কতটুকু আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্ট?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৪৫
ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ খেলেছে দুটি ম্যাচ। যার একটিতে জিতেছে আর একটিতে হেরেছে। তারমধ্যেই স্কোয়াড অদল-বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচের জন্য বিসিবি যে দল ঘোষণা করেছে সেখানেও বহাল তবিয়তে আছেন সাব্বির রহমান। ঘরোয়া লিগ কিংবা বিপিএলে দুর্দান্ত পাওয়ার হিটিংয়ের পসরা সাজিয়ে যিনি টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্ট খ্যাতি পেয়েছেন!
১১ টেস্ট, ৬৬ ওয়ানডে আর ৪৩ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে দলে কখনো অটোমেটিক চয়েজ হতে পারেননি। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। ওয়ানডে ফরম্যাট ছাড়া বাকি দুটি ফরম্যাটে নেই কোনো সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে আছে শুধু একটিই সেঞ্চুরি, ছয়টি ফিফটি। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে আছে চারটি করে ফিফটি।
টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ ম্যাচে ২৫.৫৪ গড়ে করেছেন ৯৪৫ রান। ত্রিদেশীয় সিরিজের সবশেষ দুই ম্যাচে করেছেন ১৫ আর ২৭ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫ বলে ১৫ রান করার পথে ছিল মাত্র একটি চারের মার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৭ বলে একটি চারে করেন ২৪ রান। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে যা একেবারেই বেমানান, দৃষ্টিকটু।
অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে সাব্বির নেমেছিলেন ছয় নম্বরে। পরের ম্যাচে নামা হয়নি। এরপর তাকে তিন নম্বরে পাঠালেও দুই ম্যাচ পরেই আবারও নামিয়ে আনা হয় ছয় নম্বরে। ৫ নম্বর পজিশনেও নেমেছিলেন সাব্বির। তবে, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিন নম্বরে। এমনকি সাব্বিরের খেলা ম্যাচের মধ্যে টানা ২১ ম্যাচে তিনি তিন নম্বরেই ব্যাট করেছেন, যেখানে দলের সেরা পারফর্মারকেই দেখা যায়। নিজেও একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটই নাকি তার আসল ফরম্যাট। দলে সুযোগও পাচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু নির্বাচকদের কতটুকু আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন সাব্বির?
গায়ের সাথে তকমা লেগেছে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টের, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ সাব্বির। দলে যাকে নেওয়া হয় পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য, দলকে দ্রুত রান এনে দেওয়ার জন্য, সেই সাব্বিরই ব্যর্থতার বৃত্তে আঁটকে আছেন। প্রায় ৫ বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেও রাখতে পারছেন না প্রতিভার ছাপ।
সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৬৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫ ওভারে ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। ওই সময় ব্যাট হাতে নামেন ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট’ খ্যাত সাব্বির। ছয় নম্বরে নেমে সুযোগ ছিল নিজেকে মেলে ধরার, সুযোগ ছিল নিজেকে প্রমাণের। তার আগে দলীয় ৪০ রানে টপঅর্ডারের চার উইকেট হারিয়েছিল আফগানরা। ছয় নম্বরে নেমে মোহাম্মদ নবী ৫৪ বলে করেন অপরাজিত ৮৪ রান। ম্যাচ সেরা পারফর্ম করার পথে নবীর ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার আর সাতটি ছক্কার মার।
ঠিক আফগানদের মতো পরিস্থিতিতে পড়লে নবীর জায়গায় ব্যাট হাতে আসেন সাব্বির। স্বভাবতই তার দিকে চেয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৯ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে ৪৪ রান করে বিদায় নেন। হার্ডহিটারের তকমা থাকায় সাব্বিরের উপর আরও প্রত্যাশা বাড়ে। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি তিনি। ২৭ বলে ১ চারে ২৪ রান করেন সাব্বির। মাহমুদউল্লাহ ফেরার পরের ওভারেই নিজের ইনিংসের যবনিকা টানেন সাব্বির। কার্যত তাতেই বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়। অথচ মাহমুদউল্লাহ যখন আউট হন বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪০ বলে ৭৫ রান। সাব্বির কিন্তু কাজের কাজটি করতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাব্বিরের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। অধিনায়ক সাকিবকে গণমাধ্যম কর্মীরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট হয়ে দলে থাকলেও এমন পরিস্থিতির বিবেচনায় সাব্বির তার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সাকিব মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ হেসেছিলেন। পরে জানান, দল নির্বাচনের সময় বিশ্বাস রেখেই সব খেলোয়াড়কে নেওয়া হয়। সবার আশা থাকে, সে দলে অবদান রাখবে, ভালো খেলবে, দলকে সাহায্য করবে। অনেক সময় এটা হয় অনেক সময় হয় না। খারাপ করলে সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আসলে টুর্নামেন্ট চলাকালীন এসব নিয়ে কথা না বলা ভালো, টুর্নামেন্টটা যদি আমরা ভালোভাবেও শেষ করি আমাদের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হলো সবাই সবাইকে যথাযথ সমর্থন ও সাহস দেয়া।