১-০ তে পিছিয়ে থাকলো বাংলাদেশ
২৬ জুলাই ২০১৯ ২৩:০৮
বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ছুঁড়ে দেওয়া ৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে সফরকারীরা অলআউট হয় ২২৩ রানের মাথায়। তাতে ম্যাচ হারে ৯১ রানের ব্যবধানে। এই ম্যাচে জিতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি শেষে ১-০ তে লিড নিয়েছে লঙ্কানরা। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ জুলাই। বিদায়ী ম্যাচে পেসার লাসিথ মালিঙ্গাকে জয় উপহার দিল লঙ্কানরা।
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফরকারী টাইগারদের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে লঙ্কানরা ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৪ রান। জবাবে, বাংলাদেশ ৪১.৪ ওভারে ২২৩ রান তুলে অলআউট হয়।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টিভি। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৮ এবং ৩১ জুলাই। দিবারাত্রির তিনটি একদিনের ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে কলম্বোতে। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের সবক’টি ম্যাচ সরাসরি দেখা যাবে র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে।
এই সিরিজে ইনজুরির কারণে নেই নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি। ছুটিতে আছেন সাকিব, লিটন দাস। আর ইনজুরির কারণে নেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। টাইগারদের নেতৃত্বভার দেওয়া হয়েছে তামিম ইকবালকে। ওয়ানডের ১৪তম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তামিম। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি খেললেন লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।
প্রথম ওভারে টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল বোলিং আক্রমণে আনেন দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া পেসার শফিউল ইসলামকে। প্রথম ওভারে ২ রান দেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে শফিউল ফিরিয়ে দেন ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোকে। স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হওয়ার আগে ফার্নান্দো ১৩ বলে করেন ৭ রান। দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ১২তম ওভারে শফিউলের বলে কুশল পেরেরা একটি ডেলিভারি ঠিকমতো খেলতে পারেননি, বল জমে মুশফিকের গ্লাভসে। টাইগারদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান।
৯৭ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন দিমুথ করুনারত্নে এবং কুশল পেরেরা। ইনিংসের ১৫তম ওভারের শেষ বলে মিরাজ ফিরিয়ে দেন লঙ্কান দলপতি করুনারত্নেকে। সুইপ করতে গিয়ে টপএজ হয়ে মোস্তাফিজের তালুবন্দি হন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে লঙ্কান দলপতি ৩৭ বলে চারটি চারের সাহায্যে করেন ৩৬ রান। দলীয় ১০৭ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
২৮তম ওভারে মোসাদ্দেককে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে ১০০ রানের জুটি গড়েন পেরেরা। ইনিংসের ৩৩তম ওভারে সৌম্য সরকারের বলে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৯৯ বলে ১৭টি চার আর এবটি ছক্কায় পেরেরা করেন ১১১ রান। দলীয় ২০৭ রানের মাথায় লঙ্কানরা তৃতীয় উইকেট হারায়। পরের ওভারে রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৪৯ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৪৩ রান করা কুশল মেন্ডিস।
এরপর স্কোরবোর্ডে আরও ৬০ রান যোগ করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবং লাহিরু থিরিমান্নে। মোস্তাফিজের বলে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হন ৩০ বলে ২৫ রান করা থিরিমান্নে। শফিউল দ্রুত ফিরিয়ে দেন থিসারা পেরেরাকে (২)। এবারো ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। মোস্তাফিজের বলে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫২ বলে ৪৮ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ১২ বলে ১৮ রান করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে শেষ ওভারে সাব্বিরের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করেন শফিউল ইসলাম। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ৬ রান করে অপরাজিত থাকেন লাসিথ মালিঙ্গা।
মিরাজ ৯ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। রুবেল হোসেন ৯ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। সৌম্য সরকার ৫ ওভারে ১৭ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১ ওভারে ৪ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৭৫ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। শফিউল ইসলাম ৯ ওভারে ৬২ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট।
৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে তামিমকে বোল্ড করেন লাসিথ মালিঙ্গা। দলীয় ১ রানের মাথায় বিদায় নেন বাংলাদেশ দলপতি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় নুয়ান প্রদীপের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ২১ বলে ১০ রান। ৩০ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। মালিঙ্গার অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে সৌম্য ২২ বলে করেন ১৫ রান। দলীয় ৩৯ রানের মাথায় ৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে দেন লাহিরু কুমারা। বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।
এরপর দলকে টেনে নিতে থাকেন সাব্বির-মুশফিক। ইনিংসের ২৯তম ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফার্নান্দোর হাতে ধরা পড়েন সাব্বির। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে ১১১ রানের জুটি গড়েন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে সাব্বির ৫৬ বলে ৭টি চারের সাহায্যে করেন ৬০ রান। দলীয় ১৫০ রানের মাথায় বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়।
মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৬তম ফিফটির দেখা পান। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি রান আউট হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন (১২)। দ্রুতই বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ (২)। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় বিদায় নেন মুশফিক। তার আগে ৮৬ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে করেন ৬৭ রান। একই ওভারে নুয়ান প্রদীপ বোল্ড করেন ২ রান করা শফিউল ইসলামকে। মোস্তাফিজ ১৪ বলে তিন বাউন্ডারিতে ১৮ রান করে আউট হন।
শেষ ওয়ানডেতে লাসিথ মালিঙ্গা ৯.৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে পান ৩টি উইকেট। নুয়ান প্রদীপ ৩টি, লাহিরু কুমারা একটি এবং ডি সিলভা দুটি উইকেট তুলে নেন।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন এবং শফিউল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), কুশল পেরেরা, আভিস্কা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, লাহিরু থিরিমান্নে, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, নুয়ান প্রদীপ, লাহিরু কুমারা এবং লাসিথ মালিঙ্গা।