অস্ট্রেলিয়ার দশকের সেরা একাদশেও জায়গা মিলেছে সাকিবের
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৩৪
শেষ হয়ে যাচ্ছে আরও একটি দশক। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে উত্থান পতন অনেক ঘটনা ঘটেছে ক্রিকেটে। উত্থিত হয়েছে নতুন ক্রিকেট সম্রাটের, ব্যাট হাতে ছড়িয়ে ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে বল হাতে বিধ্বংসী হতে দেখা গেছে অনেক গতি তারকাকে। আর বল হাতে ঘূর্ণি জাদুতেও মোহিত করতে দেখা গেছে অনেক স্পিনারকে। এই দশকের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে কিছুদিন আগেই ওডিআই একাদশ ঘোষণা করেছিল ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন আর এবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও ঘোষণা করল এই দশকের সেরা ওডিআই একাদশ। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন একমাত্র ক্রিকেটার এবং অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসান।
উইজডেনের মতো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই তালিকার সেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হয়েছেন বিরাট কোহলি। আর সেরা একাদশে কোহলি সঙ্গে আছেন আরও দুই ভারতীয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া থেকে জায়গা করে নিয়েছেন কেবল একজন ক্রিকেটার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জায়গা পেয়েছেন দুইজন, আর একজন করে জায়গা করে নিয়েছেন ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে। তবে দশকের সেরা একাদশে জায়গা হয়নি পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ক্রিকেটারের।
একনজরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দশক সেরা ওয়ানডে একাদশ: রোহিত শর্মা (ভারত), হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা), বিরাট কোহলি (ভারত), এবিডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা), জশ বাটলার (ইংল্যান্ড), সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ), মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত, অধিনায়ক), লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা), মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া), ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড) এবং রশিদ খান (আফগানিস্তান)।
রোহিত শর্মা: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দশকসেরা একাদশের ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের নিয়মিত ওপেনার রোহিত শর্মা। এই দশকে রোহিত শর্মা খেলেছেন ১৭৯টি ওয়ানডে ম্যাচ। যেখানে সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তিনি। ওয়ানডে’তে ৫৩.৫০ গড়ে নামের পাশে যোগ করেছেন ৮১৮৬ রান। যেখানে ভারতীয় তো বটেই, ক্রিকেটের ইতিহাসের এক ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসও খেলেছেন তিনি।
হাশিম আমলা: উইজডেনের দশকের সেরা একাদশে ওপেনার হিসেবে রোহিত শর্মা সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে এবার নিজ দেশের দশকের সেরা একদশেই জায়গা হয়নি তার। আর ওয়ার্নারকে পেছনে ফেলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দশকের সেরা ওপেনারের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা। চলতি দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে ১৫৯টি ম্যাচ খেলেছেন আমলা। আর ৪৯.৭৬ গড়ে নামের পাশে রান যুক্ত হয়েছে ৭২৬৫। আরও আছে ২৬ টি শতকের সঙ্গে ৩৩টি অর্ধশতকও। আর তাই তো যোগ্য সঙ্গী হিসেবেই রোহিত শর্মার সঙ্গে দশকের সেরা ওপেনার নির্বাচিত হয়েছেন হাশিম আমলা।
বিরাট কোহলি: ব্যাটিং পজিশন হিসেবে তিন নম্বরে জায়গাটা কে পাবেন সেটি আগে থেকেই অনুমিত ছিল। এই পজিশনে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির থেকে সেরা পারফর্মার কাগজে কলমে ছিলেন না কেউই। এই দশকে খেলা বিরাট কোহলি থেকে সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ? ব্যাট হাতে তার সমতুল্য পারফরম্যান্স করতে দেখা যায়নি কাউকেই। এই দশে ২২৬টি ওডিআই ম্যাচ খেলা কোহলি নামের পাশে যুক্ত করেছেন ১১ হাজার ৪০ রান। যেখানে ছিল ৪২টি শতক আর ৬০.৬৫ গড়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১৮৩ রানের। শতক হাঁকানোর দিক দিয়ে কোহলি কেবল পিছিয়ে আছেন কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের থেকে।
