চট্টগ্রাম থেকে: যুদ্ধবিধ্বস্ত, তালেবান অধ্যুষিত আফগানিস্তান। বিশ্ব রাজনীতিতে এ দুটি বিশেষণেই আজ বিশেষায়িত দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটি। কারণটিও যে সঙ্গত। কথায় কথায় এখানে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। তালেবানদের অতর্কিত হামলায় রক্তাক্ত হয় প্রান্তর। সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের কালিমা লেপ্টে থাকায় নিজ দেশে তাই ক্রিকেট আয়োজন সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। যে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্ট আয়োজনে হতে হয় অন্যের দ্বারস্থ।
ঠিক এমন একটি দেশেই জন্ম নিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে নম্বর ওয়ান লেগ স্পিনার রশিদ খান। শৈল্পিক বোলিংয়ে হয়ে উঠেছেন দুনিয়ার তাবৎ তরুণদের উদাহরণ। হয়ে উঠেছেন আফগান ক্রিকেটের এক্স ফ্যাক্টর। ক্রিকেট দুনিয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিলামে তার নাম উচ্চারিত হয় সবার আগে। তাকে নিয়েই যেন সবার টানাটানি!
বিষয়টি রশিদ খানের কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই। এর অনুভূতিটাও তার কাছে অনন্য। সারাবাংলার.নেটের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই অনুভূতিই ব্যক্ত করেছেন এই আফগান পোস্টার বয়। কথা বলেছেন নিজের দেশ এবং বাংলাদেশের সমসাময়ীক ক্রিকেটসহ খুঁটিনাটি আরও অনেক বিষয় নিয়ে।
সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো:
সারাবাংলা: ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আফগানিস্তানকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রশিদ খান: গত তিন চার বছর ধরে আফগাস্তানিস্তানে ক্রিকেট লক্ষ্যনীয় ভাবে বেড়েছে। আমার দেখে ভালো লাগে যে আমাদের তরুণেরা ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তারা খেলছে। মাঠসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি আমরা আগের চাইতে বেশি পাচ্ছি। এটা সত্যিই অসাধারণ। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেট বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে।
সারাবাংলা: আপনি কী মনে করেন ধৈর্য্যই টেস্ট ক্রিকেটের প্রধান?
রশিদ খান: অবশ্যই। আর এজন্যই এটাকে টেস্ট ক্রিকেট বলা হয়। যেখানে আপনি ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে পরীক্ষীত হবেন। এখানে আপনার একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে। একটি কন্ডিশনে আপনি কতটা শান্ত এবং কতটা ধৈর্য্যশীল এটাই টেস্টের মূল শিক্ষা।
সারাবাংলা: আফগানিস্তান ক্রিকেটের পোস্টার বয় আপনি। এই অনুভূতিটা কেমন?
রশিদ খান: ভালো। আফগানিস্তানের মতো একটি দেশ থেকে উঠে এসে গত তিন চার বছর এভাবে টানা ভালো খেলা এবং ক্রিকেট দুনিয়ার তরুণ ক্রিকেটারদের প্রেরণা হতে পারার অনুভূতি সবসময়ই অসাধারণ। এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই। দারুণ অনুভূতি,বলে বোঝানো যাবে না। চেষ্টা করছি মোমেন্টামটি ধরে রাখতে।
সারাবাংলা: আপনি আপনার সতীর্থদের কী করে চাঙ্গা রাখেন?
রশিদ খান: আমি ওদের নিজেদের মতো ছেড়ে দেই। আটকে রাখি না। বলি যাও খেলা উপভোগ করো। উপদেশ দেই, তোমার শতভাগ উজাড় করে দাও। যদি সেটা করো তবেই তুমি তোমার খেলা উপভোগ করবে এবং সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারবে।
সারাবাংলা: লেগ স্পিনে আরও ভালো করতে কোন কোন জায়গায় আপনি কাজ করছেন?
