মুশফিকের দৃঢ়তার পরেও ইনিংসসহ হার টাইগারদের
২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:১০
ইডেনের ঐতিহাসিক গোলাপি বলের টেস্টের তৃতীয় দিনে ইনিংসসহ ৪৬ রানের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৩ রান যোগ করতেই তিন উইকেট হারায় টাইগাররা। আর এতেই টানা সাতটি টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় ভারতের। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে ২৪১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
দ্বিতীয় ইনিংস ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। মাঠে নেমে প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ইশান্ত শর্মার বলে এলবি’র ফাঁদে পড়ে আউট হন সাদমান ইসলাম। এরপর উইকেটে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। তবে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন শূন্য রানে। আর দ্বিতীয় ইনিংসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফিরেছেন শূন্য হাতেই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ইশান্ত শর্মার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যেতে হয় মুমিনুলকে।
দুই উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। আর বিরতি থেকে ফিরেই উমেষ যাদবের বলে আউট হয়ে ফিরে যান মোহাম্মদ মিঠুন। এর আগে নামের পাশে যোগ করেন মাত্র ৬ রান। আর দলীয় ৯ হতেই প্যাভিলিয়েন ফিরেছেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান। এরপর ফেরার মিছিলে নাম তোলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। দলীয় স্কোরবোর্ডে ৪ রান যোগ হতেই ফিরে যান তিনিও। আউট হওয়ার আগে করেন ৫ রান।
ইনিংসের ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যক্তিগত ৩৯ রানে রিটার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন রিয়াদ। এই সময় বাংলাদেশ দলের দলীয় সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৮২ রান। ইনজুরিতে পড়ে রিয়াদ মাঠের বাইরে চলে গেলে মাঠে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়েন ৩৯ রানের। এরপর ইশান্ত শর্মার চতুর্থ শিকার হয়ে মাত্র ১১ রানেই ফিরে যেতে হয় মিরাজকে। ইনিংসের ২৬তম ওভারের শেষ বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। এর আগে অবশ্য ব্যক্তিগত ৪ রানে আজিঙ্কা রাহানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েও জীবন পেয়েছিলেন মিরাজ। মিরাজ যখন ফেরেন তখন বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৩৩ রান।
মিরাজের আউটের পর উইকেটে আসেন লিটন দাসের বদলি হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়া তাইজুল ইসলাম। টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসের ৩২তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ১১ এবং দলীয় ১৫২ রানে উমেষ যাদবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তাইজুল। তখনও টাইগাররা পিছিয়ে ৮৯ রানে। এরপর তৃতীয় দিনের শুরুতেই ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে এবাদতকে ফেরান উমেষ যাদব।
ইনিংসসহ হার এড়াতে টাইগারদের একমাত্র ভরসা ছিল অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তবে ব্যক্তিগত ৭৪ রানে উমেষ যাদবের বলে হাওয়ায় বল তুলে দেন মুশি। আর তা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি রবীন্দ্র যাদেজা। দলীয় ১৮৪ রানে ফিরে যান মুশি। এরপর ইনিংসসহ হারটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অভিজ্ঞ মুশি ফিরে যাওয়ার পর ১১ রান যোগ করার পর উমেষ যাদবের পঞ্চম শিকারে পরিণত হন আল-আমিন হোসেন। আর ইনজুরিতে পড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর ব্যাট করতে না পারলে ইনিংসসহ ৪৬ রানের হার বরণ করতে হয় টাইগারদের। ভারতের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৫ উইকেট তুলে নেন উমেষ যাদব আর ৪ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা।
এর আগে ১ম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ১০৬ রানের জবাবে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির ২৭তম টেস্ট শতকে ২৪১ রানের লিড পায় স্বাগতিক ভারত। গোলাপি বলে ভারতের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে নেন প্রথম শতক। এই শতকই কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম এবং অধিনায়ক হিসেবে ২০তম শতক। অধিনায়ক হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টে শতকের দিক দিয়ে কেবল এগিয়ে আছেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি ক্রিকেটার গ্রায়েম স্মিথ।
বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট তুলে নেন আল-আমিন হোসেন এবং এবাদত হোসেন। আল-আমিন ২২.৪ ওভারে ৮৫ রান দিয়ে তুলে নেন তিন উইকেট আর এবাদত ২১ ওভারে ৯১ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৩টি উইকেট। টাইগারদের অপর পেসার আবু জায়েদ রাহী ২১ ওভারে ৭৭ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ২টি উইকেট।
টেস্টের প্রথম দিনে মাত্র ১০৬ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে দলীয় সর্বোচ্চ রান আসে ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে। তিনি করেন মাত্র ২৯ রান। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন লিটন দাস। তবে ২৪ রান করা লিটন মোহাম্মদ সামির বলে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। আর তার বদলে দলে সুযোগ পান মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারতের হয়ে ১২ ওভারে মাত্র ২২ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা। আর ৭ ওভারে ২৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নেন উমেষ যাদব। বাকি দুই উইকেট নেন আর এক ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সামি। ১০.৩ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন তিনি।
ইডেন টেস্ট টপ নিউজ তৃতীয় দিন দিবারাত্রির টেস্ট দ্বিতীয় ইনিংস দ্বিতীয় টেস্ট বাংলাদেশ বনাম ভারত