যোগ্যতা, মানসিকতা প্রশ্ন সবকিছু নিয়েই
২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৩
ইডেনে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়সীমা কত জানেন? মাত্র ৪৭ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের তিন তিন জন ব্যাটসম্যানের সলিল সমাধি ঘটেছে। এর মধ্যে দু’জন টেলএন্ডার হলেও একজন কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাতি পেয়ে গেছেন। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই তিনি কে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, মুশফিকুর রহিম।
দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ইনিংসে চা বিরতিতে নেমে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে পুরোদস্তুর টেস্ট মেজাজে দিন পার করে তৃতীয় দিনেও যে মানসিকতায় ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন তাতে ঘুণাক্ষরেও মনে হয়নি ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয় বরণ নিতে যাচ্ছে। কেননা লজ্জার এই হার এড়াতে মুমিনুলদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮৯ রান।
৪০তম ওভারে উমেষ যাদবের স্লোয়ারটি তেড়ে ফুড়ে না মেরে সমীহ করে খেললেই পারতেন সিনিয়র এই ব্যাটসম্যান। তাতে নিজের সেঞ্চুরিটিও হতো, বাংলাদেশের আব্রুও রক্ষা হতো। না, সেই পথে তিনি হাঁটেননি। বরং হেঁটেছেন উল্টো পথে। তাতে দেশের জাত ও মান সবই গেছে। এই ৭৪ রানে তার ব্যক্তিগত খতিয়ানে হয়তো সমৃদ্ধ হল, তবে দল বা দেশের তাতে কিছুই এসে গেল না! অথচ তারা বুলি আওড়াতে থাকেন, ‘আমরা দেশের জন্যই খেলি।‘ মাহমুদউল্লাহ যেহেতু হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েছেন সেহেতু তাকে এখানে টেনে লাভ নেই। কিন্তু বাকিরা কি করলেন?
ওপেনার সাদমান ইসলাম অনীক দুই ইনিংসে (২৯,০), ইমরুল কায়েস (৪, ৫), অধিনায়ক মুমিনুল হক (০,০), মোহাম্মদ মিঠুন (০,৬), মাহমুদউল্লাহ (৬,৩৯* রিটায়ার্ড হার্ট)। আর প্রথম ইনিংসে ২৪ করা লিটন মাথায় চোট পেয়ে মাঠছাড়া হয়েছেন। কেবল এখানেই শেষ নয়; ভারতের মাটিতে টেস্টে চার ইনিংস ব্যাট করা সাদমানের মোট রান ৪১, ইমরুল করেছেন ২১, অধিনায়ক মুমিনুলের খাতায় উঠেছে ৪৪ আর মোহাম্মদ মিঠুনের ঝুলিতে ৩৭ রান। অর্থাৎ টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান দুই টেস্ট করেছেন মোট মাত্র ১৩৭ রান। যেখানে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি কলকাতা টেস্টে এক ইনিংস ব্যাট করেই করেছেন ১৩৬ রান।
অথচ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স ঊনিশ পেরিয়ে বিশে পা দিয়েছে। কিন্তু আজও টেস্ট মেজাজটাই যেন তাদের ভেতরে জন্মাল না! ১৯ বছরের সুদীর্ঘ্য পথ চলায় তারা যেন টেস্ট ক্রিকেটের মানসিকতাটাই ধারণ করতে পারেননি! টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্য্যের খেলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সেশনের পর সেশন এখানে ব্যাট হাতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়-এই মন্ত্রটাই যেন আজও শেখা হয়ে ওঠেনি মুশফিক, মুমিনুল, মাহমুদউল্লাদের! তাহলে কি আমরা ধরে নেব, তাদের সেই যোগ্যতাই নেই? যদি সেই যোগ্যতাই থাকত তাহলে ঘরের মাটিতে পুঁচকে আফগানদের কাছে ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে হারতে হতো না।
আর এমন দলের যোগ্যতার বিচার করার জন্য তাদের পেছনেই কথা বলছে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যান। টেস্ট ক্রিকেটে সদ্য ভূমিষ্ট আফগানদের কাছে দেশের মাটিতে হারের আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দু’টিই হারতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে। যার প্রথমটি ইনিংসসহ ৫২ এবং দ্বিতীয়টি ইনিংসসহ ১২ রানের হার। ১৯ পেরিয়ে ২০ এ পা দেওয়া টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ নিজেদের খেলা শেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে চারটিই হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে আর একটি দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
কলকাতার দিবা রাত্রির এই টেস্টে বাংলাদেশ দুই ইনিংসে ব্যাটিং করেছে মোট ৬ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট! অথচ ম্যাচটি কিন্তু ৫ দিনের। এক ইনিংসে তারা তিন দিন ব্যাটিং করলেও কিন্তু বলার কেউ ছিল না। উল্টো বাহ্বাই পেতেন। কিন্তু তারা কি করলেন? সেই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মানষিকতা দেখিয়ে এই ফরম্যাটে নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন! ড্র দূরে থাক হারেরও তো ধরন থাকে। কিন্তু এমন হার! ছি! ছি! ছি! কী লজ্জা! টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের শুরুটা কি বিবর্ণই না করল লাল সবুজের দল!
ইন্দোরে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে উড়ে যাওয়ার পর ইডেন গার্ডেনসে উড়ে গেল ইনিংস ও ৪৬ রানে!
অনেকে প্রিয় দলের সমর্থনে বলতে পারেন গোলাপি বলের খেলা বলেই পারেনি বাংলাদেশ। যেহেতু এই বলে সুইং বেশি থাকে। তাদের জন্য প্রশ্ন হলো, তাহলে বিরাট কোহলি কি করে ১৩৬ রানের ইনিংসটি খেললেন? চেতেশ্বর পূজারার ব্যাট থেকে ৫৫ এলো কি করে? আজিঙ্কা রাহানেই বা কি করে ৫১ রানের ওই ইনিংসটি খেলেছিলেন? ইডেন গার্ডেনসের যে উইকেট টাইগারদের জন্য হুল ফোটানো ছিল সেই উইকেটিই তারা কী করে ফোটালেন!