এক পা হারানো ফুটবলারদের ম্যাজিক দেখলো বাংলাদেশ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৪০
ঢাকা: বাস্তব জীবনের একেক যোদ্ধা। সড়ক দুর্ঘটনা বা জন্মগতভাবে হারিয়েছেন পা কিংবা হাত। থেমে থাকেনি টিকে থাকার যুদ্ধ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মনের শক্তি দিয়ে জয় করেছেন। খেলার টানেই ফিরেছেন মাঠে। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসা নিংরে দিয়েছেন সবুজ মাঠে। বলটাকে যেন নিজের ভাষা শেখাচ্ছেন এই ফুটবল যোদ্ধারা।
শারীরিক প্রতিবন্ধী এই ফুটবলারদের নিয়ে আজ প্রথমবার আয়োজিত হলো ফুটবল আসর।
দেশে প্রথমবার হলেও বিশ্বে এই খেলাটাকে বেশ পরিচিত। এমপিউট ফুটবল হিসেবেও বলা হয় একে। প্রায় তিন যুগ আগে বিশ্বে এই খেলা শুরু হলেও প্রথমবার বাংলাদেশে এমন কোনও ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো।
মূলত ইমেগো স্পোর্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রকল্প ‘খেলবেই বাংলাদেশ’ ও বাংলাদেশ এমপিউটি ফুটবলের যৌথ উদ্যোগে এমন ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে।
ট্রায়ালের মাধ্যমে দেশের ৮ জেলা থেকে প্রায় ৫০ জন ফুটবলার থেকে বাছাই করা হয়। চূড়ান্ত বাছাই থেকে ২০ ফুটবলারকে দুই দলে বিভক্ত করে এই ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে। লাল ও সবুজ দলে বিভক্ত করে ম্যাচটি মাঠে গড়ায়। বায়েজিদ বোস্তামির একমাত্র গোলে জয় পায় লাল দল।
এই খেলার উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মহসিন। যিনি হুইল চেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। মহসিন সারাবাংলাকে জানান, ‘ক্রিকেটে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আসর হচ্ছে। সাফল্যও পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফুটবলে এমন কিছু করা যায় কি না সেই চিন্তা থেকেই এই উদ্যোগ। ফেডারেশন সহযোগিতা করলে আন্তর্জাতিক আসরে খেলার উপযোগী করে তোলা যাবে ফুটবলারদের।’
খেলাটির নিয়ম আর ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেছেন কোচ তাজু, ‘আউটফিল্ডের খেলোয়াড়দের দুটি হাত হবে তবে কেবল একটি পা থাকতে পারে, যেখানে গোলরক্ষক দুই পা থাকতে পারে তবে কেবল একটি হাত থাকতে পারে। দুই অর্ধ মিলিয়ে পুরো ম্যাচ ৫০ মিনিটের হবে। কোনো অফসাইড নেই এখানে। প্রতি দলে মাঠে নামতে পারবে সাতজন (গোলরক্ষকসহ)। সাবস্টিটিউট রাখার ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে দারুণ ফুটবলার আছে এমন। তাদেরকে নিয়ে ভালো কাজ করা যাবে।’
হাত-পা হারানো এই ফুটবলাররা চান একটা ফুটবল দল হোক। যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জানালেন, ‘তারাও সাধারণ মানুষের মতো। ফুটবলকে ভালোবেসেই তারা এসেছে। তাদের নিয়ে আমরা অবশ্যই ভবিষ্যত চিন্তা করবো। আশা করছি শিগগিরই একটা দল গঠন করে আন্তর্জাতিক আসরে নেয়া হবে।’
ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শিদি। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স গ্রুপের চিফ এইচআর ও কর্পোরেট কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফাকচারার্স এসোসিয়েশন ও মুসলিম সুইটসের পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান রকি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।