বল বয় থেকে ম্যাচ সেরা গোলরক্ষক হওয়া সুজন ছিলেন জাত স্ট্রাইকার!
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:০৪
ঢাকা: বাংলাদেশের ফুটবলের খবর যারা টুকিটাকি রাখেন তারা জেনে থাকবেন মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) টিভিএস ফেডারেশন কাপে হ্যাভিওয়েট শেখ রাসেলের বিপক্ষে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই বাঁচিয়েছেন একজন ‘অখ্যাত গোলরক্ষক’। জাতীয় দলের গোলরক্ষক আশরাফুল রানার উপস্থিতিতেও ম্যাচ সেরা ফুটবলারের পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে রাজবাড়ীর ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার।
বলছি মোহাম্মদ সুজনের কথা। বলছি একজন বল বয় থেকে দেশের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হওয়ার গল্পের কথা। যিনি বল বয় হিসেবে কাজ করতেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। আর স্বপ্ন দেখতেন জাত স্ট্রাইকার হওয়ার। এই স্টেডিয়ামেই বল বয় থেকে স্ট্রাইকার, এরপর জাত গোলরক্ষক হওয়ার গল্প শোনাবো আজ।
রাজবাড়ীর এই ফুটবলারের বেড়ে ওঠা রাজধানীতেই। বাবা মো. ইউসুফ জমেদ্দার একজন ব্যবসায়ী আর মা বেগম কুলসুম জমেদ্দার পাক্কা গৃহিনী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সুজন বাবা-মায়ের বড় ছেলে। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন মনের কোণে জেগে উঠে মূলত তার মামাকে দেখে। জাতীয় দলের ফুটবলার সোহেল রানাকে (ঢাকা আবাহনী) দেখেই মূলত ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা জাগে সুজনের, ‘সোহেল রানা সম্পর্কে আমার মামা। তাকে দেখেই আসলে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন জাগে।’
অবাক হওয়ার মতো বিষয় একসময় স্ট্রাইকার হিসেবে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সুজন। খেলতেন ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’ অর্থাৎ জাত স্ট্রাইকার হিসেবেই। শোনালেন স্ট্রাইকার থেকে গোলরক্ষক হওয়ার গল্পটিও, ‘আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতাম ছোটবেলায়। একটা টুর্নামেন্টে ফাইনালে দলের গোলরক্ষক ইনজুরিতে পড়ার পর আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয় সোহেল মামা। এই টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে প্রত্যেক ম্যাচেই গোল পেয়েছিলাম। ফাইনাল ম্যাচে গোলরক্ষক হিসেবে দাঁড়িয়ে যাই। তার কথা শুনেই মূলত গোলরক্ষক হিসেবেই খেলতে শুরু করি।’
এরপর স্থানীয় কোচ ইব্রাহিম খলিল কালার হাত ধরে ফুটবলের হাতেখড়ি সুজনের। পেশাদার গোলরক্ষক হওয়ার পেছনে কারিগর ছিলেন এই কোচ। সেই সঙ্গে পেশাদার লিগে অভিষেকটা তার হাত ধরেই আসা। সুজনের কথায়, ‘ওনার নামে যতো কম বলবো ততই কম হবে। উনি আমার সুখে-দুখে সবসময় পাশে ছিলেন। ওনার দ্বারাই মূলত পাইওনিয়ার লিগে খেলতে গিয়েছিলাম। ২০১০ সালে আরামবাগের সেকেন্ড গোলরক্ষক হিসেবে ছিলাম। ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত গোলরক্ষক হিসেবে খেলতে শুরু করলাম। এরপর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে বিয়ানিবাজার ক্লাব, ঢাকা ইউনাইটেড তারপর অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে খেলে মোহামেডানে যোগ দেই ২০১৫ সালে। এরপর মোহামেডান থেকে শেখ জামালের হয়ে তিনবছর খেলে আবার মোহামেডানে ফিরে আসি।’
পাইওনিয়ার লিগ খেলার সময়ই বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ডাক পান সুজন। জাতীয় দলের অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, অ-১৯ ও অ-২৩ দলে গ্লাভস হাতে গোলপোস্টের নিচে বার সামলিয়েছেন এই গোলরক্ষক। সেই সময়ের এক সুখস্মৃতি আওড়ালেন সুজন, ‘যখন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছিলাম আমরা কুয়েতকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলাম। ওই ম্যাচে যদি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার দিতো তাহলে হয়তো আমিই পেতাম।’
ফুটবলার হওয়ার আগে বল বয় হিসেবেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাজ করেছেন সুজন। ২০১১ সালের সেই আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচেও বল বয় হিসেবে কাজ করেছিলেন সেই গল্পটাও শোনালেন তিনি, ‘ফুটবলার হওয়ার আগে বল বয় হিসেবে কাজ করতাম। মেসিদের ম্যাচেও আমি বল বয় ছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ফুটবলার হয়েছি। তবে একটা বিষয় বল বয় হিসেবে থাকার সময় ফুটবলের অনেক কিছু শিখেছি। পজিশনিং থেকে শুরু করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।’
সুজন এখন স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার। তবে তার আগে ক্লাবে নিয়মিত গোলরক্ষক হয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণও দিতে চান সুজন, ‘আমি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করবো এটাই স্বপ্ন। জেগে জেগে বা ঘুমের ঘোরেও এই স্বপ্ন দেখি।’ তার আগে অবশ্য নিজের ছোট ভাই রেদোয়ান হোসেইন পাপ্পু (সাইফ স্পোর্টিং) জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। এতে অবশ্য আক্ষেপের থেকে গর্ব হিসেবেই দেখেন সুজন, ‘এমন ছোট ভাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার ছোট ভাই জাতীয় দলে ডাক পায়। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার।’
নিজেও জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন সুজন। তার আগে থিতু হতে চান গোলরক্ষক হিসেবে। অবশ্য এই ম্যাচের একদিন আগেও জানতেন না যে ম্যাচে খেলবেন, ‘কোচ সিন লেন ম্যাচের ঘণ্টা দুয়েক আগে আমাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। আমি নিজেও জানতাম না নামবো কি না। কেননা এখানে অভিজ্ঞ হিমেল ভাই আছেন গোলরক্ষক হিসেবে। সুযোগ পেয়ে দলকে সাহায্য করতে পেরে ভাল লাগছে।’
পাপ্পু ফুটবলার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মোহাম্মদ সুজন শেখ রাসেল হিমেল