাবে হলেও ১৯৯২ বিশ্বকাপের আসরের মতোই পাকিস্তানের এবারের ফলাফল হুবহু মিলে গেছে। এটা ছিল এই বিশ্বকাপের আলোচনার অন্যতম বিষয়। প্রথম দিকে মজা নিয়ে এই ঘটনাগুলো ছড়িয়ে পড়লেও এতটা কাকতাল হবে তা বোধহয় কেউ ভাবেননি।

বিজ্ঞাপন

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের আয়োজনে ১৯৯২ বিশ্বকাপের মতো এবারো এক দল অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে লড়ছে। সেবার দল ছিল ৯টি, প্রতি দলের ম্যাচ ছিল আটটি করে। এরপর সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া চারটি দল উঠেছিল সেমি ফাইনালে। পাকিস্তান ৮ ম্যাচে চারটি জয় আর একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের এক পয়েন্ট নিয়ে মোট পয়েন্ট পায় ৯। চতুর্থ দল হিসেবে উঠেছিল সেবারের সেমিতে। নিউজিল্যান্ড ১৪, ইংল্যান্ড ১১, দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে পা রেখেছিল। সেমি আর সেমি ফাইনালে জিতে পাকিস্তান জিতেছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ, পুরো টুর্নামেন্টে খেলেছিল দশটি ম্যাচ।

এবারের বিশ্বকাপে দল মোট ছিল ১০টি। প্রতি দল একে অন্যের মুখোমুখি হয়, তাতে প্রতি দলের ম্যাচ হয় ৯টি করে। সেমি ফাইনালের আগেই বিদায় নেওয়া পাকিস্তানও খেলেছে ৯টি ম্যাচ (পরিত্যক্ত ম্যাচ সহ)। তাতে ১৯৯২ বিশ্বকাপের মতোই তাদের ৯টি ম্যাচের ফল একই ছিল।

প্রথম ম্যাচ: ১৯৯২ ফরম্যাটের মতো চলতি বিশ্বকাপে পাকিস্তান নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেবার পাকিস্তানিদের ৫০ ওভারে সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২০/২। উইন্ডিজরা কোনো উইকেট না হারিয়েই পাকিস্তানিদের উড়িয়ে দেয়। সেবার ১০ উইকেটে জিতেছিল ক্যারিবীয়ানরা। এবার জিতেছে ৭ উইকেটে। এবারো এক কথায় উড়ে গেছে পাকিস্তান। ২১.৪ ওভারে পাকিস্তান ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায়। জবাবে, ১৩.৪ ওভারে জয় তুলে নেয় উইন্ডিজ।

দ্বিতীয় ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আমির সোহেলের সেঞ্চুরি আর ওয়াসিম আকরামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তান জিতেছিল ৫৩ রানে। এই বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তান। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ১৪ রানে। আগে ব্যাট করা পাকিস্তান ৮ উইকেটে তুলেছিল ৩৪৮ রান। জবাবে, ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ৩৩৪ রানের মাথায়।

তৃতীয় ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের তৃতীয় ম্যাচ ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেবার ৪০.২ ওভারে রমিজ রাজা, ইনজামাম, জাভেদ মিয়াদাদ, সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদরা মাত্র ৭৪ রানেই অলআউট হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ইংলিশদের সামনে ১৬ ওভারে ৬৪ রানের টার্গেট দাঁড়ায়। ৮ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে গ্রায়েম গুচ, ইয়ান বোথামরা তোলে ২৪ রান। এরপর বৃষ্টি নামলে আর মাঠে বল গড়ায়নি। ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের তৃতীয় ম্যাচটি ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বৃষ্টির কারণে এই ম্যাচটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

চতুর্থ ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের চতুর্থ ম্যাচটি ছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। ভারত আগে ব্যাট করে ৪৯ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ২১৬ রান। জবাবে, ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৮.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে পাকিস্তান তোলে ১৭৩ রান। ভারত জেতে ৪৩ রানের ব্যবধানে। এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের চতুর্থ ম্যাচটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আগে ব্যাট করে অজিরা ৪৯ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ৩০৭ রান। ৪৫.৪ ওভারে পাকিস্তান অলআউট হওয়ার আগে তোলে ২৬৬ রান। অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জেতে ম্যাচটি।

