গেলো দশকে বিশ্ব ক্রিকেটের আলোচিত দশ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:০০
ক্রিকেটাঙ্গন থেকে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। সেই সঙ্গে পরিসমাপ্তি ঘটেছে আরও একটি দশকেরও। ঘটনাবহুল এই দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছে নতুন মুখ, হারিয়েছি আমরা কিংবদন্তীদেরও। ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, মাঠের বাইরে নানান অঘটন, ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা, নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ওয়ানডেতে প্রথম ডবল সেঞ্চুরি, দিবা রাত্রির টেস্ট, গোলাপি বলের আগমন সব মিলিয়ে বেশ জমজমাটই ছিলো এবারের দশকটি। নতুন দশকের শুরুর লগ্নে চলুন দেখে আসি সদ্য শেষ হওয়া দশকের আলোচিত ১০ টি বিষয় যা বেশ সাড়া ফেলেছিলো ক্রিকেট মহলে।
ফিক্সিং কেলেঙ্কারি:
চলতি দশকটি শুরুই হয়েছিলো ফিক্সিং কেলেঙ্কারি দিয়ে। ২০১০ সালের আগস্টে ইংল্যান্ড সফরকালীন পাক পেসার মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমিরের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিলো গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাটের পরামর্শে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজিকরদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নো বল করেছিলেন এই দুই বোলার।
হয়তো এই ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে যেত যদি না এই দুইজন ব্রিটিশ পত্রিকা নিউজ দ্যা ওয়ার্ল্ডের এক সাংবাদিকের স্ট্রিং অপারেশনের শিকার না হতেন। ছদ্মবেশী এই সাংবাদিকের ফাঁদে পা দিয়ে মাজহার নামের এই জুয়াড়ি তাদের দিয়ে নো বল করান।
ঘটনাটি প্রকাশিত হলে তদন্তের আওতায় আসেন এই তিন ক্রিকেটার। তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হয়ে ৫ বছর নিষিদ্ধ হন মোহাম্মদ আমির, ৭ বছরের (২ বছরের স্থগিতাদেশ) নিষেধাজ্ঞা পান মোহাম্মদ আসিফ এবং ১০ বছরের (৫ বছর স্থগিতাদেশ) জন্য নিষিদ্ধ হন সালমান বাট। সেই সাথে খাটতে হয় জেলও।
এরপর ২০১৩ সালে বিপিএলে ফিক্সিংয়ের কারণে ৫ বছরের (২ বছর স্থগিতাদেশ) জন্য নিষিদ্ধ হন বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৫ সালে প্রোটিয়া পেসার লওয়াবো সোসোবে এই ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে নিষেধাজ্ঞা পান ৮ বছরের জন্য।
এই দশকেই ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে আজীবনের জন্য ক্রিকেটাঙ্গন থেকে নিষিদ্ধ হন পাক ক্রিকেটার দানিশ কেনেরিয়া।
সর্বশেষ ১০১৯ সালে ফিক্সিং না করেও জুয়াড়ির তথ্য গোপনের কারণে ক্রিকেট থেকে ২ বছরের (এক বছর স্থগিতাদেশ) জন্য নিষিদ্ধ হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
অবসরে গেলেন যারা:
যাচ্ছে দশকে আমরা ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে দেখেছি বেশ কিছু ক্রিকেটারকে। ক্রিকেটাঙ্গন থেকে বিদায় নেয়া ক্রিকেটাররা হলেন-
- বাংলাদেশের তাপস বৈশ্য, রাজিন সালেহ, নাজমুল হোসেন, সৈয়দ রাসেল, আফতাব আহমেদ;
- নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ড্যানিয়েল ভেটোরি, ক্রিস মার্টিন, জিমি হাউ, গ্রান্ট ইলিওট;
- অজি ক্রিকেটার মাইকেল ক্লার্ক, মিচেল জনসন, শেন ওয়াটসন, ব্রাড হ্যাডিন, রিকি পন্টিং, ব্রেট লি, মাইকেল হাসি, ব্র্যাড হজ;
- ভারতের রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, বিরেন্দ্রর শেওবাগ, জহির খান, গৌতম গম্ভির, আর পি সিং, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, মুরালি কার্তিক, আশিস নেহরা;
- ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক, কেভিন পিটারসন, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, গ্রায়েম সোয়ান, সাইমন জোনস, স্টিভ হারমিসন;
- দক্ষিণ আফ্রিকার গ্র্যায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস, মার্ক বাউচার, মরনে মরকেল, কাইলি অ্যাবোট, হাশিম আমলা, ইমরান তাহির, জেপি ডুমিনি, ডেল স্টেইন, জোহান বোথা;
- পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, মিসবাহ উল হক, ইউনুস খান, শোয়েব মালিক, সাঈদ আজমল, আবদুল রাজ্জাক, মোহাম্মদ হাফিজ;
- শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, রঙ্গনা হেরাথ, লাসিথ মালিঙ্গা, নওয়ান কুলাসেকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন;
- ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডুয়াইন ব্রাভো, ড্যারেন সামি, রমনারেশ সারওয়ান, ডুয়াইন স্মিথ;
- জিম্বাবুয়ের হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন টেইলর বিদায় নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
না ফেরার দেশে যে ক্রিকেটাররা:
শেষ হতে যাওয়া এই দশকে আমাদের ছেড়ে ছেড়ে গেছেন বেশ কিছু ক্রিকেটার। তাদের ভেতর রয়েছেন অজি ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজ। ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর ম্যাচ চলাকালীন সময় শন অ্যাবটের বাউন্সার মাথায় আঘাত হানে হিউজের। তৎক্ষণাৎ মাঠে জ্ঞান হারান এই ক্রিকেটার। চলে যান কোমায়। সেখান থেকে আর ফেরেননি তিনি। ২৭ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ২৬ তম জন্মদিনের তিন দিন আগে চলে যান ২৫ বছর বয়সি এই অজি ব্যাটসম্যান।
এই দশকে আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন সাবেক ইংলিশ কিংবদন্তি বব উইলিস। ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ৭০ বছর বয়সে মারা যান এই সাবেক ইংলিশ পেসার।
উইলিসের বিদায়ের রেশ না কাটতেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান সাবেক উইন্ডিজ কিংবদন্তি বেসিল বুচার। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ফ্লোরিডায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক এই উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান।
বিশ্ব ক্রিকেটে ‘বিগ থ্রি’র উত্থান এবং আধিপত্যের বিস্তার:
২০১৪ সালে ক্রিকেটের তিন মোড়লের (ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড) সমন্বয়ে উত্থান হয় বিগ থ্রি’র। এই তিন মোড়লের আইসিসির আর্থিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব বেশ বড় রকমের কাপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলো ক্রিকেট বিশ্বে। তাঁরা দাবী করে বসে আইসিসির আইসিসির আয়ের বড় অংশই তাদের
প্রাপ্য। এমনকি টেস্টের কাঠামো পরিবর্তনেরও প্রস্তাব করেছিলো এই বিগ থ্রি। এরপর ২০১৭ সালে আইসিসি সভাপতির দায়িত্বে বসেন ভারতের শশাঙ্ক মনোহর। দায়িত্বে বসে আর্থিক নীতি সংশোধন করেন তিনি।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এই বিগ থ্রি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)- এর প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি আইসিসির কাছে প্রস্তাব করেন চার জাতির সমন্বয়ে সুপার সিরিজ আয়োজনের। কিন্তু আইসিসি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিলেও গাঙ্গুলি তার তিন দোস্যদের সাথে নিয়ে হুঙ্কার দেন আইসিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২০২১ সালে ভারতে আয়োজন করবে চার জাতির সুপার সিরিজের প্রথম আসর।
কিন্তু দুই দিন না পেরুতেই চাপে পড়ে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আইসিসির কাছে ব্যাপারটি প্রস্তাবের পর্যায় রয়েছে বলে জানান।
দিবা রাত্রির টেস্টের আবির্ভাব:
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর টেস্ট ক্রিকেটে আসে নতুন মাত্রা। চালু হয় গোলাপি বলে খেলা দিবা রাত্রির টেস্ট। প্রথমবারের মতো দিবা রাত্রির টেস্টে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় পায় তিন উইকেটে।
গোলাপী বলের টেস্টে প্রথম ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭ সালে তারা ইনিংস এবং ২০৯ রানে হারে। এটিই দিবা রাত্রির টেস্টে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার কোনো দলের।
২০১৫ থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দিবা রাত্রির টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচের ৫টিতেই জয় অজিদের। শ্রীলঙ্কা খেলেছে ৩ টি যার ভেতর ২টি জয় এবং একটি হার লঙ্কানদের।
