‘ফুটবলের সন্ত্রাস’ সালাউদ্দিনকে ভোট নয়, বললেন সাবেকরা
২৬ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৪০
ঢাকা: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে ‘ফুটবলের সন্ত্রাস’ অভিহিত করে আগামী নির্বাচনে তাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ফুটবলরাররা। দেশের ফুটবলের ‘স্বার্থে’ তার বদলে যোগ্য কাউকে নির্বাচিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন-২০২০ সামনে রেখে আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘স্বচ্ছ নেতৃত্ব সময়ের দাবি’ ও ‘কেমন নেতৃত্ব চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে কিংবদন্তী সাবেক ফুটবলাররা এ আহ্বান জানান। দৈনিক যুগান্তরের উদ্যোগে গোলটেবিলে সাবেক ফুটবলারদের পাশাপাশি ক্লাব সংগঠক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুগান্তরের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মোজাম্মেল হক চঞ্চল। সভায় বক্তারা গত ১২ বছরের ফুটবল যে এক চুলও এগোয়নি সেই বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সমালোচনা করেন।
আগামী ২৮ এপ্রিল বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে। এর মধ্যে দিয়ে নিজের তৃতীয় মেয়াদও পূর্ণ করবেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাধ্যমে আরও এক মেয়াদ যেন তিনি বাফুফের দায়িত্বে না থাকেন, সাবেকদের বক্তব্যে সেই আহ্বানই ফুটে ওঠে।
গোলটেবিলের শুরুতে সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু বলেন, ‘কাউন্সিলরা পয়সা খেয়ে ভোট বিক্রি করে দেয়। বাফুফের টাকায় তার (সালাউদ্দিন) সংসার চলে। প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে নির্বাচনে লড়তে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারোর একার নন। তিনি আমাদেরও প্রধানমন্ত্রী। সালাউদ্দিন একটা ফুটবল সন্ত্রাস। বর্তমান সরকার ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাস রুখেছে। সালাউদ্দিনকেও আমাদের রুখতে হবে।’ এসময় সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগও করেন তিনি।
বাফুফের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন ব্যর্থ বলেই এই গোলটেবিল বৈঠক করতে হচ্ছে— এমনটাই জানালেন প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘সালাউদ্দিন একা নয়; তার সঙ্গে আরও অনেকেই আছে। তাদের কারণেই এসব হচ্ছে। আমাদের ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে খেলাধুলার স্বার্থে কাজ করতে হবে।’ মোবাশ্বের হোসেনের সুরেই সুর মেলালেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীরও।
১২ বছরে ১২ জন খেলোয়াড়ও কাজী সালাউদ্দিন তৈরি করতে পারেননি বলে মন্তব্য সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলামের। ‘এখানে উপস্থিত কেউ যদি বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছে এমন ১২ জন খেলোয়াড়ের নাম বলতে পারে, তাহলে আমি চুড়ি পরে এখান থেকে চলে যাব’— এমন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি।
সালাউদ্দিনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বাফুফের ১৩৪ জন কাউন্সিলরের কাছে আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার অনুরোধ করেন আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফার।
সদ্য সমাপ্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। ওই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী থেকে সমাপনী অনুষ্ঠানে তাদের মতো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের বাফুফে সভাপতি দাওয়াত দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। সাবেক খেলোয়াড়দের কাজী সালাউদ্দিন সম্মান দিচ্ছেন না উল্লেখ করে এর জন্য আগামী নির্বাচনে তাকে খেসারত দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন চুন্নু।
তিনি আরও বলেন, ‘১২ বছরে ফুটবলটা শেষ করে দিয়েছে সালাউদ্দিন। সালাউদ্দিন সাহেব যে জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন, সেই জনপ্রিয়তা দিয়ে ফুটবলকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান কমিটির অনেকেই বলেন, আমাদের কাজ দেওয়া হয় না। এখন আমাদের হাতে তিনটি মাস আছে। নির্বাচন সামনে রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে।’
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী অবশ্য ব্যর্থতার দায় শুধু একা সালাউদ্দিনকে দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, ২১ সদস্যের বাফুফে কমিটিতে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ব্যর্থতার দায় সালাম মুর্শেদীর ঘাড়েও বর্তায়। তিনি যদি সভাপতিকে ঠিকঠাক পরিচালনা করতেন, তাহলে ফুটবলের আজ এই অবস্থা হতো না।
সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু সালাউদ্দিনের সমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের দিকেও আঙুল তোলেন। গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকদের নয়, বরং বাফুফে নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন সেসব কাউন্সিলরদের ডেকে এমন একটি সভা করার পরামর্শ টিপুর।
সভায় উপস্থিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বরাবরের মতো সালাউদ্দিনকে সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে গেল ১২ বছরে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন।
যমুনা টিভির সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মানজুর মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি বাদল রায়, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল, সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, কায়সার হামিদ, খুলনা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল, ক্রীড়া সংগঠক আলিমুজ্জামান আলম, ক্রীড়া সংগঠক আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, ক্রীড়া সংগঠক শাকিল মাহমুদ চৌধুরী এবং বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।