ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজের সলিল সমাধি
২৮ জুলাই ২০১৯ ২২:৪৫
আবারও পোড়ো বাড়ির নিস্তব্ধতা। আবারও শ্মশানের নীরবতা লাল সবুজের শিবিরে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজের সলিল সমাধি ঘটে গেল! সেটা একমাত্র বাংলাদেশের নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই। মুশফিক ও মেহেদি হাসান মিরাজ যে লড়াইটা করেছেন, টপঅর্ডার, মিডলঅর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যদি তার ছিটেফোঁটাও করে দেখাতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশকে ২৩৮ রানে আটকে যেতে হয় না। আর স্বাগতিক লঙ্কানরাও হেসে খেলে ২৩৯ রান ছুঁয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে না!
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের এই ম্যাচেও ফিরে এলো প্রথম ম্যাচের চিত্র। প্রথমটা আক্ষেপে ভরা ব্যাটিংয়ে শেষ হলেও সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে দৃশ্য পাল্টালো না। লঙ্কানদের বিষাক্ত বোলিংয়ে নীল হয়ে তামিমদের অসহায় আত্মসমর্পণ! তাতে করে ৪৪ মাস পর ঘরের মাটিতে সিরিজ জেতার আনন্দ করতে পারলো লঙ্কানরা।
দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার শুরুটা আশাব্যঞ্জক করেও যেন আশাহত করলেন। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে ফুলটসে সৌম্যকে (১১) ক্রিজ ছাড়া করলেন নুয়ান প্রদীপ। তামিম থেকে গেলেন ওপাশে এলেন মিঠুন। ধীরলয়ে ব্যাটিংয়ে তামিমের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে লেগে পড়লেন। কিন্তু না, ইসুরু উদানা তা করতে দিলেন না। ৯ম ওভারে এসে অফস্ট্যাম্পের বাইরে শরটিস্ট ডেলিভারিতে প্লেড অন করে প্যাভিলনের পথ দেখালেন তামিম ইকবালকে (১৯)। চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
চাপ সরিয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরাতে এলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকু রহিম। সিঙ্গেলস, ডাবলসে মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে সেই পথ অনেকটাই প্রশস্ত করেছিলেন। আচমকা তা সংকুচিত করে দিলেন আকিলা ধনাঞ্জয়া। ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে মিঠুনকে (১২) মিড উইকেটে তুলে দিলেন মেন্ডিসের তালুতে।
মিঠুনের বিদায়ের পর একে একে ক্রিজে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু কেউই ওপ্রান্তে লড়তে থাকা মুশফিকের যোগ্য সঙ্গী হতে পারেননি। দলের দুর্যোগে হাল ধরতে পারেননি। ধনাঞ্জয়ার দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেছেন ব্যক্তিগত ৬ রানে ক্লিন বোল্ড হয়ে। ব্যক্তিগত ১১ রানে সাব্বির রহমান কাটা পড়েছেন রান আউটে। আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে ১৩ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়েছেন ইসুরু উদানা।
সপ্তম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সাহসী এক একটি শটসে এই জুটিতে দলকে অপ্রত্যাশিত ৮৪ রান এনে দিয়ে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে নিজের ইনিংসের এপিটাফ লিখে দেন মিরাজ। এই রান সংগ্রহে মিরাজ বল খেলেছেন ৪৯টি। যেখানে ৬টি ছিল চারের মার। তবে মুশফিককে দুর্ভাগা বলতেই হবে। কেননা আর মাত্র ২টি রান হলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরির দেখা পেতে পারতেন। কিন্তু না, সেটি হয়নি। শেষ ওভারে তিন বলে নন স্ট্রাইক এন্ডে থাকায় কাঙ্খিত শতক বঞ্চিত হয়ে অপরাজিত থেকেছেন ৯৮ রানে। ৯৮ রানের ইনিংসটিতে মুশি লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হননি মোটেই। বরং ছোট ছোট রানে বুনেছেন এই সংগ্রহের মালা। যেখানে চারের মার ছিল ৬টি ও ছয় ১টি। আর স্ট্রাইক রেট ৮৯.০৯।
এই দিয়ে চতুর্থবারের মতো ওয়ানডেতে ৯০ এর ঘরে থেকে নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টানতে হলো মুশফিককে। আজ অবশ্য তিনি অপরাজিত ছিলেন। গেল বছর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রিজ ছাড়া হয়েছিলেন ৯৯ রানে। ২০১৩ সালে মিরপুরে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ফিরেছেন ৯০ রানে। আর ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্যাভিলনের পথ ধরেছিলেন এই ৯৮ রানেই। তার সঙ্গে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
মূলত মুশফিক ও মিরাজের ব্যাটে ভর করেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেটের বিনিমিয়ে তামিম ইকবালদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৮ রান। জয়ের জন্য ২৩৯ রানের মামুলি লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৪.৪ ওভারে মাত্র ৩ উইকেটের খরচায় জয় তুলে নেয় লঙ্কান শিবির।
** বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ জিতলো লঙ্কানরা