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড উভয়ই খেলেছে ৩ টি করে ম্যাচ যেখানে দুই দলেরই জয় রয়েছে একটি করে। বাকি দুইটিতেই হারের স্বাদ পেয়েছে এই দুই দল। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যন্ড খেলেছে দুইটি করে ম্যাচ যেখানে তাদের রয়েছে একটি জয় এবং একটি হার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিবা-রাত্রির টেস্টে অর্জন ৩ ম্যাচে ৩ হার এবং জিম্বাবুয়ে তাদের একমাত্র গোলাপী বলের টেস্টে পেয়েছিল হারের স্বাদ।
১৪ টেস্টের সবগুলোতেই ফলাফল নিষ্পত্তি হয়েছে। নেই কোনো ড্রয়ের ইতিহাস। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ৬ টি ম্যাচে। যেখানে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস এবং ২০৯ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায় ইনিংস এবং ১২০ রানে।
এরপর ২০১৮ এর শুরুতে ইংলিশদের ইনিংস এবং ৪৯ রানে হারায় কিউইরা। ২০১৯ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্ট ইতিহাসে ৪র্থ বারের মত ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় অজিরা।
এই বছরই (২০১৯) বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে ভারত। আর বছর এবং এই দশকের শেষ ইনিংস জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস এবং ৪৮ রানে জয় পেয়েছিলো তাঁরা।
নারী দলের একটি মাত্র টেস্ট হয়েছে দিবারাত্রির। ২০১৭ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নারী দলের সেই ম্যাচটি হয়েছিল ড্র। এটিই দিবা-রাত্রির টেস্টের একমাত্র ড্র’র নজির।
ছেলেদের ওয়ানডেতে ডবল সেঞ্চুরির দর্শন লাভ:
বিদায় নেয়া দশকটিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ কিছু বড় ইনিংসের সাথে পরিচিত হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। দলীয় সর্বোচ্চের সাথে সাথে ছিলো বেশ কিছু ডবল সেঞ্চুরির ইনিংসও। ক্রিকেট বিশ্ব এই দশকেই পরিচিত হয়েছে পুরুষ ওয়ানডেতে ডবল সেঞ্চুরির সাথে। শুরুটা হয়েছিলো শূন্য থেকে। দশক শেষে যেটি ঠেকেছে ৮’য়ে গিয়ে।
২০১০ সালে ক্রিকেট বিশ্বকে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ২০০ স্কোরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে প্রথম দ্বিশতকের ইনিংস খেলেন এই কিংবদন্তী।
২০১১ সালে ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্বিশতক করেন টেন্ডুলকারের স্বজাতীয় বিরেন্দ্রর শেওবাগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৯ রানের স্কোর করে ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লেখান তিনি।
২০১৩ সালে ভারতের রোহিত শর্মা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০৯ রান দিয়ে শুরু করেন তার ডবল সেঞ্চুরির মিশন। এরপর একে একে করে খেলান আরও দুইটি দ্বিশতকের ইনিংস। রোহিতের সাথে এই তালিকায় যুক্ত হন মার্টিন গাপটিল, ক্রিস গেইল, ফখর জামান।
বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি:
চলতি দশকে বেশ কয়েকবার বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা দেখেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১০ সালের শুরুতেই বল টেম্পারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হন ইংলিশ বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসন। স্পাইক দিয়ে বল ঠেকানোর কারণে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হন।
একই বছর বলের গ্রিপ সরানোর চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির উপর। ক্যামেরার ধরা পড়ে তিনি বলের মাঝ বরাবর মুখ লাগিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন। সাথে সাথে বল পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় বলের কোনো পরিবর্তন আসে নি। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি বেশ হাস্যকর যুক্তি দিয়েছেন। বলেছিলেন বলের গন্ধ নিতে তিনি চেষ্টা করছিলেন।
এরপর ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্টে অজি বোলার পিটার সিডলের বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠে বল বিকৃত করার। অভিযোগ উঠে ম্যাচ রেফারির সাথে মিলে সিডল বল বিকৃত করেছেন। সেই ম্যাচে অজি বোলার ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। পড়ে আইসিসি তদন্ত করে তাদের অব্যহতি দেয়।
