অনেক ঝামেলা নিয়েও জাতীয় দলে ছিলেন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৫৮
গত মার্চে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েন। বর্তমানে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসের হয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন হিগুয়েন। এর মধ্যেই জাতীয় দল, অধিনায়ক, কোপা আমেরিকা, নিজের অবসর চিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন ‘এল পিপিতা’ হিসেবে পরিচিত হিগুয়েন।
অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সময় খানিকটা অভিমানের সুর শোনা যায় হিগুয়েনের কণ্ঠে। তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকের খুশির কারণ হবে এটা। জাতীয় দলের হয়ে আমার চক্র শেষ হয়েছে। দলের অন্যদেরও (সিনিয়র) একই অবস্থা।’
সম্প্রতি আর্জেন্টাইন গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে খেলাকালীন আমি অনেক কিছুই শিখেছি, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর্জেন্টিনা আমার দেশ, কিন্তু কিছু কিছু সময় আমাকে বাইরের কেউ মনে করা হয়েছিল। অনেক ঝামেলা নিয়েই আমি জাতীয় দলের জার্সিতে খেলে গেছি। পরে আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। কিন্তু অন্যদিকে বলবো আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি। বেশির ভাগ আর্জেন্টাইন আমাকে পছন্দ করতো, অনেকেই পছন্দ করতেন না। তাদের জন্য আমার অবসরের সিদ্ধান্তটা আসেনি। যখন খেলেছি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলেছি। অবসরের সিদ্ধান্তে কখনো অনুশোচনায় ভুগিনি।’
অবসরের ঘোষণার ঠিক আগে জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনির কাছ থেকে একটি ইমেইল পেয়েছিলেন হিগুয়েন। ওই ইমেইলে ইউরোপ ও আফ্রিকায় দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ডেকেছিলেন কোচ। কিন্তু হিগুয়েন তাতে সাড়া দেননি। তখন দলে ঠাঁই পাওয়া বা না পাওয়া নয়, অবসরের কারণ হিসেবে পরিবারকেই তুলে ধরেন হিগুয়েন।
ক্লাব ফুটবলে বিভিন্ন দলকে একাই টেনে নিয়ে যাওয়া হিগুয়েন জাতীয় দলের জার্সিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সে কারণে সমর্থকদের রোষের মুখেও তাকে কম পড়তে হয়নি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালসহ আগে-পরের দুইটি কোপা আমেরিকার ফাইনাল। তিনটি ম্যাচের সবগুলোতেই হারতে হয়েছিল হিগুয়েনের সহজ সুযোগ নষ্টের কারণে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই হিগুয়েন একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। যে কারণে পরবর্তীতে দলে ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে পড়তে থাকেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা আশানুরূপ খেলতে না পেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ে। এই টুর্নামেন্টে মাত্র একটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন হিগুয়েন।
হিগুয়ের আরও বলেন, ‘কোপা আমেরিকার সবশেষ আসরটি দেখেছি। অধিনায়ক মেসিকে দেখেছি, সে দুর্দান্তভাবে দলকে টেনে নিয়েছে। সেমি ফাইনালে বিদায়ের পর মেসি গণমাধ্যমে যা বলেছে সেটি তার নিজস্ব মন্তব্য। একটা দেশকে সে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু আমি জানি মেসি অযথা কথা বলার লোক না, যা বলে মন থেকে বলে। সে যা অনুভব করে তাই বলে। যে কেউ তাকে ভালো কিংবা খারাপ বলতে পারেন, আমি বলবো মেসি দুর্দান্ত এক খেলোয়াড়।’
জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হলেও দলের সেরা স্কোরারদের মধ্যে তাকে একজন হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই কারও। ২০০৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৭৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাতে গোল পেয়েছেন ৩১টি। তবে ক্লাব ক্যারিয়ার আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ এল পিপিতা’র। আর্জেন্টাইন জায়ান্ট রিভারপ্লেটে খেলে নজর কাড়েন ইউরোপীয় দলগুলোর। ২০০৭ সালে তাকে স্পেনে উড়িয়ে নিয়ে আসে রিয়াল মাদ্রিদ। এই ক্লাবেই স্বর্ণযুগ পার করেছেন হিগুয়েন। ১৯০ ম্যাচে করেছেন ১০৭ গোল।
২০১৩ সালে মাদ্রিদ ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন। সেখানে ১০৪ ম্যাচ খেলে করেন ৭১ গোল। সিরি আ’র আরেক জায়ান্ট জুভেন্টাসে পাড়ি জমান এরপর। জুভিদের জার্সিতেও নিজেকে মেলে ধরতে অসুবিধা হয়নি তার, প্রথম দফায় ৭৩ ম্যাচে ৪০ গোল তারই প্রমাণ। ২০১৮-১৯ মৌসুমে জুভেন্টাস থেকে ধারে খেলেন ঐতিহ্যবাহী এসি মিলানের হয়ে। আগের মৌসুমেও ধারেই খেলছেন হিগুয়েন, ইংলিশ লিগের জায়ান্ট চেলসিতে। আবারও যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে।
** কিংবদন্তী পেলে আসছেন বাংলাদেশে