এবি ডি ভিলিয়ার্স: চলতি দশকের শেষ দিকে ছিলেন দল থেকে বাইরে। দলে থাকলে হয়ত ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল অনেক ব্যাটসম্যানকেই। তবে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ভিলিয়ার্স তাতেই নিশ্চিত সেরা একাদশের জায়গা। এই দশকে খেলা ১৩৫ ওয়ানডে’তে ৬৪.২০ গড়ে এবি করেছেন ৬৪৮৫ রান।
জশ বাটলার: চলতি দশকে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জশ বাটলার। ১৪২ ওয়ানডে খেলা এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান করেছেন ৩৮৪৩ রান। সেই সাথে জায়গা করে নিয়েছেন উইজডেনের সেরা একাদশে।
সাকিব আল হাসান: উইজডেনের দশক সেরা স্কোয়াডে পূর্ণতা আনেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জান বাংলাদেশি এই অলরাউন্ডার দশক সেরা স্কোয়াডে এক মাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন। গেলো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স এবং সেই সাথে স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করায় তার স্থান হয় দশক সেরা স্কোয়াডে। এই দশকে খেলা ১৩১ ওয়ানডে ম্যাচ সাকিব আল হাসান সংগ্রহ করেছেন ৪২৭৬ রান, যেখানে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ছিল ১২৪ আর ব্যাটিং গড় ছিল ৩৮.৮৭। নামের পাশে এই সময়ে পাঁচটি শতক আর ৩৫টি অর্ধশতকও যোগ করেছেন সাকিব আল হাসান। কেবল ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন সাকিব। বল হাতে ১৭৭ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, যেখানে বোলিং গড় ছিল ৩০.১৫ আর সেরা বোলিং ফিগার ছিল ২৯ রানে ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে এই দশকে কেবল ২বারই এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করতে পেরেছেন সাকিব। তবে এই দশকে ব্যাট আর বল উভয় দিক বিবেচনা করলে সাকিবের কাছেও ঘেষতে পারবে না অন্য কোনো অলরাউন্ডার বলছে পরিসংখ্যানই।
মহেন্দ্র সিং ধোনি: একদশের উইকেটরক্ষক এবং সেই সঙ্গে অধিনায়কের অভাব পূরণে দলে জায়গা হয় ভারতের উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। চলতি দশকে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স তাকে স্কোয়াডে জায়গা করে দেয়। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ১৭০ টি ক্যাচের পাশাপাশি ৭২ টি স্ট্যাম্পিং করেছেন চলতি দশকে এই উইকেট কিপার।
লাসিথ মালিঙ্গা: লংকান এই বোলার দলে ঠাই পান তার বিধ্বংসী বোলিংয়ের জন্য। ৬/৩৮ সেরা বোলিং ফিগারে নিয়েছেন চলতি দশকে ২৪৮ উইকেট। সেই সাথে যোগ হয়েছে ২০১১ সালে করা দুই হ্যাট্রিক।
মিচেল স্টার্ক: বল হাতে অজি পেসার মিচেল স্টার্কের এগিয়ে আসা। এই আগানোই অনেক ব্যাটসম্যানের ভীত নড়বরে করে দেয়। ২০.৯৯ গড়ে গেলো ১০ বছরে খেলেছেন ৮৫ ওয়ানডে, নিয়েছেন ১৭২ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার চলতি দশকের তার ৬/২৮।
ট্রেন্ট বোল্ট: কিউই এই বোলার উপরের দুই জনের চেয়েও বেশি তাণ্ডবলীলা চালাতে সমর্থ। যে কোনো সময় যে কোনো ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম বোল্ট। আর সে জন্যই দলে স্থান পেয়েছেন তিনি। তার দশকের বোলিং পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৮৯ ওয়ানডে খেলে ২৫.০৬ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৬৪ টি। যেখানে রয়েছে এক ম্যাচে ৩৪ রানে ৭ উইকেট নেবার ঘটনাও।
রশিদ খান: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দশকের সেরা একাদশে সব থেকে বড় চমক আফগানিস্তানের তরুণ লেগস্পিনার রশিদ খানের অন্তর্ভূক্তি। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে রশিদ খানের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সেই থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে খেলেছেন ৭১টি ওডিআই ম্যাচ আর নামের পাশে যুক্ত করেছেন ১৩৩টি উইকেট। সেটিও কিনা মাত্র ৪.১৬ ইকোনমি রেটে। নামের পাশে আরও আছে ৪বার পাঁচ উইকেটের রেকর্ড আর সেরা বোলিং ফিগার মাত্র ১৮ রানে ৭ উইকেট। যদিও কিছুটা বিতর্ক ছিল রশিদ খানের ১৩৩টি উইকেটের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে। তবে তারপরেও তাকে দলে অন্তর্ভূক্ত করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
অলরাউন্ডার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দশক সেরা একাদশ সাকিব আল হাসান