ব্যর্থতার বৃত্তে ঘেরা টাইগারদের ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডার
২৫ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২৯
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসের দিবারাত্রির টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ২০১৯ সালের ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডার শেষ হলো। সারা বছর জুড়ে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট ম্যাচ খেলেছে ৩৩টি। আর এর মধ্যে ৫টি টেস্ট, ২০টি ওয়ানডে এবং ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে। যার এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে টাইগারদের
পুরো বছর জুড়ে ব্যর্থতার বৃত্তেই কেটেছে টাইগারদের ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩৩টি ম্যাচের মধ্যে টাইগাররা সব মিলিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১১টি ম্যাচে, হারের মুখ দেখতে হয়েছে ১৯ ম্যাচে পরিত্যক্ত বাকি ৩টি ম্যাচ। অর্থাৎ প্রায় ৩৪.১৮ শতাংশ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ জয় টি-টোয়েন্টিতে। আর সর্বনিম্ন অবস্থান টেস্টে।
বিশ্বকাপের বছরে ওয়ানডে’তে টাইগারদের শুরুটা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। তিন ম্যাচ সিরিজে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল সবগুলোতেই। এরপর তিন মাসের বিরতির পর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি স্বরূপ আয়ারল্যান্ডে উইন্ডিজ, বাংলাদেশ এবং স্বাগতিক দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। এই সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে সবক’টি ম্যাচ অর্থাৎ ফাইনালসহ বাকি চারটি ম্যাচে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় লাভ করে টাইগাররা।
এরপর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মোট নয়টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল টাইগারদের। তবে বৃষ্টির কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পায় আটটি ম্যাচ। আর গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার কারণে এই তালিকায় আর কোনো ম্যাচ যুক্ত হয়নি। বিশ্বকাপের আট ম্যাচের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও হেরে যায় বাকি পাঁচ ম্যাচ। দশ দেশ নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আট নম্বরে থেকে শেষ করে বাংলাদেশ। যেখানেই আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে টাইগারদের বর্তমান অবস্থান সাত নম্বরে। আর বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের শিকার হতে হয়েছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ সর্বমোট একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ২০ টি, যার মধ্যে জয় ৭টি ম্যাচে, হেরেছে ১১টি ম্যাচে আর বাকি দুইটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। ২০১৯ সালে ওয়ানডে’তে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের হার মাত্র ৩৫। যেখানে ৫৫ শতাংশ ম্যাচই হেরেছে টাইগাররা। যেখানে বছর জুড়ে খেলা টাইগার ব্যাটসম্যান আর বোলারদের পারফরম্যান্সও সন্তুষ্ট করতে পারেনি সমর্থকদের।
ওয়ানডে টাইগার ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স:
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | ইনিংস | মোট রান | সর্বোচ্চ রান | ৫০/১০০ | ব্যাটিং গড় |
মুশফিকুর রহিম | ১৮ | ১৮ | ৭৫৪ | ১০২* | ৫/১ | ৫০.২৭ |
সাকিব আল হাসান | ১১ | ১১ | ৭৪৬ | ১২৪* | ৭/২ | ৯৩.২৫ |
সৌম্য সরকার | ১৭ | ১৭ | ৫০৬ | ৭৩ | ৪/০ | ২৯.৭৬ |
তামিম ইকবাল | ১৮ | ১৮ | ৪৪২ | ৮০ | ৩/০ | ২৪.৫৬ |
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ | ১৭ | ১৫ | ৩৫৭ | ৬৯ | ১/০ | ৩২.৪৫ |
২০১৯ সালে টাইগার বোলারদের পারফরম্যান্স:
বোলার | ম্যাচ | মোট উইকেট | ৪/৫ উইকেট | সেরা বোলিং | মোট ওভার | ইকোনমি রেট | বোলিং গড় |
মুস্তাফিজুর রহমান | ১৬ | ৩৪ | ১/২ | ৫/৫৯ | ১৪১.১ | ৬.৭৮ | ২৮.১৫ |
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন | ১৩ | ১৮ | ০/০ | ৩/৭২ | ১০৫ | ৬.৩৯ | ৩৭.২৮ |
সাকিব আল হাসান | ১১ | ১১ | ০/১ | ৫/২৯ | ১০৩ | ৫.০৯ | ৪০.৩১ |
মেহেদী হাসান মিরাজ | ১৬ | ১৩ | ০/০ | ২/৪৭ | ১৪৩.১ | ৫.১৩ | ৫৬.৫৪ |
মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা | ১৫ | 0৮ | ০/০ | ৩/৪৯ | ১১৪.৩ | ৫.৮২ | ৮৩.২৫ |
