টেস্ট মেজাজটাই জন্মাল না বাংলাদেশের!
১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:২৪
বয়স ঊনিশ পেরিয়ে বিশে পা দিয়েছে। কিন্তু আজও টেস্ট মেজাজটাই যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সত্বায় জন্ম নেয় নি! নেবে কি করে বলুন! ১৯ বছরের সুদীর্ঘ্য পথ চলায় তারা টেস্ট ক্রিকেটের গ্রামারটাই যে রপ্ত করতে পারেননি! টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্য্যের খেলা, গেরিলা যুদ্ধের মত ঘণ্টার পর ঘণ্টা,সেশনের পর সেশন এখানে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়-এই মন্ত্রটাই যেন আজও শেখা হয়ে ওঠেনি লাল সবুজের যোদ্ধাদের! কেমন নবিশ নবিশ একটি ভাব! ঠিক যেন ১৫ বছর আগের সেই দলটি।
মজার ব্যাপার হল,সাদা পোষাকে যে কোন সিরিজের আগে ঠিক এই মন্ত্রটিই এদেশের প্রতিটি ক্রিকেটার তোতা পাখির মত বলে যান! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা কেউ বিশ্বাস করেন না! যদি করতেন তাহলে তার প্রমান মাঠে ঠিকই দিতেন। এভাবে প্রথম দিনের মাত্র দুটি সেশনেই গুটিয়ে যেতেন না।
৫৮.৩ ওভারে ১৫০ রানে ইনিংসের সলিল সমাধি না গড়ে যদি উইকেট আঁকড়ে সারা দিনেও এই সংগ্রহ গড়তেন বোধ করি কেউ তাদের দিকে আঙুল তুলতেন না। বয়সে এত পরিণত কিন্তু কাজে তার ছিটে ফোঁটাও নেই। হোক না ভারতের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঝড়ানো বোলিং তাই বলে একজন ব্যাটসম্যান ৫০ রানও করতে পারবেন না! কী দৃষ্টিকটু পারফরম্যান্স! ৫ দিনের ম্যাচের প্রথম দিনেই এতটা বেহাল দশা!
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ইনদোরে টস জিতে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছিলেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস ও তরুণ সাদমান ইসলাম অনিক। শুরুটা সতর্কই হয়েছিল। কিন্তু আচমকাই পা হড়কালেন এই দুই ওপেনার।
উমেশ যাদবের লেংথ বল খেলতে গিয়ে মাত্র ৬ রানে স্লিপে ধরা পড়লেন ইমরুল। একই সংগ্রহে ঠিক তার পরের ওভারে ইশান্ত শর্মার সুইংয়ে কট বিহাইন্ড হন সাদমান। দলীয় ১২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।
মুমিনুল ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে মনে হচ্ছিল শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ঠিক তখনই আঘাত হানলেন মোহাম্মদ শামি। এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেললেন মিঠুনকে (১৩)।
এরপর মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ইনিংস সেরা জুটি পায় ডোমিঙ্গ শিষ্যরা। তবে জুটিটি শুরুতেই ভাঙতে পারত শুরুতেই যদি না তিন তিন বার মুশফিক জীবন পেতেন। মুশি প্রথম জীবনটি পেয়েছিলেন তখন তার ব্যক্তিগত রান ৩। উমেশের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলেছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। পরের দুই জীবন পান ১৫ ও ৩৪ রানে।
শুরুতে ফিরতে পারতেন মুমিনুলও। কিন্তু তার কঠিন ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি আজিঙ্কা রাহানে। সেই সুবাদে মুশফিকের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ৯৯ রান এনে দিয়ে অশ্বিনের স্লাইডারে পরাস্ত হয়ে ফিরে যান সাজ ঘরে। তার আগে নামের পাশে যোগ করেন ৩৭ রান।
মূলত মুমিনুলের বিদায়ের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের এপিটাফ রচনা হয়ে যায়।
কেননা এরপরই উইকেটে আসা মাহমুদউল্লাহ ১০ রানে অশ্বিন ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন মুশফিকুর রহিম। শামির পেস বুঝে না উঠায় ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ক্লিন বোল্ড হন। বাংলাদেশর রান তখন ১৪০।
বাকি ১০ রানের মধ্যে বিদায় হন চার ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজ (০), লিটন দাস (২১), তাইজুল ইসলাম (১) ও এবাদত হোসেন (২)। ৭ রানে অপরাজিত থাকেন আবু যায়েদ রাহি। ১৫০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
বল হাতে স্পিনারদের চাইতে ভারতের পেসাররাই বেশি দাপট দেখিয়েছেন। মোহাম্মদ শামি ৩টি, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মা ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার ২টি।
জবাবে দিনের শেষ সেশনে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেটের বিনিময়ে স্বোর বোর্ডে ৮৬ রান তোলে স্বাগতিক ভারত। উইকেটটি শিকার করেছেন আবু যায়েদ রাহি। ‘হিট ম্যান’ রোহিত শর্মাকে ৬ রানে পাঠিয়ে দিয়েছেন লিটন দাসের গ্লাভসে।
প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে ৬৪ রানে। ব্যাট হাতে দিন শেষে অপরাজিত আছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল (৩৭) ও চেতেশ্বর পুজারা (৪৩)।