রশিদ খান: একজন লেগ স্পিনার হিসেবে আমি মনে করি আপনাকে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই কাজ করতে হবে। সেটা টেস্টে যেমন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও তেমন। একজন লেগ স্পিনারের জন্য ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ভালো কি খারাপ বোলার সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। লাইন ও লেংথ বজায় রেখে আপনি যত ধারাবাহিক বল করতে পারবেন ততই আপনি একজন ভালো লেগস্পিনার হয়ে উঠবেন। ধারাবাহিক হতে আপনাকে নিজের কাজের প্রতি ফোকাসড থাকতে হবে।
সারাবাংলা: ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রশিদ খান: নিশ্চয়ই ভালো। দিন দিন ওরা যেভবে উন্নতি করছে… বিশেষ করে আমি বিশ্বকাপের কথা বলব। কী অসাধারণ খেলাটাই না খেলল। ব্যাটিং, বোলিংয়ে ওরা ছিল দুর্দান্ত। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান। পুরো বিশ্বকাপে দলের মূল দায়িত্বটা ওই পালন করেছে। তবে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকও দলের জন্য বেশ ভালো অবদান রেখেছে। গত চার বছর ওরা যেভাবে খেলেছে এটা বিস্ময় জাগানিয়া। খুবই ভালো লাগছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বিপিএলের কারণে। বিপিএলই বাংলাদেশকে এমন খেলতে সাহায্য করছে। আপনি দেখেবেন এদেশে কিছু তরুণ ক্রিকেটার বেরিয়ে এসেছে যার পেছনে বিপিএলের ভূমিকা অনেক। বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটার ও কোচদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তারা পায়। ফলে তাদের অভিজ্ঞা নিজেদের খেলায় কাজে লাগায়। আমি মনে তাদের উন্নতির প্রধান কারণ হলো; বিপিএল। কারণ এখান থেকেই ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক মানের খেলার একটি বড় সুযোগ পেয়ে থাকে।
সারাবাংলা: আপনার বোলিং টেস্ট ক্রিকেটের জন্য কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে? যেহেতু আপনারা মাত্রই টেস্ট শুরু করেছেন। খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই।
রশিদ খান: আমি মনে করি বোলিং উপভোগ করাটাই আমার প্রধান কাজ। এটা মূখ্য নয় যে আমি কত ওভার বল করছি। আপনি যত ক্রিকেটটা উপভোগ করবেন ততই ভালো ফলাফল আসতে থাকবে।
সারাবাংলা: বাংলাদেশ এখনো কেন একজন লেগ স্পিনার তৈরি করতে পারলো না? সমস্যাটা কোথায়?
রশিদ খান: আপনাদের লেগ স্পিনার নেই তো কি হয়েছে? সাকিব, রাজ্জাকের (আব্দুর রাজ্জাক)মতো বাঁহাতি সুপারস্টারতো আছে। ওরা কিন্তু এদেশের তরুণদের জন্য উদাহরণ। ওদের অনুসরণ করলেই হয়। আপনি যদি উদাহরণ হিসেবে ভারতকে বেছে নেন; ব্যাটিংয়ে ওরা শচীনকে উদাহরণ হিসেবে টানে। তেমনি পাকিস্তানের উদাহরণ ওয়াসিম আকরাম। ওদেশের সবাই তাকে অনুসরণ করে। এদেশে তেমনই এক উদাহরণ সাকিব। তাই সবাই বাঁহাতি স্পিনার হতে চায়।
সারাবাংলা: গত চার বছর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলছে। এমতাবস্থায় ঘরের মাঠে তাদের টেস্টে হারানো কতটা কঠিন হবে?
রশিদ খান: টেস্ট ক্রিকেট সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। এটা বিষয় না আপনি কোথায় খেলছেন এবং কন্ডিশনই বা কেমন। পাঁচদিনের খেলায় যে ভালো পারফর্ম করবে ফলাফল তাদের দিকেই যাবে। তবে এটাও ঠিক বাংলাদেশ নিজেদের কন্ডিশনে খুবই ভালো খেলছে। কিন্তু আপনি জানেন আমরাও ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। সেরা ক্রিকেট খেলতে আমরাও চেষ্টা করব।
সারাবাংলা: দুই দলের মধ্যে স্পিন আক্রমণে আপনি কাকে এগিয়ে রাখবেন?
রশিদ খান: দুটি ভিন্ন দল, ভিন্ন দক্ষতা, ভিন্ন বোলিং কৌশল। ওদের শক্তি বাঁহাতি স্পিন, আমাদের শক্তি লেগ স্পিনে। এখানে তুলনা করা ঠিক হবে না। ওরা ওদের স্ব স্ব বিভাগে দক্ষ, তেমনি আমরাও। কেউ ভালো কেউ খারাপ এটা বলা যাবে না।
ছবি: শ্যামল নন্দী