সাবাশ বাংলাদেশ!
৩ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:২৪
সাবাশ, বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
সত্যি তাই। সুকান্তের সেই দুর্মর বাংলাদেশকেই যেন আরেকবার দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা, ব্যক্তিগত কারণে তামিম ইকবালের সরে দাঁড়ানো ও পিঠের চোটে সাইফউদ্দিনের ছিটকে যাওয়ায় ভারত সফরে আগে গোটা দলই হয়ে পড়েছিল এলোমেলা। উপায়ন্তু না দেখে দ্বিতীয় দফায় দল দিতে হল নির্বাচকদের। যে দলের অধিকাংশেই তারুণ্যে ভরা। ভারতের মত পরাশক্তিকে মোকাবেলা করার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা যাদের নেই। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা ভারতের ঘরের মাঠ। যেখানে বিশ্বের হেন দল নেই নাকানি চুবানি খায় না। সেই তাদের মাটিতেই কী অবিশ্বাস্য খেলাটাই না খেলল টিম বাংলাদেশ! সাকিব-তামিমহীন দলটিও পরাশক্তি ভারতকে দুর্দান্ত দাপটে হারিয়ে দিল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি টোয়েন্টিতে রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে দাপুটে জয় তুলে নিয়ে ১-০ তে এগিয়ে থাকল লাল সবুজের দল।
এতে করে দারুণ একটি ইতিহাসও রচনা হল। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়টিও এলো ভারতেই মাটিতেই। ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ভারত বধ। ক্রিকেটের যে কোন ফর্মেটে ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোন জয়।
রোববার (৩ নভেম্বর) দিল্লির অুলণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত ৬ উইকেটে সংগ্রহ করেছিল ১৪৮ রান। জয়ের জন্য ১৪৯ রানের লক্ষ্য টাইগাররা টপকে গেল মাত্র ৩ উইকেটের খরচায়। বল বাকি ছিল আরো ৩টি।
৭ উইকেটের বড় জয়ের আনন্দে উদ্ভাষিত হল ১৬ কোটি মানুষের ৫৬ হাজার বর্গমাইল।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। যাওয়ার আগে এই ওপেনার করে গেছেন ৭ রান। দিপক চাহারের লেংথ বল সুইং করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সংশয়ে থাকা লিটন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না খেলবেন নাকি ছাড়বেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিধা নিয়েই খেললেন, সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন কাভার পয়েন্টে।
লিটনকে হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশকে ট্র্যাকে রাখলেন অভিষিক্ত নাইম শেখ। তাকে সঙ্গ দিয়ে গেলেন সৌম্য সরকার। সিঙ্গেলস, ডাবলস ও চার ছয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই এগুচ্ছিলেন নাইম। কিন্তু স্নায়ু ধরে রাখতে পারেননি। ৮ম ওভারে এসে টানা তিনটি ডট বল দিলেন যুজবিন্দ্র চাহাল। সেই চাপ সামলে উঠতে খেললেন করলেন স্লগ সুইপ। বল উঠে গেল আকাশে। যা অনায়াসেই তালুবন্দী করলেন শিখর ধাওয়ান।
তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে দৃঢ় ব্যাটে দলেকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশও ৮ উইকেটের বড় জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু তাতে পানি ঢেলে দিলেন খলিল আহমেদ। ১৭তম ওভারে তার শেষ বলটি সৌম্য কাট করতে গিয়ে লাইন মিস করেন। বল গিয়ে চুমু খায় স্ট্যাম্পে। ৩৫ বলে ৩৯ রান করে ক্রিজ ছাড়েন সৌম্য। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ১১৪। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩ ওভারে ৩৫ রান।
এমতাবস্থায় চতুর্থ উইকেটে মাহমুউল্লাহ এলে তাকে নিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেন মুশফিকুর রহিম। ক্ষুরধার ব্যাটে টি-টোয়েন্টিতে নিজের ৫ম ফিফটি তুলে নিয়ে ১৯ তম ওভারে খলিল আহমেদকে টানা চারটি বাউন্ডারি মেরে দলকে নিয়ে যান জয়ের একেবারে নি:শ্বাস দূরত্বে।
২০তম ওভারে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই ওভারের তৃতীয় বলে ছয় মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৪৩ বলে ৬০ রানে অপরাজিত থেকেছেন মুশফিক। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ বলে করেছেন ১৫ রান। ১৯.৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৫৪ রান।
ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে মোটেই স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেনি স্বাগতিক ভারত ব্যাটসম্যানেরা। দলীয় ১০ রানেই শফিউলের বলে পরাস্ত হন দুধর্ষ রোহিত শর্মা (৯)। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ভেতরে ঢুকে পড়ে। রোহিতের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে লাগে পায়ে। শফিউলের আবেদনে সাড়া দিতে কার্পণ্য দেখাননি আম্পায়ার। রিভিউ নেন রোহিত। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে টিকে থাকে শফিউলের আবেদন।
ভারতের ওপর দ্বিতীয় আঘাতটি হানেন তরুণ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। প্রথম ওভারেই সাফল্যের দেখা পান এই লেগি।৭ম ওভারে তার অফস্টাম্পের বাইরে করা অনুমান করতে পারেননি লোকেশ রাহুল (১৫)। খেলতে গিয়ে শর্ট কাভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে সহজ ক্যাচ বনে যান। পরের উইকেটের শিকারিও বিপ্লব। শ্রেয়াশ আইয়ারকে ঝুলিযে বল দিয়ে খেলতে প্রলুদ্ভ করেন। শ্রেয়াসও সেই ফাঁদে পা দেন। ফলাফল ও হআতে নাতে। নাইম শেখের তালুতে আটকে ফিরে যান ২২ রানে।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও থেকে যান ভয়ংকর শিখর ধাওয়ান। রানের চাকা দ্রুত ঘোরাতে বারবারেই প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইক নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল। ১৫তম ওভারে মিড উইকেটের দিকে ঠেলে প্রথম রানটি দ্রুত নিয়েছিলেন সত্যি কিন্তু বিপত্তি বেধে গেলে দ্বিতীয় রান নিতে যাওয়ায়। মাহমুদউল্লাহর থ্রোতে ৪১ রানে কাটা পড়লেন। তার ফেরায় ভারতও চলে গেল ব্যাকফুটে। প্রত্যাশিত সংগ্রহ বঞ্চিত হল স্বাগতিক শিবির।
এরপর রিশাভ পান্থের ২৭, ক্রুনাল পান্ডিয়ার ১৫ ও ওয়াশিংটন সুন্দরের ১৪ রানে ৬ উইকেটে ১৪৮ রানের সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মা ও তার দল।