Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবারো সেমিতে স্বপ্ন ভঙ্গ বাংলাদেশের


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:১৬

ঢাকা: পঞ্চম মিনিটে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন মতিন মিয়া। আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক যখন দুই হাতে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেলেন, তখনই যেন আঁচ পাওয়া গেল দিনটা বাংলাদেশের নয়। হলোও তাই। আক্রমণে আধিপত্য দেখালেও ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতা আর নড়বড়ে রক্ষণের যুগলবন্দিতে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমি থেকে ছিটকে গেল স্বাগতিকরা। এনশিমিরিমানা জোসপিনের হ্যাটট্রিকে জেমি ডে’র শিষ্যদের থামিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখল বুরুন্ডি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা আফ্রিকান প্রতিপক্ষের কাছে হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। সবগুলো গোলই করেন দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার জোসপিন। এবারের আসরে এটি তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক।

চোট কাটিয়ে এ ম্যাচের একাদশে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তার উপস্থিতিতে দলের মাঝমাঠের শক্তি নি:সন্দেহে বাড়লেও তার ভুলেই প্রথম গোল হজম করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪২তম মিনিট। অথচ তার আগে প্রায় পুরোটা সময় বুরুন্ডির রক্ষণে ভীতি ছড়ায় টাইগাররা। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবারো গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে স্বাগতিকদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন জোসপিন। আর সেই সঙ্গে নিজের হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন এই ফরোয়ার্ড।

ম্যাচের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৫ মিনিটের মাথায় লঙ্কান ম্যাচের নায়ক মতিন মিয়া পায়ে চোট পেয়ে কেঁদে মাঠ ছাড়েন। ম্যাচের শুরুর মতোই পুরোটা সময়ই হতাশায় কেটেছে বাংলাদেশের।

মতিনের বদলে আক্রমণভাগ সামলে মাঠে নামেন সুফিল। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় দারুণ সুযোগ তৈরি করে জেমির শিষ্যরা। সুফিল বল থামিয়ে সুযোগ বুঝে গতির উপরে থাকা ইব্রাহিমকে এগিয়ে দেন। ডি বক্সের ভেতর থেকে বুলেট শট নিলেও জালের মুখ দেখতে পারেনি বাংলাদেশ।

আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকে সুফিল-জামালরা। এবার ২৩ মিনিটে ইব্রাহিমের থ্রু পাস সুফিলের কাছে পড়লে সেটি ফাঁকায় থাকা সাদকে ঠিক মতো ঠেলে দিতে পারেননি তিনি। গোল বঞ্চিত হওয়া শুরু হয় এখান থেকেই। পুরো ম্যাচই যেন গোল মিসের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছিল লাল-সবুজদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

গোল মিসের মহড়ায় এলোমেলো বাংলাদেশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় বুরুন্ডি। ৪৩ মিনিটে ব্লানচার্ডের পাস থেকে দারুণ শটে বল জালে জড়ান প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা জোসপিন। লিড নেয় অতিথি দল। গোলের চাপে প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আরো একটি গোল হজম করে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এবারেও ব্লানচার্ডের ক্রস থেকে হেড, বল রানাকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ান জোসপিন।

দ্বিতীয়ার্ধে পিছিয়ে থেকে শুরুতেই কৌশল পাল্টে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ৪৮ মিনিটেই ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। গোলকিপারকে একা পেয়েও বল গায়ে মেরে দেন সাদ উদ্দিন।

৬১ মিনিটে জামালের ক্রস সুফিলের হেডে জালে জড়াচ্ছিলই। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে বল কর্নারের বিনিময়ে জালমুক্ত করেন বুরুন্ডির গোলরক্ষক আইমি ফেলস। কর্নারেও দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। জামাল ভূঁইয়ার কর্নারটা রাফির হেড ছুঁয়ে বারে লেগে সমর্থকদের হতাশ করে বাইরে চলে যায়।

অল আউট খেলতে শুরু করে বাংলাদেশ। এগিয়ে থেকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করে বুরুন্ডিও। কাউন্টার অ্যাটাকে ৭০ মিনিটে হ্যাটট্রিক সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় জোসপিন। একা বল পেয়ে বারের পাশ দিয়ে বল মেরে দেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

ব্যবধান কমাতে উঠেপড়ে লাগে বাংলাদেশ। থেমে থাকেনি আক্রমণ। ৭৫ মিনিটে ফ্রি-কিক পায়। ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে জামাল ভূঁইয়ার বুলেট শট অবিশ্বাস্যভাবে থামিয়ে দেন বুরুন্ডির গোলরক্ষক ফেলস। সুযোগের পর সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু গোল মিসের হতাশায় ডুবতে হয়েছে জামাল-সাদদের। ব্যবধান কমানোর আরেকটা দুর্দান্ত সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ৭৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা রাকিব হোসেন অকল্পনীয় মিস করে বসেন। বাম প্রান্ত থেকে জামালের ক্রসটা রক্ষণে লেগে সিক্স ইয়ার্ডের সামনে পরলে ভলিটা অবিশ্বাস্যভাবে বারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন রাকিব। আরেকবার হতাশ হয় সমর্থকরা।

এই মিসটাই যেন আরও কাল নিয়ে আসে আয়োজকদের জন্য। রাকিবের মিসের পর ডান প্রান্ত থেকে আক্রমণে যায় বুরুন্ডি। ডিফেন্স থেকে লং থ্রু থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতর থেকে বল পেয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন জোসপিন। হারের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় বুরুন্ডি। এ গোলে টুর্নামেন্টে নিজের নামের পাশে ৭ গোল লিখেন জোসপিন।

৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে সমতায় ফেরা আরও কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৮৩ মিনিটে মানিকের বদলি হিসেবে নামা মামুনুল ইসলাম মামুনের ক্রস থেকে রাফির আরেকটি হেড দুর্দান্তভাবে আটকে দেন বুরুন্ডির গোলরক্ষক। হতাশার মাত্রা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে আবার ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে সান্ত্বনার গোল পেতে পেতেও হতাশ হয় স্বাগতিকরা। ডি বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে নেয়া জামাল ভূঁইয়ার বুলেট শট আটকে দেয় বুরুন্ডির গোলরক্ষক।

ব্যবধান কমাতে পারেনি বাংলাদেশ। হারের হতাশা নিয়ে টানা তৃতীয়বার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ২০২০ বাংলাদেশ বনাম বুরুন্ডি সেমি ফাইনাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর