রাজকোটে জিতে সিরিজে ফিরল ভারত
৭ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৪৭
রাজকোটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে স্বাগতিক ভারত। টাইগারদের দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভারত হারিয়েছে ২ উইকেট। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে সিরিজে ১-১ এ সমতায় ফিরেছে ভারত। ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন রোহিত শর্মা। টাইগারদের হয়ে চার ওভার বল করে ২৯ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের উপর চড়াও রোহিত শর্মা। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম ওভার থেকে শিখর ধাওয়ান নেন ৯ রান। এরপর থেকেই যেন ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন ভারতীয় অধিনায়ক। পঞ্চম ওভারে বল হাতে আসেন কাটার মাস্টার; তবে তার এক ওভার থেকেই ১৫ রান তুলে নেন রোহিত। পরের দুই ওভারে আল-আমিনের ওভার থেকে আসে ১১ এবং শফিউল ইসলামের ওভার থেকে আসে ১৫। এতেই প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে অর্ধশতক রান তোলে স্বাগতিকরা।
ইনিংসের ৮ম ওভারেই নিজের ১০০তম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা রোহিত শর্মা তুলে নেন ১৮তম অর্ধশতক। ২৩ বলে ৬টি চার এবং ৩টি ছয়ে অর্ধশক তুলে নেন ভারতীয় অধিনায়ক।
১১তম ওভারে বল করতে আসেন টাইগার লেগি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ওভারের ৫ম বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে শট খেলতে যান শিখর ধাওয়ান। আর এতেই মিস হয়ে যায় ব্যাট-বল; সোজা গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। আর এতেই ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ভারতের। আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন শিখর ধাওয়ান।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে আবারও বিপ্লবের হাতে বল তুলে নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এবার বল হাতে নিয়ে ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন ভয়ংকর রোহিতের উইকেট। মিড অন দিয়ে সজোরে ওভার বাউন্ডারির উদ্দেশ্যে ব্যাট হাঁকিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে বাউন্ডারির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে গিয়ে পড়ে বল। এতেই ৮৫ রানের দারুণ এক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে রোহিত শর্মার। ঝড়ো এই ইনিংসে ৪৩টি বল খেলেছেন রোহিত আর ইনিংস জুড়ে মেরেছেন ছয়টি করে চার এবং ছয়।
শেষ পর্যন্ত লোকেশ রাহুলের ৮ এবং শ্রেয়াস আইয়ারের ২৩ রানে ২৬ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় স্বাগতিক ভারত। আর এতেই তিন ম্যাচ সিরিজে সমতায় ফেরে স্বাগতিক ভারত।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১৫৩ রান। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে মোহাম্মদ নাইম শেখের ব্যাট থেকে। ভারতের হয়ে ৪ ওভারে ২৮ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট তুলে নেন যুজবেন্দ্র চাহাল। সিরিজে ফিরতে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্যে রানের।
দু’টি জীবন পেয়েও ব্যর্থ লিটন
এক ওভারের ব্যবধানে পেলেন দু’টি জীবন। এরপরেও ব্যর্থ হলেন বড় ইনিংস খেলতে। লিটন দাস ফিরে গেলেন ২৯ রানেই। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই টাইগার ওপেনার লিটন দাস এবং মোহাম্মদ নাইম শেখ ঝড়ো শুরু করেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে আসেন খলিল আহমেদ। আর তার ওভারের প্রথম তিন বলেই তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঝড়ো সুচনার শুরু করেন নাইম শেখ। এরপর লিটন দাসকে সঙ্গী করে শুরুটা ধরে রাখেন নাইম।
তবে পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে বল হাতে আসেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে যুজবেন্দ্র চাহালকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটিং সীমানা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন লিটন; আর মিস করে যান ব্যাটে বলে না হওয়ায়। লিটন মিস করে গেলেও মিস করেননি রিশব পন্ত। তবে টিভি আম্পায়ার দেখেন পন্ত উইকেটের আগেই গ্লাভস বাড়িয়ে ধরে ফেলেন বলটি। আর এতেই লিটন কেবল দ্বিতীয় জীবনই পাননি; সেই সঙ্গে পেয়েছেন ফ্রি হিটও।
এরপরের ওভারে বল হাতে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ওভারের তৃতীয় বলে সুন্দরকে উড়িয়ে মারতে যান লিটন। তবে ব্যাটে বলে না হওয়ায় বল হাওয়ায় ভেসে যায়। ভারতের তিন ফিল্ডার ক্যাচ লুফে নিতে এগিয়ে আসলে কল দেন রোহিত শর্মা। তবে একি! ক্যাচটি মিস করে বসলেন স্বয়ং অধিনায়ক।
অষ্টম ওভারে আবারও আসলেন চাহাল। আবারও আবেদন। তবে আম্পায়ার নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। রান নেওয়ার চেষ্টা লিটনের। তবে উইকেটের সামনে থাকা বল ধরেই থ্রো করেন পন্ত। আর এতেই রান আউট হয়ে ফিরে যেতে হয় লিটনকে। ব্যক্তিগত ২৯ রানে দু’টি জীবনে পাওয়ার পরও বড় ইনিংস খেলতে না পেরেই ফিরে যেতে হয় লিটনকে।
টাইগারদের ব্যাটিং ইনিংসের অর্ধেক শেষে ১১তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভার বল করতে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ওভারের তৃতীয় বলে সুন্দরকে মিড অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে। এবার আর ভুল করেননি ভারতীয় ফিল্ডাররা। ৩১ বলে ৩৬ রান করে ফিরে যেতে হয় নাইম শেখকে। দলীয় ৮৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
থিতু হয়েও উইকেট বিলিয়েছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা
নাইমের ফেরার পর উইকেটে আসেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি মুশি। চাহালকে সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বল তুলে দেন ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাতে। দলীয় ৯৭ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। মুশফিক আউট হন ব্যক্তিগত ৪ রানে। একই ওভারের শেষ বলে স্ট্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে যান চাহালকে। সৌম্য ব্যর্থ হন ব্যাটে বল ছোঁয়াতে; সঙ্গে সঙ্গে বল লুফে নেন রিশব পন্ত। এবারেও লিটনের মতো ভুল করতে বসেছিলেন পন্ত। তবে এবার ঠিকই মাঠ ছাড়তে হলো সৌম্যকে। দারুণ সুচনা করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ সৌম্য, ফিরে গেলেন ২০ বলে ৩০ রান করে।
অধিনায়ক মাহমুদুল্লার সঙ্গে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থতা নিয়েই ফিরতে হয়েছে আফিফকে। খলিল আহমেদকে মারতে গিয়ে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। তিনি ফেরেন মাত্র ৬ রান করে। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আউট হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেন ৩০ রান।