তাইজুলের অন্যরকম ভালোলাগা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:৪৭
বিদেশের বিভূঁইয়ে খেলা মানেই তো চ্যালেঞ্জ। কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ, উইকেটের চ্যালেঞ্জ এমনকি খাদ্যাভ্যাসের চ্যালেঞ্জও সফরকারী দলটিকে নিতে হয়। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করে মাঠের লড়াইয়ে ভাল করাটা বস্তুত কঠিনই। আর খেলাটি যখন হয় টেস্ট এবং দেশটি হয় কদাচিৎ খেলা বাংলাদেশ; তখন তা জয় করা আরো প্রবল হয়ে ওঠে। ঠিক একারণেই দেশের মাটিতে খেলা হলে অন্য রকম একটি ভাল লাগা তাইজুল ইসলামের ধমনিতে খেলে যায়। নিজের অজান্তেই নেচে উঠে তার ক্রিকেটীয় সত্ত্বা।
আর প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলে তো কথাই নেই। তাইজুলের সেই নাচন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কেন জানেন? টেস্ট স্পেশালিস্ট এই বাঁ হাতি এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট পেয়েছিলেন এই জিম্বাবুয়ের বিপেক্ষই। এক ম্যাচে ১১ উইটেকের প্রতিপক্ষও রোডেশিয়ানরা। ৬ উইকেট পেয়েছেন তিনবার যেখানে একবারের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ৫ উইকেটও পেয়েছেন তিনবার; এর দু’বারই প্রতিপক্ষ ছিল এই জিম্বাবুয়ে। কাজেই অন্য সবার চাইতে তার একটু বেশিই আপ্লুত হওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো-তিনি তা মানতে নারাজ। তার ভাষ্যমতে শুধু জিম্বাবুয়েই নয়, সাদা পোষাকে ৫ বছরের ক্যারিয়ারে হেন দল নেই যাদের বিপক্ষে উইকেট থলিতে পোড়েননি।
আদতেও কিন্তু তাই। ক্যারিয়ারে খেলা ২৮ টেস্টের মাত্র তিনটিতে তিনি ছিলেন উইকেট শূন্য। বাকি ২৫টি ম্যাচেই বাঁ হাতের ঘূর্ণি জাদুতে শত্রু শিবিরে আঘাত হেনেছেন। কিন্তু পরিতাপের ব্যাপার হলো, তাইজুল পারলেও তার সতীর্থরা যেন পারছেনই না। কি ব্যাটে কি বলে।
সবচাইতে দৃষ্টিকটু হলো, টেস্টে বাংলাদেশের প্লেয়ারদের অ্যাপ্রোচ! যেন সদ্যই ভুমিষ্ট হওয়া কোনো দল। যাদের নুন্যতম টেম্পারমেন্টই নেই। এতে করে ক্ষতিও যা হবার হয়েছে। সাদা পোষাকে জয় লাল সবুজের দলের কাছে হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। গেল এক বছরেরও বেশি সময় যা ধরা দেয়নি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট ম্যাচে জয়কে আবশ্যক বলেই মনে করছেন ২৮ বছর বয়সী এই বাঁহাতি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক মাত্র টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে দলের অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমকে এসব জানালেন। তাইজুল জানিয়েছেন আরো অনেক কিছুই। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: দেশের বাইরে বেশ কয়েকটা টেস্ট ছিল। পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। সেই জায়গায় দেশে একটা টেস্ট হচ্ছে। কমফোর্ট জোনে এসেছেন বলে মনে হচ্ছে কিনা?
তাইজুল: আসলে দেশে যখন খেলা হয় নিজের কাছে একটু অন্যরকম লাগে। এটা আপনারা জানেন যে ভাল করব বা ভাল করার সেই অনুভুতিটা থাকে। আমার মনে হয় ভাল অনুভব করাটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: জিম্বাবুয়ের সাথে যখন খেলা হয় আপনার নামটাই বেশি আলোচিত হয়। কেমন লাগছে?
তাইজুল: এই কথাটা ভাল লাগল না। কারণ জিম্বাবুয়ের সাথেই যে আমি উইকেট পেয়েছি তাতো না। আগেই বলেছি, আপনি যাদের সাথেই খেলেন, ভাল জায়গায় বল না করলে সম্ভব না। তাছাড়া ওরা যে একেবারে খারাপ দল তাতো না। ভাল জায়গায় বল না করলে মার খেতে হবে। আর যখন ভাল জায়গায় বল করব উইকেটের সুযোগ আসবে। সেটা দেশের জন্য ভাল।
প্রশ্ন: ২০১৮ তে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে দুই টেস্টের একটাতে একটা দুর্ঘটনা ছিল। সেটা আপনাদের কতটা মনে আছে?
তাইজুল: না, আমি আসলে দুর্ঘটনা বলব না। দুর্ঘটনা অন্য জিনিস। আসলে ওইটা আমরা খারাপ খেলেছি বিধায় হেরেছি। তারপরের ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি তাই জিতেছি। দুর্ঘটনার কিছু নাই। আসলে ক্রিকেট ভাল খেলতে হবে। ভাল না খেললে হারাটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: শেষ ৬ টেস্টে বাংলাদেশের হারের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল স্পিন বিভাগে খুব একটা ভাল করতে পারেনি। দেশের বাইরে খেলার কারণে হয়ত পিচ, কন্ডিশনের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সাকিব আল হাসান থাকতে বাইরেও দল সাফল্য পেত। ওই জায়গাটায় কিন্তু ঘাটতি থেকেই গেছে। স্পিনার হিসেবে আপনার সবচেয়ে ভাল করার কথা ছিল।
তাইজুল: তাহলে আমরা এখন যারা স্পিনার আছি তারা ভাল স্পিনার না। সাকিব ভাইর মতো না। সাকিব ভাই থাকতে যেহেতু ভাল হত তাহলে এটাই উত্তর।
প্রশ্ন: তার জায়গাটা পূরণ করতে আপনারা কতটা প্রস্তুত?
তাইজুল: তাহলে ওই মানের ক্রিকেটার আসতে হবে। ওই মানের স্পিনার নাই।
প্রশ্ন: একারণে কি বেশি পেসার নেয়া হয়েছে?
তাইজুল: এই কারণে পেসার নেয়া হয়েছে কিনা তা জানি না। কিন্তু পেসার আছে। পাকিস্তানে স্পিনার গিয়েছিল আমিও খেলেছি। আসলে বললাম তো ওই মানের স্পিনার এখনো হয়নি তাই ফলাফল এমন হচ্ছে।
প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট খেলা আর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলার মধ্যে পার্থক্য হলো আপনাকে জিততে হবে। প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশ জিতবে। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য জেতাটা খুব প্রয়োজন?
তাইজুল: অবশ্যই জেতাটা প্রয়োজন। এটা জিম্বাবুয়ে হোক আর যে দলই হোক না কেন। এখন জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে হয়ত আমাদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা আরো উপরে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দলের জন্য খুব ভাল হবে।