ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন বিকেল ৩টা বেজে ৪৩ মিনিট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগণিত সংবাদ মাধ্যমের ভিড়। এত সাংবাদিক। এদেশে কে দেখেছে কোন কালে? ভিআইপি প্রবেশ পথের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? সোনালি ট্রফি হাতে কখন পা রাখবেন বিশ্ব জয়ীরা?
অপেক্ষমান ছিলেন লাল সবুজের ক্রিকেট ভক্তরাও। জাতীয় পতাকা ও ব্যঘ্র শাবক হাতে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনিতে পুরো ভিআইপি অঞ্চলই প্রকম্পিত করে তুলছিলেন।
এক সময়ে সেই ক্ষণ ফুরোলো। ঠিক বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটেই এমিরেটস এয়ারলাইনসযোগে দেশের মাটিতে পা রাখলেন দেশকে গর্বিত সাফল্য এনে দেওয়া বাংলাদেশ অ-১৯ ক্রিকেট দল। গোটা ভিআইপি লাউঞ্জ তখন লোকে লোকারণ্য। সংবাদ মাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে, ক্রিকেট সমর্থক ও বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরাও বিশ্বকাপজয়ী ক্ষুদে টাইগারদের এক পলক দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।
এরমধ্যেই চলল তাদের অভ্যর্থনা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হামান পাপন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও বিসিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আকবর আলীদের ফুলেল অভ্যর্থনা জানালেন। অভ্যর্থনা শেষে তাদের নিয়ে আসা হল হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে।
বিমানবন্দর থেকে মিরপুরের পথে বিজয়ীদের জন্য ছিল ভিআইপি নিরাপত্তা। পথে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সেই ভাবনা থেকে পর্যন্ত পুরো রাস্তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে তারা রওনা হলেন। সামনে ছিল পুলিশ ও অভূতপূর্ব মোটর শোভা যাত্রা। রাস্তার দু’পাশের নিযুত মানুষ অপলক দেখতে লাগলেন। যেন কোন বীরকে এমন আগলে রেখে নিজ বাসভূমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সময় তখন সন্ধ্যা ৬টা। হোম অব ক্রিকেটের গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য। পা ফেলারও জায়গা নেই। অযুত ক্রিকেট ভক্ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্লোগানে মুখর করে তুলছিলেন পুরো স্টেডিয়াম চত্বর। এমন উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্যেই কর্মস্থল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে পা রাখলেন আকবর আলী ও তার দল।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শের-ই-বাংলায় তাদের জন্য আয়োজিত হল আরো একটি অভ্যর্থনার। অধিনায়ক আকবর আলীর বাবা ও বিসিবির উর্ধ্বতন কর্তাদের উপস্থিতিতে বিশাল সাইজের দুটি কেক কেটে বিশ্বকাপ জয়ী দলকে অভ্যর্থনা জানাল বিসিবি। সঙ্গে ছিল আতশবাজীর ঝলকানি। সেখানেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও বাংলাদেশ দলপতি আকবর আলী দু’বার বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন।
এরপর রাত ৮টা ৩ মিনিটে শুরু হল সংবাদ সম্মেলন। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হলো আকবরদের ঘটনাবহুল বিশ্বকাপ ফেরা।
দেশে ফিরে আগামি কয়েক দিন বিশ্রামে থাকবে বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পাইয়ে দেওয়া এই অ-১৯ দলের সদস্যরা। কাল নাগাদ সবাই প্রিয় পরিবারের কাছে ফিরে যাবেন। ফিরে তারা প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে নেবেন জাতীয় সংবর্ধনা। যার আয়োজন করা হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেটা কবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে অচিরেই জানা যাবে।