একই পরিবার থেকে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যারা
২০ জুলাই ২০১৯ ১৭:০৬
তামিম ইকবালের হাত ধরে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে ১৩তম ওয়ানডে অধিনায়ক। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির ইনজুরি, সহ-অধিনায়ক সাকিবের বিশ্রামে শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন তামিম। টিম ম্যানেজমেন্ট আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তামিমের উপরই আস্থা রেখেছে।
তামিম উঠে এসেছেন চট্টগ্রামের বনেদি এক পরিবার থেকে। এমন এক পরিবার, যেখানে বাবা ইকবাল খান ছিলেন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা, চাচা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আইসিসি ট্রফিজয়ী সাবেক অধিনায়ক। চাচার হাত ধরে তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল খানও খেলেছেন জাতীয় দলে, ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওয়ানডে দলপতি। একটা লম্বা সময় ধরে নাফিসকেই ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। সময়ের স্রোতে নাফিস হারিয়ে গেলেও চাচা-বড় ভাইদের হাত ধরে জাতীয় দলে আসা তামিম নিজের জায়গাটি পাকা করেছেন। সবশেষ হয়েছেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। জাতীয় দলকে এই প্রথমবার ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একটা দলের অধিনায়ক।
তামিমের চাচা আকরাম খানও ছিলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সদস্য জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যা এই প্রথমবার। তবে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে টেস্টে তামিম জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই মাত্র অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তামিম, ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ। আকরাম খান (১৯৯৫-৯৮) জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন। তার অধীনে বাংলাদেশ খেলেছে ১৫টি ওয়ানডে, যেখানে জিতেছিল ১টি ম্যাচ আর ১৪টি ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে একই পরিবারের দুই সদস্যের অধিনায়কের দায়িত্ব সামলানোর ঘটনা নতুন হলেও ক্রিকেট ইতিহাস ঘাটলে আরও অনেক দেশে এমন কীর্তির দেখা মেলে। ভারতের ইফতিখার আলি খান পাতৌদি এবং তার ছেলে মনসুর আলি খান পাতৌদি টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন। ভারতের গুরগাঁও জেলার শহর পাতৌদির অষ্টম নবাব ছিলেন ইফতিখার আলি খান পতৌদি। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করা সিনিয়র পাতৌদি ইংল্যান্ড ও ভারত উভয় দলেই খেলেছিলেন। ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক টেস্টে ১০২ রান করা ইফতিখার পাতৌদি ১৯৪৬ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরে ভারতের জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মাত্র ২১ বছর বয়সে জুনিয়র পাতৌদি ভারতের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। যিনি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোট ৪৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। জনপ্রিয় অভিনেত্রী শর্মিলী ঠাকুরকে বিয়ে করা জুনিয়র পাতৌদির ছেলে সাইফ আলী খান ও মেয়ে সোহা আলী খান ক্রিকেটে আসেননি, মায়ের হাত ধরে সিনেমা জগতে আলো ছড়িয়েছেন।
এছাড়া, একই পরিবারের দুই সদস্য লালা অমরনাথ এবং তার ছেলে মহিন্দর অমরনাথ ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইফতিখার আলি খান পাতৌদির স্থলাভিষিক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে লালা অমরনাথ ভারতের টেস্ট দলপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ভারতীয় হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন লালা অমরনাথ। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম অধিনায়ক। লালা অমরনাথের তিন ছেলে সুরিন্দর, মহিন্দর ও রাজিন্দর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সুরিন্দর ১৯৭৬ সালে বাবার মতোই অভিষেক টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। সুরিন্দর ও মহিন্দর অমরনাথ ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেললেও রাজিন্দর জাতীয় দলে খেলেননি।
মহিন্দর অমরনাথ ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে দারুণ অলরাউন্ড পারফর্ম করা মহিন্দর ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে ভারতকে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন মহিন্দর অমরনাথ।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলপতি ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল। ৩০ ম্যাচে তিনি অজিদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ভাই গ্রেগ চ্যাপেল ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অজিদের ৪৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দেন। তারা দুজন ওয়ানডেতেও অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। চ্যাপেল ব্রাদারের দাদা ভিক্টর ইয়র্ক রিচার্ডসন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট দলপতি। ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে তিনি অজিদের ৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার উত্তরসূরি হয়ে পরে স্যার ডন ব্রাডম্যান অধিনায়ক হয়েছিলেন।
সারাবাংলা/এমআরপি