কাতারকে রুখে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
৯ অক্টোবর ২০১৯ ২০:১২
ঢাকা: আফগানিস্তানের সঙ্গে হেরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মিশন শুরু করা বাংলাদেশের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় ম্যাচে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক কাতারকে আতিথ্য দিবে বাংলাদেশ। রাত পোহালেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আরেকবার যুদ্ধে নামবে লাল-সবুজরা। র্যাঙ্কিং ও যোগ্যতার বিচারে যোজন এগিয়ে থাকা কাতারকে এবার রুখে দিতে চায় বাংলাদেশ। ১৫ দিনের কঠোর প্রস্তুতি ও ভুটান জয়ের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে কাতার রুখে দিতে প্রস্তুত জামাল ভূঁইয়ারা।
রক্ষণে শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে কাউন্টার অ্যাটাকের কৌশল নিয়ে আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় কাতারের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দীর্ঘ ১৩ বছর পর কাতারের সঙ্গে খেলেছিল লাল-সবুজরা। ২০০৬ সালে সেবার কাতার ম্যাচটি জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। এশিয়ান কাপের হোম ম্যাচে সেবার বাংলাদেশ হেরেছিল ৪-১ ব্যবধানে।
এবারতো এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়নই কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি আফগানদের ৬-০ ব্যবধানের বড় জয়ে উড়িয়ে দিয়ে মিশন শুরু করলেও ভারতের কাছে ঘরের মাঠেই গোলশূন্য ড্র করেছে। এদিকে আফগানদের সঙ্গে ১-০ ব্যবধানে হার দিয়ে মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে জামাল-মামুনদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষের কাতার।
ঘরের মাঠে কাতারকে রুখে দিতে প্রস্তুত লাল-সবুজরা। কৌশল নিয়ে কোচ জেমি ডের কথা, ‘কাতার দলের খেলোয়াড়রা উচ্চমানের। আমাদের প্লেয়াররাও দেশের প্রেক্ষাপটে টপ প্লেয়ার। সেই অ্যাটিচিউড নিয়ে খেলতে হবে আমাদের। ওরা আক্রমণাত্মক খেলবে। আমরা ডিফেন্স শক্ত করে আমরা তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে চাই।’
দলের রক্ষণে তিন দুর্গ নেই। তপু বর্মণ আগে থেকেই নেই। মাঝে আতিকুল ইসলাম ফাহাদও ইনজুরিতে বাইরে। এদিকে বিশ্বনাথও খেলতে পারছেন না কার্ড সমস্যায়। ভারত ম্যাচে ফিরবেন তিনি। আবার দলে সুযোগ পাওয়া সুশান্ত ত্রিপুরা সম্প্রতি ভুটান ম্যাচে ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন। টুটুল হোসেন বাদশা ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও ম্যাচ খেলা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এদিকে মাঝমাঠের সৈনিক মাসুক মিয়া জনি হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ইনজুরিতে। বিশ্বকাপ মিশনেই তাকে পাওয়া নিয়ে সংশয়। তাদের বদলে হাল ধরতে হবে দুই ইয়াসিন, মানিক, রায়হান, রহমত মিয়াদের।
জামাল ভূঁইয়া এমন অবস্থার সমাধান খুঁজলেন, ‘যারা আছে তারাও ভালো খেলছে। আশা করছি ভালো করবে রক্ষণ দুর্গরা।’ সুযোগ পেতে পারেন রায়হান হাসান। রাইট ব্যাক উইঙ্গার হিসেবে ভুটানের সঙ্গে দারুণ খেলেছেন তিনি। তার থ্রো থেকে গোল পান ইয়াসিন। জেমির কথায়, ‘প্রত্যেক দলের লম্বা থ্রো করার খেলোয়াড় আছে। বিশেষ করে এটা দিয়ে আক্রমণ করার সুযোগ থাকে। অবশ্যই এটা একটা অস্ত্র। এটা দিয়ে আমাদের আক্রমণ করার সুযোগ আছে। আমরা তাদের বক্সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারি।’
র্যাঙ্কিংয়ে ঢের ঢের এগিয়ে কাতার। ১২৫ ধাপ উপরে তারা। স্বভাবতই ম্যাচের চালকে আসনে থাকবে সফরকারিরা। সেট পিস থেকে বাংলাদেশকে আক্রমণ করে যাবে কাতার। এ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানালেন জামাল, ‘সেট পিসের জন্য অনেক কাজ করছে। তাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কাজ করেছে। আশা করছি আমরা সেটা মাঠে দেখানোর চেষ্টা করবো।’
এদিকে বাংলাদেশকে সমীহ করেই ম্যাচে নামছে কাতার এমনটাই জানালেন সফরকারিদের কোচ ফিলেক্স সানচেজ, ‘এশিয়ার দলগুলো এখন অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা বাংলাদেশের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে কাজ করেছি। প্রাকৃতিক ঘাসের মাঠ। আশা করছি ফুটবলাররা মানিয়ে নিয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরবে।’ কাতার দলের ফুটবলার আলী হাসানের মুখেও সমীহের বিষয়টি এসেছে।
গেল এশিয়ান গেমসে কাতার বধের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের। সেই সুখস্মৃতি অনুপ্রেরণা যোগাবে এমনটাই প্রত্যাশা জেমির, ‘অনুপ্রেরণা যোগাবে অবশ্যই। তবে অনূর্ধ্ব-২৩ আর জাতীয় দল এক নয়। দুইটার লেভেল দুই রকমের। টপ লেভেলের প্লেয়াররা জাতীয় দলে খেলছে। এশিয়ান গেমসের জয়টা অবশ্যই আমাদের মানসিকতা বদলাতে সাহায্য করবে যে আমরা কাতারকে হারাতে পারি।’ সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এবারও গোল করে স্বপ্ন পূরণ করতে চান তিনি।
আফগানিস্তানের সঙ্গে যে ভুলগুলো হয়েছে সেই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে হেরে। এবার সেই ভুলগুলো এড়াতে চায় ফুটবলাররা। জামাল ভূইয়ার কথায়, ‘আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে মিস করেছি। কিন্তু এই ম্যাচে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে।’
ড্র নয় বরং জয়ের মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামবে ফুটবলাররা। অধিনায়কের কণ্ঠেও সেটা স্পষ্ট, ‘যদি সবাই তাদের শতভাগ দেয়। তাহলে সম্ভব। আমরা সবাই জানি কাতারের ফুটবলাররা ভালো লিগে খেলে। এ ম্যাচে কিছু করতে চাইলে আমাদের কিছু করতে হবে।’
সঙ্গে ভারতের সঙ্গে কাতারের ম্যাচটি বাড়তি উৎসাহ দিবে বলে জানা জামাল ভূঁইয়া, ‘ইন্ডিয়ার বারে তারা ২৯টা শট নিয়েছে। তাদের মাটিতেই ভারত ড্র করে এসেছে। ভারত পারলে আমরাও পারবো। ওরা আক্রমাণত্মক খেলবে। আমাদের কাউন্টার অ্যাটাক খেলে রেজাল্ট আনতে হবে। আমাদের একটা মোটিভেশন আছে যদি ভারত পারে তাহলে আমরাও পারবো।’