অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ৩০ বছর অপেক্ষার অবসান
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫২
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের প্রথম আসর বসে ১৯৮৯ সালে ঠিক ৩০ বছর আগে। জাতীয় নারী দল একবার এশিয়া জয়ের মুকুট এনে দিয়েছে টাইগার সমর্থকদের। আর পুরুষ দল খেলেছে ফাইনালে, কিন্তু বিজয়ের মুকুটটা পরা হয়নি। তবে ৩০ বছরের ইতিহাসে টাইগার যুবারা এর আগে কখনোই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। অপেক্ষার অবসান হয়েছে, আকবর আলীর নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো যুবাদের এশিয়া কাপ ফাইনালে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাড়ে দশটায় মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে টাইগারদের রেকর্ড বইয়ে যুক্ত হবে নতুন অধ্যায়। আর ঐতিহাসিক এই ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে গাজী টেলিভিশন (জিটিভি) এবং র্যাবিটহোলের ইউটিউব চ্যানেল র্যাবিটহোল স্পোর্টসে।
রেকর্ড লিখতে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের গ্রুপ ‘বি’তে বেশ কাঠখড় পুড়িয়েছে খুদে টাইগাররা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের সবক’টিতেই জিতেছে যুবারা। যদিও বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল সেমিফাইনালে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচটি। তবে গ্রুপ পর্বে শীর্ষ স্থানে থাকাটাই সৌভাগ্য বয়ে এনেছে টাইগারদের জন্য। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমি ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। আর তখন থেকেই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ পারফর্ম করা টাইগারদের চোখ ৩০ বছরের রেকর্ডের পাতায়। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে আফগানদের বিপক্ষের ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ফাইনালে চলে যায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে টাইগারদের মতোই গ্রুপ ‘এ’র চ্যাম্পিয়ন ভারত, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেমি ফাইনালের ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। আর এতেই নিশ্চিত ভারতের ফাইনাল খেলা। টাইগার যুবাদের এই দলটি বেশ লম্বা সময় ধরেই বিসিবির সুনজরে। কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডে খেলে এসেছে ভারতসহ তিন জাতির সিরিজ। সেই সিরিজেই স্বাগতিক ইংলিশদের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল টাইগার যুবারা। আর ভারতকেও হারিয়েছিল এক ম্যাচে। যদিও শেষ পর্যন্ত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওই ভারতের কাছেই হেরে শিরোপা হাত ছাড়া হয়েছিল।
এবার এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটে বলে আলো ছড়িয়েছেন টাইগার যুবারা। মাহমুদুল হাসান জয় লঙ্কানদের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছেন আর সেই সঙ্গে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে টাইগারদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। তিন ম্যাচ মিলিয়ে জয়ের নামের পাশে আছে ১৯৩ রান। জয়ের পরেই আছেন তিন ম্যাচে দুই অর্ধশতক হাঁকানো তৌহিদ হৃদয়। তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫০ এবং নেপালের বিপক্ষে করেছিলেন ৬০ রান। টুর্নামেন্ট জুড়ে তার মোট সংগ্রহ ১২৮ রান।
বাঁ-হাতি অর্থডক্স রাকিবুল ইসলাম তিন ম্যাচে মাত্র ৪.১৬ ইকোনমি রেটে সংগ্রহ করেছেন ৭টি উইকেট। তারপরেই উইকেট শিকারির দিক থেকে অবস্থান ডান-হাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিবের। দুই ম্যাচ খেলা সাকিব নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র জয়টি এসেছিল বৃষ্টি আইনে। পারভেজ হাসান ইমনের ৫১ আর অধিনায়ক আকবর আলীর অপরাজিত ৪৯ রানেই টাইগাররা ২ উইকেটের জয় পেয়েছিল ভারতের বিপক্ষের।
আর এশিয়া কাপের ফাইনালে তাই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকছে এই ম্যাচটিই। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল এর আগে এনে দিয়েছিল প্রথম এশিয়া কাপ। পুরুষ দল কাছে গিয়েও পারেনি। আর এবার ৩০ বছরের ইতিহাসের হাতছানি দিচ্ছে টাইগার যুবাদের। ভারতকে হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেই শিরোপার মুকুট পরতে পারবে তারা।
টাইগারদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলটিকে পরিচর্যার মধ্যেই রেখেছে বিসিবি। তাদের নিয়ে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা সাজিয়েছে অভিভাবক এই সংস্থাটি। দেশের বিসিবির পরিকল্পনার ফলাফলও হাতেনাতে মিলেছে টাইগার যুবাদের কাছ থেকে। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলা, স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ জয়, ভারতকে হারানো আবার অপরাজিত থেকে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই সফলতার পেছনে বিসিবির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাটাই মূখ্য ভূমিকা রেখেছে।