২০১৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সব মিলিয়ে মোট ৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে জয়ের দেখা পেয়েছে মোট ৪ম্যাচে, হেরেছে ৩টিতে আর বাকি একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টাইগার ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স:
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | ইনিংস | মোট রান | সর্বোচ্চ রান | ৩০+ ইনিংস | ব্যাটিং গড় | স্ট্রাইক রেট |
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ | ০৭ | ০৭ | ১৭৯ | ৬২ | ০৩ | ২৯.৮৩ | ১২৬.০৬ |
মোহাম্মদ নাইম শেখ | ০৩ | ০৩ | ১৪৩ | ৮১ | ০২ | ৪৭.৭৬ | ১৩৩.৬৪ |
মুশফিকুর রহিম | ০৭ | ০৭ | ১২৭ | ৬০* | ০২ | ২১.১৭ | ১২০.৯৫ |
লিটন দাস | ০৭ | ০৭ | ১০৬ | ৩৮ | ০১ | ১৫.১৪ | ১৩০.৮৬ |
সাকিব আল হাসান | ০৪ | ০৪ | ৯৬ | ৭০* | ০১ | ৩২ | ১৩৭.১৪ |
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টাইগার বোলারদের পারফরম্যান্স:
বোলার | ম্যাচ | মোট উইকেট | ২/৩ উইকেট | সেরা বোলিং | মোট ওভার | ইকোনমি রেট | বোলিং গড় |
শফিউল ইসলাম | ০৫ | ০৮ | ২/১ | ৩/৩৬ | ১৮ | ৮.৩৯ | ১৮.৮৮ |
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন | ০৪ | ০৭ | ০/১ | ৪/৩৩ | ১৬ | ৬ | ১৩.৭১ |
আমিনুল ইসলাম বিপ্লব | ০৪ | ০৬ | ৩/০ | ২/১৮ | ১৪ | ৭ | ১৬.৩৩ |
সাকিব আল হাসান | ০৪ | ০৪ | ১/০ | ২/১৮ | ১৬ | ৭.৪৪ | ৫৬.৫৪ |
মুস্তাফিজুর রহমান | ০৭ | ০৪ | ১/০ | ২/৩৮ | ২৪.৪ | ৮.৮ | ৫৪.২৫ |
ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ে শতকরা হার যথাক্রমে ৩৫ এবং ৫০। তবে টাইগার ক্রিকেট দলের জন্য সব থেকে লজ্জাকর বিষয় হচ্ছে ২০১৯ সালে খেলা ৫টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি বাংলাদেশ। যদি আরও একটু বেশি পর্যালোচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে এ বছরটি টাইগারদের টেস্ট ক্রিকেটে একটি অন্ধকার বছর। পুরো বছর জুড়ে একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা তো মেলেইনি বরংচ বছর জুড়ে খেলা পাঁচটি টেস্টের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ৪টি ম্যাচে আর বাকি একটি ম্যাচে সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে ২২৪ রানে।
২০১৯ সালে খেলা পাঁচটি টেস্ট ম্যাচের ১০টি ইনিংসে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। আর টাইগার ব্যাটসম্যানদের লজ্জকর বিষয় হচ্ছে এই ১০ ইনিংসের মধ্যে একটি ইনিংসেও দলগত রান ৩০০’র গণ্ডি পেরুতে পারেনি তারা। অবশ্য দলগতভাবে এক ইনিংসেও ৩০০ রান করতে না পারলেও ২০১৯ সালে ১০ ইনিংসে ৩০০’র গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র একজন টাইগার ব্যাটসম্যান। বোলারদের পারফরম্যান্সও ব্যাটসম্যানদের মতোই হতাশাজনক।
টেস্টে টাইগার ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স:
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | ইনিংস | মোট রান | সর্বোচ্চ রান | ৫০/১০০ | ব্যাটিং গড় |
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ | ০৫ | ১০ | ৩৩২ | ১৪৬ | ১/১ | ৩৬.৮৯ |
তামিম ইকবাল | ০২ | ০৪ | ২৭৮ | ১২৬ | ২/১ | ৬৯.৫০ |
সৌম্য সরকার | ০৩ | ০৬ | ২৩০ | ১৪৯ | ০/১ | ৩৮.৩৩ |
মুশফিকুর রহিম | ০৩ | ০৬ | ২০৪ | ৭৪ | ২/০ | ৩৪ |
সাদমান ইসলাম | ০৫ | ১০ | ১৯৯ | ৪১ | ০/০ | ১৯.৯০ |
টাইগার বোলারদের পারফরম্যান্স:
বোলার | ম্যাচ | মোট উইকেট | ৪/৫ উইকেট | সেরা বোলিং | বোলিং গড় |
তাইজুল ইসলাম | ০৪ | ০৯ | ১/০ | ৪/১১৬ | ৫৩.৬৭ |
আবু জায়েদ রাহী | ০৪ | ০৯ | ১/০ | ৪/১০৮ | ৪২.৪৪ |
মেহেদী হাসান মিরাজ | ০৪ | ০৬ | ০/০ | ২/৩৫ | ৭৯.৮৩ |
সাকিব আল হাসান | ০১ | ০৫ | ০/০ | ৩/৫৩ | ২৩.৪০ |
এবাদত হোসেন | ০৪ | ০৫ | ০/০ | ৩/৯১ | ৭৯.৪০ |
পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডারটি যেন এক অন্ধকার বছর পার করেছে। ২০১৯ সাল যেখানে প্রাপ্তির খাতায় কেবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়। আর উইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। তবে গড়পড়তা হিসাব করলে প্রাপ্তির থেকে হারানোটাই বেশি টাইগারদের। তবে টেস্ট ক্রিকেটে উনিশ পেরিয়ে কুড়িতে পা রাখা বাংলাদেশ দলের জন্য সব থেকে লজ্জাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটের রাজসিক ফরম্যাটের ভরাডুবি। ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে পুরো দলকেই। আর ব্যর্থতার গ্লানি বইতে হবে সকলকে।