Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর কতদিন উদীয়মান হয়েই থাকবেন সৌম্য?


৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:২০

সময়টা ২০১৪’র ডিসেম্বর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাঁ হাতি এক তরুণকে দেখা গেল বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে নামতে। সেখানেই শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি তার। সৌম্য সরকার এরপরই সুযোগ পেলেন ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওডিআই বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে সুযোগ মিলল এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে। কাজে লাগালেন সে সুযোগটাও। এরপর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রায় নিয়মিত মুখই বনে গিয়েছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালটা স্বপ্নের মতো কেটেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। একে একে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো হেভিওয়েট দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে মেতেছিল সিরিজ জয়ের উল্লাসে। আর এই সিরিজ জয়ে সামনে থেকে যে ক’জন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সৌম্য সরকার অন্যতম।

ওই বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়টা এখন পর্যন্ত সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। আর তার ব্যাটে ভর করেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিল বাংলাদেশ দলও। সে সময় সৌম্যর বয়স ছিল ২২ বছর। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে সে সময় তরুণ এক উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবেই বাংলাদেশ দলে সুযোগ মিলেছিল তার।

এরপর পেরিয়ে গেছে একে একে পাঁচটি বছর। এখনও বাংলাদেশ দলে নিজেকে যেন ঠিক মতো থিতু করতে পারলেন না সৌম্য। এরপর থেকে তার পারফরম্যান্স গ্রাফটা কেবল নিম্নমুখীই। ২০১৫ সালে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন ঠিক তার বিপরীতভাবেই নিজেকে নিয়ে গেছেন একদম তলানির দিকে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ এবং তারপর সে বছরজুড়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে সৌম্য খেলেছিলেন মোট ১৫টি ম্যাচের ১৫ ইনিংস। যেখানে ৫১.৬৯ গড়ে নামের পাশে যোগ করেছিলেন ৬৭২ রান। আর সেই সঙ্গে ১০২.২৮ স্ট্রাইক রেটে ৪টি অর্ধশতকের সঙ্গে সঙ্গে ছিল একটি শতকও।

এরপর ২০১৬’তে ৪টি, ২০১৭’তে ১২টি, ২০১৮’তে ৬টি আর ২০১৯ সালে খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ। তবে নামের পাশের পরিসংখ্যানটির উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। যেখানে প্রথম বছরেই ৪টি অর্ধশতক আর একটি শতক ছিল, সেখানে পরের চার বছরে ৭টি অর্ধশতক আর মাত্র একটি শতক। আর পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ৫৫ ম্যাচের ৫৪ ইনিংসে ৩৩.৮৮ গড়ে করেছেন মাত্র ১৭২৮ রান। যেখানে প্রথম বছরেই ছিল ৬৭২ রান। অর্থাৎ পরের চার বছরে করেছেন মাত্র ১০৩৬ রান। যে সম্ভাবনা নিয়ে সৌম্য শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার, ক্রমশ নিম্নমুখী গ্রাফে সেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু দেখছেন ক্রিকেটভক্তরা।

বিজ্ঞাপন

ঠিক যেই সময়ে সৌম্যের যাত্রা শুরু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে, প্রায় কাছাকাছি সময়েই ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের আরও দুই ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘটেছে অভিষেক। সেই দু’জন যথাক্রমে জেসন রয় ও বাবর আজম। এই দু’জনের অভিষেক বরং সৌম্যরও প্রায় ছয় মাস পরে। তবে এর মধ্যেই নিজেদের বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় নিয়ে গেছেন এই দুই ক্রিকেটার। অন্যদিকে এখনও যেন উদীয়মান হয়েই রয়ে গেছেন সৌম্য। জেসন রয়ের ইংলিশদের জার্সিতে অভিষেক ঘটে ২০১৫ সালের মে মাসে, একই মাসে শুরু হয় বাবর আজমের ক্যারিয়ারও।

ক্যারিয়ারের শুরুটা সৌম্য সরকার যেমন উড়ন্ত করেছিলেন এই দুই ক্রিকেটারের কেউই তেমন করতে পারেননি। বরং তাদের শুরুটা ছিল বেশ সাদামাটা। তবে নিজেদের বদলেছেন প্রতিবছরই। ধাপে ধাপে প্রতিবছর নিজেদের পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ করেছেন তারা।

