বিশ্বকাপের দ্রুততম গোলদাতা এখন উবার চালক!
১৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:০৮
২০০২ বিশ্বকাপের কথা। চলছিলো দক্ষিণ কোরিয়া বনাম তুরস্কের মধ্যকার ম্যাচ। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজালেন রেফারি। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে দুর্দান্ত এক গোল করে বসলেন তুরস্কের কিংবদন্তী ফুটবলার হাকান শুকুর। ম্যাচ শুরুর ১০.৮১ সেকেন্ডে করা সেই গোল এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম গোল।
এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১৮ বছর। সেই সাথে শেষ হয়েছে ৪ টি বিশ্বকাপও। কিন্তু শুকুরের গড়া রেকর্ডটি রয়ে গেছে অক্ষুণ্ণ। ভাঙতে পারেননি কেউই।
বেশ ভালোই চলছিলো তাঁর ফুটবলের ক্যারিয়ার। কিন্তু কি এক অজানা কারণে জড়িয়ে পরলেন রাজনীতিতে। এরপরই দেখা শুরু করলেন মুদ্রার উল্টোপিঠ। সবকিছু হারিয়ে, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বর্তমানে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তিনি। কখনো উবারে গাড়ি চালিয়ে, কখনোবা বই বিক্রি করে দিনাতিপাত করছেন রেকর্ড গড়া এই ক্রীড়াবিদ।
ভাগ্য তাঁর বিপরীতে চলে যাওয়া শুরু করে ২০১১ সালে। সে সময় তিনি যোগ দিয়েছিলেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একেপি পার্টিতে। কিন্তু বছর দুইয়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তাঁর।
অবস্থা বেগতিক হবার কারণে ২০১৩ সালে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু মিটাতে পারছিলেন না এরদোয়ানের সাথে ঝামেলা। বছর খানেক পর আচমকাই টুইট করেন এরদোয়ানের বিপক্ষে। যার ফলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। তুরস্কের জনগণ চলে যায় তাঁর বিপক্ষে। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের শত্রুতে পরিণত হন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শুকুর। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্প্রতি স্পোর্টস বাইবেল নামক একটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন হাকান শুকুর। সেখানে তিনি মুখ খুলেছেন তাঁর বর্তমান অবস্থা নিয়ে।
স্পোর্টস বাইবেলকে তিনি বলেন, “ওরা আমার স্ত্রীর গায়ে পাথর ছুড়েছে, আমার সন্তানদের রাস্তায় অপমান করেছে। এমনকি আমি যখন দেশ ছেড়েছি তখন আমার বাবাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। আমার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এরদোয়ান আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “ক্যালিফোর্নিয়াতে আমি একটা ক্যাফে দিয়েছিলাম, কিন্তু কোথা থেকে অচেনা সব লোক এসে সেখানে ডোম্বরা (এক ধরনের টার্কিশ সংগীত) গাওয়া শুরু করলো। দেখতে দেখতে সেই ব্যবসাও আমার গুটাতে হলো। এখন আমি উবারে গাড়ি চালাই আর মাঝে মাঝে বই বিক্রি করি।”
ফুটবলের লম্বা ক্যারিয়ারে এই কিংবদন্তী ফুটবলার খেলেছেন ইন্টার মিলান, টোরিনো, গ্যালাতাসার এবং ব্ল্যাকবার্ন রোভারের মত ক্লাবে। গোল করেছেন ২৫০ এর বেশি। জাতীয় দলের জার্সি গায়েও অবদান কম ছিলো না তাঁর। ১২২ ম্যাচ খেলে গোল দিয়েছিলেন ৫১ টি। এই সব অর্জনই আজ ধূসর তাঁর বর্তমানের অবস্থার কাছে।