Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোন খেলা যে খেলব কখন?


১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৩৪

মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে রোশেন সিলভার কথাটাই তো অনেক কিছু বলে দিচ্ছে, ‘বাংলাদেশে এই ধরনের উইকেট আমরা আশা করিনি। উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল এলে আমরা এমন উইকেট বানাই।’

সম্পূরক প্রশ্নও উঠে গেল, তাহলে কি নিজেদের পাতা ফাঁদেই পা দিল না বাংলাদেশ? কিন্তু এ ধরনের উইকেটে যেভাবে সবাই ব্যাটিং করেছে, সেটা কি আসলেই সুবিবেচক ছিল? শুরু থেকেই যেভাবে শট খেলার হারাকিরিতে নেমেছিলেন সবাই, সেটা কি আগে থেকে পূর্ব নির্ধারিত ছিল?

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পরাজিত সেনাপতির মতো প্রায় সব অভিযোগই মাথা পেতে নিলেন। এমন হারের পর অজুহাত হয় না কোনো, মাহমুদউল্লাহ শুধু ব্যাটিং-ব্যর্থতার ওপরেই দায় চাপালেন। কিন্তু আসলেই কি এই উইকেটে এমন খেলা দরকার ছিল?

প্রথম ইনিংসে বলতে গেলে ভালো বলে কম আউটই হয়েছে বাংলাদেশ, টপ অর্ডারের কম বেশি সবাই উইকেট দিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা একটু কমল বটে, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই যেভাবে তাড়াহুড়ো করছিলেন, তাতে তাদের একাগ্রতা আর মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল। মুমিনুল কয়েকবার জীবন পেয়েও শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। মুশফিক উইকেটে এসেই রিভার্স সুইপ খেলতে শুরু করলেন শুরু থেকে। যেন শেষ ট্রেনে ফিরতে হবে সবাইকে, আরেকটু হলেই স্টেশন ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সেই ট্রেনেই তো কাটা পড়তে হলো!

মাহমুদউল্লাহর কাছে অবশ্য তার ব্যাখ্যা আছে, ‘এই উইকেটে যদি আপনি ইচ্ছাটা না দেখান, ইতিবাচক না থাকেন, আপনি যদি বোলারকে সুযোগ দেন থিতু হওয়ার, তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। আপনাকে সেই তাড়না দেখাতে হবে, আপনাকে বল নির্বাচন করতে হবে সঠিকভাবে। যদি বারবার ডিফেন্ড করতে থাকি, বোলারদের সুযোগ দিতে থাকি…হবে না। এখানে একটা বল স্পিন হচ্ছে, একটা সোজা যাচ্ছে, একটা লোয়ার বাউন্স হচ্ছে, একটা নিচেও নামছে। সেদিক থেকে মনে হয় আপনি সুযোগ দিচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘আমার যা জ্ঞান, আমার যা অভিজ্ঞতা আমার মনে হয় না যে এই ধরণের উইকেটে আপনি ডিফেন্স করতেই থাকবেন। কারণ বোলার ছয়টা বল করবে, সাত নম্বর বলে আপনাকে সুন্দর মতো সিলিতে অথবা স্লিপে নিয়ে যাবে। আর আপনাকে স্ট্রোক খেলতেই হবে।’ যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ।

সেই যুক্তি না হয় মানা গেল। ইতিবাচক কেউ থাকতেই পারে, সেজন্যই নিয়ে আসা হয়েছে সাব্বির রহমানকে। কিন্তু সাব্বির দুই ইনিংস মিলে খেলতে পেরেছে মাত্র পাঁচ বল। অথচ চট্টগ্রাম টেস্টে মোসাদ্দেক হোসেনের ৫৩ বলে ৮ রানের ইনিংসের পর তার বাদ পড়াও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তার চেয়েও বড় কথা, শ্রীলঙ্কাই তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই উইকেটে কীভাবে খেলতে হয়। ম্যাচসেরা রোশেন সিলভা দুই ইনিংসেই ফিফটি করেছেন, প্রথম ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৪৫.১৬, আর দ্বিতীয় ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৪৮.২৭। এই দুই ইনিংস ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা ঠিক করে দিয়েছে, কিন্তু সেখানে কি ইতিবাচকতার অভাব ছিল?

মাহমুদউল্লাহর প্রেস কনফারেন্স ভিডিও

 

মাহমুদউল্লাহ অবশ্য সেটার কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারলেন না, ‘রোশেন অবশ্যই খুব ভালো ব্যাটিং করেছে, ওর বল সিলেকশনও খুব ভালো ছিল। তাইজুল যেমন ওকে কিছু বল করেছে, অফ স্টাম্পের একটু বাইরে কিন্তু স্পিন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সেটাও ও খুব ভালো খেলেছে। আমার মনে হয় একেকজনের ব্যাটিং ক্রাইটেরিয়া একেকরকম। আমার মনে হয় আমি যখন ইতিবাচক থাকি, আগ্রাসী থাকি, তখন আমার ব্যাটিংটা আরও ভালো হয়। ’

স্পিন উইকেট করার সিদ্ধান্তও কি বুমেরাং হয়ে আসেনি তাহলে? মাহমুদউল্লাহর আত্মপক্ষ সমর্থন, ‘আপনি যদি চিটাগংয়ের কথা ধরেন, ওখানে উইকেট ব্যাটিং বান্ধব ছিল, আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিং করেছে। এজন্যই এখানে আমরা চাচ্ছিলাম, উইকেটটা স্পিনসহায়ক হোক। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর আস্থা ছিল, স্পিনারদের ওপরেও। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করতে পারেনি, তাই এখন এই ধরনের কথা হচ্ছে। তো আমার মনে হয়, এই ধরণের বাজিগুলো ধরতেই হবে। না হলে এভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলে কোনো লাভ নেই। আমি ডেড উইকেটে খেলব বা জয়ের জন্য খেলব, তাহলে মনে হয় আমাদের ক্রিকেট এগোবে না। সাফল্য আসবে, ব্যর্থতা আসবে। সাফল্য আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে, আমাদের আরও উন্নতি হবে।’

বিজ্ঞাপন

তবে এভাবে ব্যর্থ হলে প্রশ্ন উঠবেই, তা মাহমুদউল্লাহ যতই তার সামনে ঢাল দাঁড় করিয়ে দেন না কেন!

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর