যে চারটি ম্যাচে সবাই বোলার
২০ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৫১
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ইংল্যান্ডের সাথে যুগ্মভাবে বিশ্বের প্রাচীনতম দল হিসেবে পরিচিতি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। ১৮৭৭ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে অংশ নিয়েছিল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। টেস্টের ইতিহাসে সেটিই ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট ম্যাচ। এরপর থেকে আইসিসি স্বীকৃত টেস্ট ম্যাচ হয়েছে ২৩৫৫টি। সবশেষ টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া (অ্যাশেজের দ্বিতীয় ম্যাচ, ১৪ থেকে ১৮ আগস্ট, ২০১৯)।
১৮৭৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে ৪৫ রানে জয় পেয়েছিল অজিরা। ২৩৫৫টি টেস্টের মধ্যে মাত্র চারটি ম্যাচ একেবারেই আলাদা করে রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছে। সেই চার ম্যাচে যে কোনো এক দল নিজেদের ইনিংসে ১১ খেলোয়াড়কে দিয়েই বল করিয়েছে। মানে সেই চার ম্যাচে সবাই বোলার। চারটি ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই এই ঘটনার জন্ম এবং চারটি ম্যাচই ড্র হয়। এর মধ্যে একটি ম্যাচ ছিল অ্যাশেজের।
দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ম্যাচে এক ইনিংসে ১১ খেলোয়াড় হাত ঘুরিয়েছেন:
১৮৮৪ সালের ১১ আগস্ট শুরু: অ্যাশেজ, তৃতীয় ম্যাচ। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৩১১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে তোলে ৫৫১ রান। ইংল্যান্ডের ১১ খেলোয়াড়ই বল করেছেন। উইকেটের পেছনে দায়িত্বে থাকা এ. লাইটেলটনও গ্লাভস খুলে করেছিলেন ১২ ওভার। মজার ব্যাপার হলো এই উইকেটরক্ষকই সেই ইনিংসে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট পেয়েছিলেন।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশরা প্রথম ইনিংসে ১৯৮ ওভার ব্যাট করে তোলে ৩৪৬ রান। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশরা ২৬ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে তোলে ৮৫ রান। ম্যাচটি ড্র বলে মেনে নেয় দুই দলের অধিনায়ক।
১৯৮০ সালের ৬ মার্চ শুরু: পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। ৯৬ বছর পর আবারো টেস্ট ক্রিকেটে দেখা যায় এক ইনিংসে ভিন্ন ১১ ক্রিকেটারের বল করার ঘটনা। সিরিজের দ্বিতীয় এই ম্যাচে দুই দলই একটি করে ইনিংস খেলার সুযোগ পায়। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২১১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ৬১৭ রান। স্বাগতিক পাকিস্তান সাত বোলার ব্যবহার করে।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ব্যাট করে ১২৬ ওভার, দুই উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৮২ রান। ওপেনার হারুন রশিদ ২১ আর তিন নম্বরে নামা জহির আব্বাস ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। আরেক ওপেনার তাসলিম আরিফ ৩৭৯ বলে ২০টি বাউন্ডারিতে ২১০ রান করে অপরাজিত থাকেন। চার নম্বরে নামা দলপতি জাভেদ মিয়াদাদ ১৮৭ বলে ১০টি চার আর একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ১০৬ রান। এই দুজন ২২৩ রান করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। ম্যাচটি ড্র বলে ঘোষিত হয়। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার ১১ খেলোয়াড় বল করেন পাকিস্তানিদের বিপক্ষে। উইকেটরক্ষক রড মার্শ ১০ ওভার বল করে ৫১ রান খরচায় অবশ্য কোনো উইকেট পাননি।
২০০২ সালের ১০ মে শুরু: অ্যান্টিগা টেস্টে মুখোমুখি স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর সফরকারী ভারত। সিরিজের চতুর্থ এই ম্যাচে দুই দলই একটি করে ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পায়। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯৬ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ভারত ৫১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। সেই ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড় ৯১, ওয়াশিম জাফর ৮৬, দলপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ৪৫, ভিভিএস লক্ষন ১৩০ আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অজয় রত্রা ১১৫ রান করেন। শচীন টেন্ডুলকার নিজের প্রথম বলেই আউট হন। আর সেঞ্চুরিয়ান লক্ষন হিট উইকেটে নিজের ইনিংসের ইতি টানেন। আরেক সেঞ্চুরিয়ান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অজয় রত্রা অপরাজিত থাকেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক ক্যারিবীয়ানরা ২৪৮ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৬২৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি সফরকারী ভারতকে। তার আগে ১১ ভারতীয় বল হাতে তুলে নেন। উইন্ডিজ ওপেনার ক্রিস গেইল ৩২, ওয়েভেল হাইন্ডস ৬৫ রান করেন। সারওয়ান ৫১, লারা ৪, ডিলন ৪৩ রান করেন। দলপতি কার্ল হুপার অপরাজিত থাকেন ১৩৬ রান করে। এছাড়া, চন্দরপল ১৩৬, জ্যাকবস ১১৮ রান করেন। ভারতের উইকেটরক্ষক অজয় রত্রা নিজের গ্লাভস তুলে দেন দ্রাবিড়ের হাতে। তবে, মাত্র ১ ওভার করেই রেকর্ড বুকে নাম লেখানোর সুযোগ করে দেন ভারতকে।
২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল শুরু: অ্যান্টিগা টেস্ট, স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে চার সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়ারা ১৬৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৮৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ওপেনার এবিডি ভিলিয়ার্স ১১৪, আরেক ওপেনার এবং দলপতি গ্রায়েম স্মিথ ১২৬ রান করেন। জ্যাক ক্যালিস ১৪৭ আর অ্যাশওয়েল প্রিন্স ১৩১ রান করেন। এছাড়া, ডিপেনার ৫, হার্সেল গিবস ২৩, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচার ১১* এবং শন পোলক ১৩* রান করেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানের পাহাড় গড়ে। ২৩৫.২ ওভার ব্যাট করে ক্যারিবীয়ানরা অলআউট হওয়ার আগে তোলে ৭৪৭ রান। পরে আর ব্যাট করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, ম্যাচটি ড্র বলে ঘোষিত হয়। ক্যারিবীয়ান ওপেনার ক্রিস গেইল ৪৮৩ বলে ৩৭টি চার আর তিনটি ছক্কায় করেন ৩১৭ রান। সারওয়ান ১২৭, দলপতির দায়িত্বে থাকা চন্দরপল ১২৭ আর ডোয়াইন ব্রাভো ১০৭ রান করেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ব্রাভো। উইকেটটি নেন প্রোটিয়াদের উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করা মার্ক বাউচার। গ্লাভস খুলে ১.২ ওভারে ৬ রান দিয়ে ব্রাভোর উইকেটটি নিয়েছিলেন মার্ক বাউচার।