চাহারের বোলিং তোপেই শেষ ম্যাচ সঙ্গে সিরিজ জয় ভারতের
১০ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৫৭
নাগপুরের অঘোষিত এক ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ এবং স্বাগতিক ভারত। সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে যারা জিতবে শিরোপা নিজেদের করে নিবে তারাই। এমন পরিসংখ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে ভারত টাইগারদের সামনে ছুঁড়ে দেয় ১৭৫ রানের লক্ষ্য। তবে শেষ পর্যন্ত আর জয়ের লক্ষ্য স্পর্শ করতে পারেনি টাইগাররা। দীপক চাহারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের চার বল বাকি থাকতেই ১৪৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। আর ভারতের কাছে হার মানতে হয় ৩০ রানের ব্যবধানে। সেই সঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথমটি জিতে ১-০ তে এগিয়ে থেকেও ২-১ ব্যবধানে হেরেছে টাইগারদের।
টাইগারদের সামনে জয়ের লক্ষ্য ১৭৫
ভারতের দেওয়া ১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেন লিটন দাস। প্রথম ওভারেই হাঁকান দু’টি বাউন্ডারি। এরপর তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে মিড অনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারির সামনে ক্যাচ তুলে দেন এই ওপেনার। আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি ওয়াশিংটন সুন্দর। আউট হওয়ার আগে নামের পাশে মাত্র ৯ রান যোগ করেন লিটন। এই ওপেনারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন সৌম্য সরকার। আর উইকেটে এসেই লিটনের পর দীপক চাহারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। সৌম্য রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ের পর চার নম্বরের নিয়মিত মুখ মুশফিকুর রহিমের বদলে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। আর তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন ওপেনার মোহাম্মদ নাইম।
নবাগত নাইমের দাপুটে অভিষেক ফিফটি
মাত্র দুই ম্যাচ আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেছেন তরুণ টাইগার ওপেনার নাইম। তৃতীয় ম্যাচে এসেই করলেন ফিফটি। তাও যে সে প্রতিপক্ষ নয়। শক্তিশালি ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই! দাপুটে ব্যাটে তুলে নিলেন অভিষেক টি-টোয়েন্টি অর্ধশতক। অর্ধশতক পূর্ণ করতে তিনি খেলেছেন ৩৪টি বল। এরপর তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট ছোটান এই টাইগার ওপেনার।
নাইমকে সঙ্গ দেওয়া মোহাম্মদ মিঠুন ১৩তম ওভারের শেষ বলে মিড অন দিয়ে উঠিয়ে মারেন দীপক চাহারকে। আর ভুলটা করে বসেন সেখানেই ২৯ বলে ২৭ রান করা মিঠুন বল তুলে দেন লোকেশ রাহুলের তালুতে। ভুল করেননি রাহুল; আর তাতেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় মিঠুনকে।
মিঠুন ফিরতে না ফিরতেই উইকেটটা যেন বিলিয়ে দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। শিবম দুবেকে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড এজে বল লাগে টিম্বারে। আর রানের খাতা খোলার আগে প্রথম বলেই ফিরে দলকে চাপে ফেলে দেন অভিজ্ঞ মুশফিক। এরপরও এক প্রান্তে রানের ফোয়ারা ছোটাতে থাকেন মোহাম্মদ নাইম। তবে ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে শিবম দুবের ইয়োর্কারে পরাস্থ হতে হয় নাইমকে। কিন্তু আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লড়েছেন একা হাতেই। ১০টি চার আর ২টি ছয়ে ৪৮ বলে ৮১ রান করে ফেরেন ওপেনার মোহাম্মদ নাইম।
নাইমের আউটের পর উইকেটে এসে আর অপেক্ষা করতে পারেননি আফিফ হোসেন। সৌম্য, মুশফিকের মতো নিজের প্রথম বলেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন আফিফও। এরপর যেন যাওয়া আসার মিছিলে পড়েন বাকিরা। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফেরেন ৮ রানে। শফিউল ইসলাম করেন ৪।
ভারতের হয়ে ৪ ওভারে ৩০ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নেন শিবম দুবে; আর সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন দীপক চাহার। নিজের কোটার ৪ ওভার ওভারে বল করতে এসে প্রথম দুই বলেই দুই উইকেট তুলে নেন চাহার। ৩.২ ওভারে ৭ রান খরচে ৬ উইকেট তুলে নেন চাহার। আর বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৪ রানে।
এর আগে নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে নেমে লোকেশ রাহুল আর শ্রেয়াস আইয়ারের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত সংগ্রহ করে ১৭৪ রান। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন সৌম্য সরকার এবং শফিউল ইসলাম। আর এতেই টাইগারদের সামনে ১৭৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ভারত।
চাপের ম্যাচে টাইগারদের মিস ফিল্ডিংয়ের মহড়া
টাইগারদের ফিল্ডিং ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে আসেন শফিউল ইসলাম। ওভারের তৃতীয় বলে রোহিতকে বোল্ড করেন শফিউল ইসলাম। আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে রোহিত শর্মা নামের পাশে যোগ করেন মাত্র ২ রান। রোহিত ফিরে গেলে বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই ব্যাটিং শুরু করেন শিখর ধাওয়ান এবং লোকেশ রাহুল। পাওয়া প্লে’র শেষ ওভারে আবারও বল হাতে আসেন শফিউল ইসলাম। ওভারের তৃতীয় বলে তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইগার অধিনায়কের তালুবন্দী হন ধাওয়ান। এর আগে অবশ্য ১৬ বলে ১৯ রানের ইনিংস খেলেছেন ধাওয়ান।
দুই উইকেট হারানোর পর শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লোকেশ রাহুল। ব্যাট হাতে চার ছক্কার ফুলঝুরি ঝরাতে শুরু করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৩৩ বলেই রাহুল তুলে নেন অর্ধশতক। ইনিংসের ১৩তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসেন আল আমিন। আর এসেই ওভারের প্রথম বলে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন টাইগার বোলারদের ওপর ভয়ংকর তাণ্ডব চালানো লোকেশ রাহুলকে। আল আমিনকে লং অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে বন্দী হন রাহুল। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ৭ চারে মাত্র ৩৫ বলে ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে যান রাহুল।
এরপর উইকেটে থিতু হওয়া শ্রেয়াস আইয়ার ভারতীয় দলের হাল ধরেন। ১৫তম ওভারে বল করতে আসা আফিফ হোসেনের প্রথম তিনি বলেই হাঁকান তিনটি ওভার বাউন্ডারি। আর চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম অর্ধশতক। ইনিংসের ১৭তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভারে বল হাতে আসেন সৌম্য সরকার। রিশব পন্ত সৌম্যকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিস করে বসেন বলটিই, আর এতেই বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে। আর ওভারের পঞ্চম বলে ভয়ংকর শ্রেয়াস আইয়ারকে ফেরান সৌম্যই। তবে তার আগে ৩৩ বলে ৬২ রান করে ভারতের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত করেন এই মিডল অর্ডার। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান তোলে ভারত। আর টাইগারদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭৫ রানের।
এর আগে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ভারতকে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে রাজকোটে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফেরে স্বাগতিক ভারত। আর তাই তো নাগপুরের তৃতীয় ম্যাচটি দু’দলের জন্যই এক প্রকার ফাইনাল ছিল। আর সেই ফাইনাল জিতেই শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিক ভারত।