আন্তর্জাতিক ওডিআই ম্যাচের দিক পর্যালোচনা করলে দেখা মেলে শুরুটা সৌম্যর মতো উজ্জ্বল না হলেও ঠিকই দলে নিজেদের উজ্জ্বল ছাপ রেখেছেন বাবর আজম ও জেসন রয়। দলের অপরিহার্য অংশেও পরিণত হয়েছেন তারা। অথচ সৌম্য সরকার এখনো বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে একাদশে নিজেকে অপরিহার্য অংশ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। সেখানে বাবর আজম আর জেসন রয় বিশ্বসেরাদের কাতারে নিজেদের নিয়ে গেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ বছর নিয়ে খেলেছেন মোট ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে এখনো জাতীয় দলের বাইরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের হয়ে তাকে খেলতে হচ্ছে দেশের পতাকায়। এ বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ইমার্জিং এশিয়া কাপেও বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেছেন সৌম্য সরকার। নেপালে চলমান এসএ গেমসের অনূর্ধ্ব ২৩ স্কোয়াডেও রয়েছেন তিনি। এসব টুর্নামেন্টের দলগুলো মূলত গড়ে তোলা হয় উদীয়মান ক্রিকেটারদের নিয়ে। সৌম্য কি তবে এখনো উদীয়মান ক্রিকেটারের তকমাই বয়ে বেড়াচ্ছেন? আর কত সময় তার লাগবে এই উদীয়মান তকমা ঘোচাতে?

এই তিন ব্যাটসম্যানের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলেই সব প্রশ্নের উত্তর বেরিয়ে আসবে। সৌম্যর অভিষেকের প্রায় ছয় মাস পর অভিষেক হলেও তার থেকে বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বাবর এবং রয়। আর কেবল ম্যাচ সংখ্যার দিক থেকেই নয়; সৌম্যর থেকে এই দুই ব্যাটসম্যান এগিয়ে আছে সব দিক থেকেই। ওয়ানডে ছাড়া ছাড়া টেস্টে বাবরের থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছেন সৌম্য, তবে চলতি বছরেই টেস্টে অভিষেক ঘটেছে জেসন রয়ের। আর ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে বাবর ও রয়ের সঙ্গে সৌম্যর তুলনাটাই যেন চলে না।

ব্যাটসম্যান সাল ম্যাচ ইনিংস মোট রান ব্যাটিং গড় স্ট্রাইক রেট ৫০/১০০
সৌম্য সরকার ২০১৫ ১৫ ১৫ ৬৭২ ৫১.৬৯ ১০২.২৮ ৪/১
২০১৬ ৩২ ৮.০০ ৬০.৩৮ ০/০
২০১৭ ১২ ১১ ২৪৩ ২৪.৩০ ৮৯.০১ ২/০
২০১৮ ২৫৫ ৪২.৫০ ১০৪.৫১ ১/১
২০১৯ ১৭ ১৭ ৫০৬ ২৯.৭৬ ৯৯.৬১ ৪/০
৫৫ ৫৪ ১৭২৮ ২৯.৭৬ ৯৮.৬১ ১১/২
বাবর আজম ২০১৫ ২৩০ ৩৮.৩৩ ৮৯.১৫ ৩/০
২০১৬ ১১ ১১ ৬৫৬ ৫৯.৬৪ ৯৫.২১ ২/৩
২০১৭ ১৮ ১৭ ৮৭২ ৬৭.০৮ ৭৯.২৭ ২/৪
২০১৮ ১৮ ১৭ ৫০৯ ৩৬.৩৬ ৮১.১৮ ২/১
২০১৯ ২০ ২০ ১০৯২ ৬০.৬৭ ৯২.৩৯ ৬/৩
৭৪ ৭২ ৩৩৫৯ ৫৪.১৮ ৮৭.১১ ১৫/১১
জেসন রয় ২০১৫ ১৫ ১৪ ৪৬২ ৩৩.০০ ৯৮.৩০ ৩/১
২০১৬ ১৭ ১৭ ৬৪৭ ৪৩.১৩ ১০৮.০১ ২/২
২০১৭ ১৬ ১৬ ৫৩৩ ৩৩.৩১ ১০৩.৯০ ৬/০
২০১৮ ২২ ২২ ৮৯৪ ৪০.৬৪ ১০৫.০৫ ১/৩
২০১৯ ১৪ ১২ ৮৪৫ ৭০.৪২ ১১৮.১৮ ৬/৩
৮৪ ৮১ ৩৩৮১ ৪২.৮০ ১০৭.৪০ ১৮/৯

উদীয়মান ক্রিকেটার জেসন রয় বাবর আজম ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর