ওয়ানডের ১৪তম অধিনায়ক তামিম
২০ জুলাই ২০১৯ ১৬:৫৬
ইনজুরির কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলা হচ্ছে না নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির। টানা ক্রিকেটের ধকল সামলাতে সহ-অধিনায়ক সাকিব এই সিরিজে বিশ্রামে থাকছেন। বাধ্য হয়েই নতুন কাউকে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে বেছে নেওয়া হয়েছে তামিম ইকবালকে। শ্রীলঙ্কা সফরে বন্দরনগরীর ক্রিকেটার তামিমকে দেখা যাবে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিতে।
তামিম উঠে এসেছেন চট্টগ্রামের বনেদি এক পরিবার থেকে। এমন এক পরিবার, যেখানে বাবা ইকবাল খান ছিলেন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা, চাচা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আইসিসি ট্রফিজয়ী সাবেক অধিনায়ক। চাচার হাত ধরে তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল খানও খেলেছেন জাতীয় দলে, ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওয়ানডে দলপতি। একটা লম্বা সময় ধরে নাফিসকেই ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। সময়ের স্রোতে নাফিস হারিয়ে গেলেও চাচা-বড় ভাইদের হাত ধরে জাতীয় দলে আসা তামিম নিজের জায়গাটি পাকা করেছেন। সবশেষ হয়েছেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। জাতীয় দলকে এই প্রথমবার ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একটা দলের অধিনায়ক।
তামিমের চাচা আকরাম খানও ছিলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সদস্য জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যা এই প্রথমবার। তবে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে টেস্টে তামিম জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই মাত্র অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তামিম, ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ। আকরাম খান (১৯৯৫-৯৮) জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন। তার অধীনে বাংলাদেশ খেলেছে ১৫টি ওয়ানডে, যেখানে জিতেছিল ১টি ম্যাচ আর ১৪টি ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ।
তামিমের হাত ধরে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে ১৪তম ওয়ানডে অধিনায়ক। ১৯৮৬-৯০ পর্যন্ত দেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলেছিল ৭টি ওয়ানডে ম্যাচ। এরপর ১৯৯০ সালে দুই ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ১৯৯৫-৯৮ পর্যন্ত অধিনায়ক ছিলেন আকরাম খান। ১৯৯৮ সালে নেতৃত্বে পরিবর্তন এলে দেশের চতুর্থ ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে আকরামের স্থলাভিষিক্ত হন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি লাল-সবুজদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ১৫ ওয়ানডেতে।
এরপর নাইমুর রহমান দুর্জয় (২০০০-০১, ৪ ম্যাচ), খালেদ মাসুদ পাইলট (২০০১-০৬, ৩০ ম্যাচ), খালেদ মাহমুদ সুজন (২০০৩, ১৫ ম্যাচ), হাবিবুল বাশার সুমন (২০০৪-০৭, ৬৯ ম্যাচ), রাজিন সালেহ (২০০৪, ২ ম্যাচ), মোহাম্মদ আশরাফুল (২০০৭-০৯, ৩৮ ম্যাচ), সাকিব আল হাসান (২০০৯-১৫, ৫০ ম্যাচ), মুশফিকুর রহিম (২০১১-১৪, ৩৭ ম্যাচ) এবং মাশরাফি (২০১১-বর্তমান, ৭৩ ম্যাচ) জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৪তম ওয়ানডে দলপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তামিম।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। তিনি ৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর আরও ৯ জন ভিন্ন অধিনায়ক পেয়েছে বাংলাদেশ। খালেদ মাসুদ পাইলট ১২ ম্যাচে, খালেদ মাহমুদ সুজন ৯ ম্যাচে, হাবিবুল বাশার সুমন ১৮ ম্যাচে, মোহাম্মদ আশরাফুল ১৩ ম্যাচে, মাশরাফি ১ ম্যাচে, সাকিব ১৩ ম্যাচে, মুশফিকুর রহিম ৩৪ ম্যাচে, তামিম ১ ম্যাচে আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৬ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে বাংলাদেশ পেয়েছে ভিন্ন ছয় অধিনায়ককে। টি-টোয়েন্টিতে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলেছিল শাহরিয়ার নাফিসের নেতৃত্বে। একটি ম্যাচেই নেতত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন নাফিস। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলেছিল ১১টি ম্যাচ। এছাড়া, সাকিব ১৪ ম্যাচে, মুশফিকুর রহিম ২৩ ম্যাচে, মাশরাফি ২৮ ম্যাচে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সারাবাংলা/এমআরপি