২০১৬ সালে বল বিকৃতের দায়ে চলতি দশকের প্রথম শাস্তির আওতায় আসেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেসময় চলমান দ্বিতীয় টেস্টে বলে চুইংগাম ঘষার দায়ে ম্যাচ ফির সম্পূর্ণটাই তাকে জরিমানা করা হয়। সেই সাথে তার নামের পাশে যোগ হয় তিন ডেমিরিট পয়েন্ট।
২০১৮ সালের ২৪ মার্চ। কেপটাউনে চলছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার তৃতীয় টেস্ট। সেই টেস্টে বল টেম্পারিং করতে গিয়ে ক্যামেরায় হাতে নাতে ধরা পড়েন অজি ক্রিকেটার ক্যামেরন বেনক্রাফট। বলের এক পাশে সিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষছিলেন এই ক্রিকেটার। এরপর তদন্তের পর জানা যায় তার সাথে জড়িত ছিলেন সাবেক অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার। এই ঘটনার জের ধরে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন স্মিথ-ওয়ার্নার। আর ছয়মাসের নিষেধাজ্ঞা আসে ক্যামেরন বেনক্রাফটের ওপর। তার কিছুদিন পরই পদত্যাগ করেন দলটি কোচ ড্যারেন লেহম্যানও।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে বল বিকৃত করায় চারটি টি-২০ থেকে নিষিদ্ধ হন উইন্ডিজ বোলার নিকোলাস পুরান।
নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন:
শেষ হতে যাওয়া দশকে ক্রিকেট বিশ্ব পায় নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে। এই দশকে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনটি। তিন বিশ্বকাপের শেষটিতে বিশ্ব দেখেছে নয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে।
দশকের শেষ বিশ্বকাপটি (২০১৯ সাল) নিজেদের ঘরেই রেখে দেয় ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডকে শ্বাসরুদ্ধকর সুপার ওভারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ক্রিকেটের জনক এই দেশটি।
বদলি খেলোয়াড়ের রীতি প্রবর্তন:
২০১৪ সালে মাথায় আঘাত পেয়ে ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর টেস্টে বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামানোর গুঞ্জন উঠে ক্রিকেট বিশ্বে। প্রথম ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মাথায় আঘাত জনিত কারণে মাঠে বদলি খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম চালু করে। এরপর তাদের অনুসরণ করে বাকি বোর্ডগুলোও এই নিয়ম চালু করে।
নিয়মানুসারে কোনো খেলোয়াড় মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়লে সেই খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে একই ধরনের খেলোয়াড় নামানো যাবে। অর্থাৎ ব্যাটসম্যান আহত হলে তার পরিবর্তে শুধু ব্যাটসম্যানই নামতে পারবে, বোলারের পরিবর্তে বোলারকেই নামাতে হবে বদলি হিসেবে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রা শুরু:
অনেক জল্পনা কল্পনার পর আইসিসি টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চালু দশকের শেষদিকে এসে চালু করেছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণে যাত্রা শুরু হয়েছে এই চ্যাম্পিয়নশিপের।
এই চ্যাম্পিয়নশিপেই প্রথমবারের মতো টেস্টের জার্সিতে নম্বরের প্রথা চালু করেছে আইসিসি। চ্যাম্পিয়নশিপে সব দলের সাথে খেলা হবে না সব দলের। প্রতিটি দল ঘরের মাঠে তিনটি ও প্রতিপক্ষের মাঠে তিনটি, মোট ছয়টি সিরিজ খেলবে। এবং পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল লর্ডসে ফাইনালে মুখোমুখি হবে সেরা খেতাবের লড়াইয়ে।
এইসব ঘটনা দ্বারাই শেষ হতে যাচ্ছে ঘটনা বহুল আরও একটি দশক। নতুন বছর, নতুন দশক, নতুন ঘটনার সাক্ষী হতে আর মাত্র কএক দিনের অপেক্ষা। ৩১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের সাথেই ক্ষণ গণনা শুরু হবে নতুন বছরের। সেই সাথে ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী হতে যাবে আরও নতুন নতুন ঘটনার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আলোচিত দশ দশক দিবা-রাত্রির টেস্ট বল টেম্পারিং বিগ থ্রি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সাকিব আল হসান স্পট ফিক্সিং স্পোর্টস স্পেশাল