পঞ্চম ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পঞ্চম ম্যাচটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে প্রোটিয়ারা তোলে ২১১ রান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটিতে ৩৬ ওভারে পাকিস্তানের টার্গেট দাঁড়ায় ১৯৪ রান। ৮ উইকেট হারানো পাকিস্তানের ইনিংস থামে ১৭৩ রানের মাথায়। বৃষ্টি আইনে প্রোটিয়ারা ম্যাচটি জেতে ২০ রানের ব্যবধানে। এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পঞ্চম ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচেও থাবা বসিয়েছিল বৃষ্টি। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ আসরে কখনোই জেতেনি পাকিস্তান। এবারো সেই একই গল্প। ১৬ জুন ওল্ড ট্রাফোর্ডে ৫০ ওভারে ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৩৬ রান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তানের টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২। পাকিস্তান ৬ উইকেট হারিয়ে তোলে ২১২ রান। বৃষ্টি আইনে পাকিস্তান হারে ৮৯ রানে।

ষষ্ঠ ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৮ রানে হারিয়ে দেয়। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান আমির সোহেলের ৭৬ রানে ভর করে তোলে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২০ রান। ৪৫.২ ওভারে ১৭২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ সেরা হন আমির সোহেল। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে পাকিস্তান নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রোটিয়াদের ৪৯ রানে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তুলেছিল ৩০৮ রান। ব্যাট হাতে এই ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮৯ রান করেন হারিস সোহেল। ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে প্রোটিয়ারা তোলে ২৫৯ রান। ম্যাচ সেরা হন হারিস সোহেল।

সপ্তম ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা তুলেছিল ২১২ রান। জবাবে, ৫ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান জয় তুলে নেয়। ওই ম্যাচে জয় থেকে সামান্য দূরে থাকতে রান আউট হন ইনজামাম উল হক। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৩৭ রান। জবাবে, ৫ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান জয় তুলে নেয়। এই ম্যাচে জয় থেকে সামান্য দূরে থাকতে রানআউট হন হারিস সোহেল। ইনজামাম-হারিসের রানআউট মিলিয়ে দিয়েছে দুই বিশ্বকাপ আসরকে। শুধু তাই নয়, ওই বিশ্বকাপে কিউই দলে ছিলেন রড ল্যাথাম আর এই বিশ্বকাপে কিউই দলে আছেন তার ছেলে টম ল্যাথাম। নিউজিল্যান্ড ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের আগে অপরাজিত ছিল। এবারো গল্পটা একই, অপরাজিত থেকে কিউইরা নেমেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে এবং ম্যাচটিও হেরেছে।

অষ্টম ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে অষ্টম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারায় পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ইমরান খানরা ফাইনালের টিকিট কাটে। এবার পাকিস্তানের অষ্টম ম্যাচ ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আফগানদের বিপক্ষেও জিতেছিল পাকিস্তান। ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় সরফরাজের দলটি।

নবম ম্যাচ: ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান উঠেছিল সেমি ফাইনালে। সেমিতে মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ডের, সেটি ছিল পাকিস্তানের নবম ম্যাচ। আগে ব্যাট করে কিউইরা ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৬২ রান। শেষ ওভারের ঠিক আগ মুহূর্তে ৬ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান জয় তুলে নেয়। এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের নবম ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। নিজেদের নবম ম্যাচেও জিতেছে পাকিস্তান।

১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে পাকিস্তান। এবার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে পাকিস্তানকে। তার আগে নিজেদের খেলা ৯ ম্যাচের প্রতিটির ফলই হুবহু মিলে গেছে ইমরান খানের উত্তরসূরিদের।

১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান: পরাজয়-জয়-পরিত্যক্ত-পরাজয়-পরাজয়-জয়-জয়-জয়-জয়-জয় (শিরোপা জয়)
২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান: পরাজয়-জয়-পরিত্যক্ত-পরাজয়-পরাজয়-জয়-জয়-জয়-জয় (গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়)

সারাবাংলা/এমআরপি

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ পাকিস্তান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর