পাইপলাইনে ভালো ক্রিকেটার আনতে সক্রিয় বিসিবি
৪ আগস্ট ২০১৯ ১৬:৩৬
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দিন বদলের সেনাপতি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা আর কদিন পরই বিদায় বলে দেবেন। এরপরই হয়তো ক্রিকেটকে গুডবাই জানাবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালরা আর ক‘বছরই বা জাতীয় দলকে সার্ভিস দেবেন? বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার পেছনের কারিগর এই পঞ্চপাণ্ডব। তাদের হাত ধরেই এসেছে বেশিরভাগ সাফল্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো করতে হলে হাতে যথেষ্ট বিকল্প ক্রিকেটার থাকতে হবে, পাইপলাইন যথেষ্ট শক্ত হতে হবে। তা না হলে ২০২৩ বিশ্বকাপে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।
যে প্রক্রিয়ায় খেলোয়াড় তৈরি হবে সেটি সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উদ্যোগ কী? প্রশ্নটা কিছুদিন পর পরই ওঠে। পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে বিসিবি বসে নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়ায় বিসিবি এবার একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছে পাইপলাইনে। জাতীয় দলের পাইপলাইন বলা হয় হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড বা এইচপি ইউনিটকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম এমন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের বাছাই করে পরিচর্যা করা হয় এইচপি ইউনিটে।
জাতীয় দল মাত্রই খেলে এসেছে বিশ্বকাপ, শ্রীলঙ্কা সিরিজ। জাতীয় দলের বাইরে, ইমরুল কায়েসকে অধিনায়ক করে বিসিবি বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে খেলিয়েছে সফরকারী আফগানিস্তানের বিপক্ষে। মুমিনুল হককে অধিনায়ক করে বিসিবি একাদশ বানিয়ে ভারতের মিনি রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে পাঠিয়েছিল দেশের ক্রিকেট বোর্ডটি। সেখানে সেমি ফাইনালে খেলেছিল বিসিবি একাদশ।
এদিকে, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিসিবির কার্যক্রম নেহাত কম নয়। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের পাশাপাশি সেখানে অংশ নিয়েছে শক্তিশালী ভারত। এরই মধ্যে ফাইনালে উঠে গেছে আকবর আলীর দল। ফাইনালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রতিপক্ষ রাহুল দ্রাবিড়ের শিষ্যরা। এদিকে, মেয়েদের ইমার্জিং দল গঠন করে বিসিবি খেলতে পাঠিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হারলেও সিরিজের পরের দুটি ম্যাচে জয় তুলে নেয় নিগার সুলতানার দলটি। তাতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতেছে টাইগ্রেসরা। এখন খেলছে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বিসিবির অধীনে এক সঙ্গে বাংলাদেশের এতগুলো দল আগে কখনো খেলেনি।
বিসিবির অধীনে বাকি ছিল কেবল এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) দলের সিরিজ। সেটিও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কান ইমার্জিং দলকে নিয়ে আসছে বিসিবি। আগস্টের মাঝামাঝি সিরিজ খেলতে আসবে লঙ্কানরা। এছাড়া, ১৫ জন পেসারকে নিয়ে আরেকটি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বিসিবি। দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই কার্যক্রমগুলো যদি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে পাইপলাইনে দুর্দান্ত কিছু ক্রিকেটার পাওয়া যাবে নিশ্চিত।
এখন সাকিব, তামিম, মাশরাফিদের ইনজুরি কিংবা বিশ্রামে ভূত দেখার মতো চমকে উঠতে হয় নির্বাচকদের। পরিপক্কতা আসার আগেই নির্বাচকরা নামিয়ে দিতে বাধ্য হন নতুনদের। ভবিষ্যতের সাকিব কিংবা ভবিষ্যতের মাশরাফি বলে যাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিজেকে শানিত করার আগেই ছিটকে পড়তে হচ্ছে তাদের। পরিকল্পিত পাইপলাইনের অভাবে দীর্ঘদিন অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটারকেও খেলাতে হয়। এনিয়ে অনেক আক্ষেপ আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর দল সাজাতে নির্বাচকদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করতো, এখনও এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে।
সবশেষ কয়েকটি সিরিজে কতজন খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে আনা হলো আর কতজনকে বাদ দেওয়া হলো সেই হিসেবে নেই। হিসেব বের করতে গেলে হিমশিম খেতে হবে। ক্রিকেটার তৈরির মূল স্তম্ভ বিকেএসপি থেকে এক সময় বেরিয়ে এসেছেন সাকিব, মুশফিক, সৌম্য, নাসিররা। আরও আগে এসেছেন আবদুর রাজ্জাক, নাইমুর রহমান দুর্জয়রা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই বিকেএসপি থেকে বের হচ্ছে না ভালোমানের ক্রিকেটাররা। পাইপলাইনে যদি ভালোমানের ক্রিকেটারই না থাকে তাহলে নির্বাচকদের তো হিমশিম খেতে হবেই।
জাতীয় দলকে আরও শক্তিশালী করতে পাইপলাইনে ক্রিকেটার রাখার বিকল্প নেই। জাতীয় দলের যে কোনো বিভাগের টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই সমৃদ্ধ পাইপলাইন, চাই চৌকস বয়সভিত্তিক দল। বয়সভিত্তিক দল ও পাইপলাইন যেন একই সুতোয় বোনা একটি মালা। কেননা বয়সভিত্তিক দল চৌকস হলেই কেবল একটি শক্তিশালী পাইপলাইনের দেখা মেলে। আর এই পাইপলাইন থেকেই বেরিয়ে আসে আগামীর নেতৃস্থানীয় এক একজন ক্রিকেটার, দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল সব নক্ষত্ররা। সেই চিন্তা থেকেই আরও একবার গা ঝাড়া দিয়েছে বিসিবি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বয়সভিত্তিক দলসমূহ যেমন; অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ দলের ভেতর থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাছাইকৃত প্লেয়ারদের প্রতি বছরই পাইপলাইনে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের। আর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি পার করে তারা নাম লেখায় জাতীয় পর্যায়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত ও ক্রিকেট বোদ্ধাদের জন্য ভালো খবর হলো, টাইগার ক্রিকেটের এই পাইপলাইন আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের জাতীয় পর্যায়ে আসার এই পথটি আরও শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। লাল-সবুজের ক্রিকেটকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছে এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করছে তাতে করে আবারো দেখা মিলবে সেই টাইগারদের, যাদের হুঙ্কারে প্রকম্পিত হবে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটাঙ্গন।