মুমিনুলদের চ্যালেঞ্জ যে ম্যাচের পরতে পরতে
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০০
পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তান কতটা শক্তিশালী, সেকথা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার আবশ্যকতা দেখছি না। আর খেলাটি যখন টেস্ট এবং প্রতিপক্ষ যখন বাংলাদেশ, তখন তো তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠানোই উচিত না। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটি যদি পাঁচ দিনে গড়ায় অবশ্যম্ভাবীভাবেই ১৫টি সেশনে প্রভাব বিস্তার করবে স্বাগতিক পাকিস্তান। সেটা যেমন ব্যাটিংয়ে, তেমনি বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে।
কিন্তু হালে দেশের বাইরে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে এবং সাকিব, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে যে কম্বিনেশন দাঁড়িয়েছে, তাতে পাঁচ দিনে ম্যাচটি গড়ানোর সম্ভাবনাও একেবারেই ক্ষীণ। পাক পেস তোপ ও স্পিন ঘূর্ণিতে দিনের তিনটি সেশন পার করতে পারে কি না, সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাঠক মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, পাকিস্তানে অভিজ্ঞ পেসার বোলার বলতে কেউ নেই। জুনাইদ খান ও ওয়াহাব রিয়াজের মতো পেসাররা এই টেস্টে বাদ পড়েছেন। তাহলে আর কে আছে? পাঠকদের বলব ওয়াহাব রিয়াজ ও জুনাইদ খানকে ভুলে যান। বরং নতুন যারা আছেন তারাই আজহার আলীর তুরুপের তাস হয়ে খেলবেন। এদের একজন মোহাম্মদ আব্বাস, আরেকজন নাসিম শাহ।
২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আব্বাস টেস্ট খেলেছেন ১৭টি। তবে ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়ে এরই মধ্যে অভিজ্ঞদেরও ছাপিয়ে গিয়েছেন। মাত্র এ কয়টি ম্যাচ খেলেই থলিতে পুরেছেন ৭২ উইকেট। ইনিংসে ৪ উইকেট পেয়েছেন ৬ বার, ৫ উইকেট পেয়েছেন ৪ বার, একবার ম্যাচে ১০ উইকেটও আছে।
আর ১৬ বছর বয়সী তুর্কি তরুণ ইয়াসিন শাহ ৩ ম্যাচে শিকার করেছেন ৮ উইকেট। পরিসংখ্যানের চাইতেও ভয়ংকর হলো তার বৈচিত্র্যময় পেস আক্রমণ। কখনো বাউন্সার, কখনো সুইং ও ইয়র্কারের মিশেলে প্রতিপক্ষকে পর্যদুস্ত করে তুলতে এখনই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছেন। এই তো সেদিন করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে গড়েছেন ইতিহাস। পেসারদের হয়ে সব থেকে কম বয়সে টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন তার নামের পাশে।
আরও একজন আছেন। তিনি অবশ্য স্পিনার এবং আগের দু’জনের চাইতে অভিজ্ঞ। নাম ইয়াসির শাহ। পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের ৩৩ বছর বয়সী এই লেগি ম্যাচ খেলেছেন ৩৮টি; কিন্তু উইকেট শিকারে তিনি আগের দু’জনের চাইতেও ভয়ংকর। টেস্টে দ্রুততম দুইশ উইকেট শিকারি তিনি। বুঝুন অবস্থা।
মাত্র ৩৮টি ম্যাচে এরই মধ্যে নামের পাশে ২০৯টি উইকেট জমা করেছেন। ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন ১১ বার, ৫ উইকেট ১৬ বার এবং ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট আছে তিন বার।
শাহিন আফ্রিদির কথা তো বলাই বাহুল্য। ১৯ বছর বয়সী এই পেসার এরই মধ্যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছেন। তার মূল শক্তি গতি। প্রায় ১৪০ কিলোমিটার গতির এই পেসার যেকোনো মুহুর্তেই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে দারুণ পারঙ্গম। ৭ টেস্টের ১০ ইনিংসে তার উইকেট ২৫টি। সেরা বোলিং ইনিংসে ৭৭ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। দুইবার শিকার করেছেন চারটি করে উইকেট।
ভাবনার বিষয় হলো, স্বাগতিকদের এমন আগুনে বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের হয়ে যারা ব্যাটিংয়ে আসবেন, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞ বলতে কেবল তামিম ইকবালই। টেস্টে বাংলাদেশের ডাবল সেঞ্চুরি আছে মাত্র তিন জনের। এর মধ্যে দু’জন হলেন সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম। অন্যজন তামিম ইকবাল। এখনো টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপটাও কিন্তু সাকিব ও মুশফিকের। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাদের কেউই দলে নেই।
সাকিব-মুশফিক যেহেতু নেই, তাই ধরেই নেওয়া যায় রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার তামিম ইকবাল, অধিনায়ক মুমিনুল হক আর মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞ যোদ্ধা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই হবেন টাইগারদের ব্যাটিং স্তম্ভ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে সফরকারী দলটিকে।
এবার আসুন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ দেখে নেওয়া যাক। টপ অর্ডারে অধিনায়ক আজহার আলীর সঙ্গে আছেন শান মাসুদ, আবিদ আলী ও ফাওয়াদ আলম। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং স্তম্ভের তকমা পাওয়া বাবর আজম ও আসাদ শফিক। আর কী চাই?
অর্থাৎ ব্যাটিংয়ের মতো বোলিং বিভাগেও নবাগত এবাদত, আবু জাযেদ রাহিদের লড়াই করতে হবে।
তবে একটি জায়গায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাসী হতেই পারেন। আর সেটি হলো বিসিএলের পারফরম্যান্স, যা তাদের স্মৃতিতে একেবারে তরতাজা। সপ্তাহও হয়নি দেশের লংগার ভার্সনের টপ ক্লাস এই টুর্নামেন্টে তামিম ইকবাল ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে গেছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক, লিটন দাস সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। রানে ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুনও।
তবে তামিমদের এটা মাথায় রাখতে হবে সেই উইকেট ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটের। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলবেন সেটি হবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের এবং রাওয়ালপিন্ডিতে তারা আজ অবধি একটি ম্যাচও খেলেনি।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়।