Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাব্বির-নাসিরের চেয়েও কম আয় জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের


৪ মার্চ ২০২০ ১৩:৩২

সিলেট থেকে: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে নেইল জনসন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিক আর হেনরি ওলঙ্গা অধ্যায়ের কথা মনে আছে আছে নিশ্চয়ই। না থাকার কোনো কারণও নেই। কেননা প্রায় এক দশক দলটি যে প্রবল বিক্রমে খেলেছে গোটা বিশ্বই তা বিস্ময় নিয়ে দেখেছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওই দলটির কাছে হেরেই জাতের উপর কালিমা লেপন করেছিল কুলিন ভারত। সেমি ফাইনালের আগেই বিদায় ঘণ্টা বেজেছিলে আজহার উদ্দিন অ্যান্ড কোংদের। কিন্তু দিন বদলের পরিক্রমায় সেই জিম্বাবুয়ে আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খর্ব শক্তির এক দলের নাম! জনসন, ক্যাম্পবেলদের বিদায়ের পর  নতুন প্রজন্মও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। আর এর পেছনে সবচাইতে বড় কারণ হলো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের নজিরবিহীন দুর্নীতি।

দেশটির ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্ধারিত অর্থ খেলার উন্নয়ন ও ক্রিকেটারদের উন্নয়নের জন্য খরচ করছিল না। এছাড়া ক্রিকেটারদের বেতনভাতা, সফরভাতা আর ম্যাচ ফিও ঠিকমতো প্রদান করত না বোর্ড। এই ফান্ড ব্যবহার করা হত সরকারের নিজস্ব খাতে। এ অভিযোগ সিংহভাগ প্রমাণ হওয়ায় গত বছরের জুনে জিম্বাবুয়ের সদস্যপদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আইসিসি। যদিও তা অক্টোবরে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে আগেই। বোর্ডের লাগামহীন দুর্নীতিতে প্লেয়ারদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বলতে এখন আর নেই কিছুই! সাকিব-তামিম তো দূরের কথা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকা নাসির হোসেন কিংবা সাব্বির রহমানদের সমান আর্থিক সঙ্গতিও নেই দলটির টেস্ট অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের!

নাসির হোসেন যেখানে ব্যক্তিগত বিএমডব্লিও চালান, সেখানে শন উইলিয়ামস ও তার পরিবারের জন্য ব্র্যান্ড ফরচুনার মাত্র একটি গাড়ি। মাসিক বেতন হিসেবে যা পান তাও তাদের চাইতে কম! ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো যাচ্ছেতাই রকমের তাই সেখান থেকে আয়ের প্রশ্নও উঠে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট আইপিএল, সিপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএলেও ডাক পড়ে না!  জাতীয় দলের হয়ে খেলে বোর্ড থেকে যা পেয়ে থাকেন তাতে হয়ত পেটে ভাতে চলে যায়। তবে তিনি আশা করছেন একদিন ঠিকই তার দল আগের দিনে ফিরে যাবে।

প্রায় ১৫ বছর যাবৎ সিরিজ খেলতে নিয়মিত বাংলাদেশে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস। জিম্বাবুয়ের পরে তাই এদেশটিই হয়ে উঠেছে তার দ্বিতীয় বাড়ি। ক্রিকেটীয় জাতি হিসেবে এখানকার সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। এদেশের উইকেট, কন্ডিশন এমনকি টিম হোটেলও। সোনারগাঁও হোটেলের পিৎজার ঘ্রাণ সুদূর জিম্বাবুয়েতেও বসে পান শন। আর প্রিয় শহরের তালিকার শীর্ষস্থান তামিম ইকবালের শহর চট্টগ্রাম।

সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে ছিলেন তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে খেলা হয়নি। একই কারণে নামা হয়নি সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও।  রোববার (১ মার্চ) জিম্বাবুয়ে থেকে যখন শন সিলেটে এলেন তখন প্রথম ওয়ানডে চলছে। এসেই সুখবর দিলেন, স্ত্রী শনতে উইলিয়ামসের কোল জুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।

গেল বছরের সেস্টেম্বরে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ক্রিকেটকে বিদায় জানালে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জিম্বাবুয়ের টেস্ট দলের ব্যাটন তুলে দেওয়া হয় শন উইলিয়ামসের হাতে। অধিনায়কত্ব পেয়ে সন্দেহাতীতভাবেই দারুণ রোমাঞ্চিত শন। এখন মুখিয়ে আছেন দলের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে।

সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথাই জানালেন ২৬ বছর বয়সী এই জিম্বাবুয়ান টেস্ট দলপতি। কথা বলেছেন নিজেদের পারফরম্যান্স, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিসহ সমসাময়ীক নানান বিষয় নিয়ে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

সারাবাংলা: অধিনায়কত্ব কেমন উপভোগ করছো?

শন উইলিয়ামস: সত্যিই ভীষণ রোমাঞ্চিত। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। তুমি জানো আমাদের ক্রিকেট আর আগের জায়গা নেই। তবে চেষ্টা করছি কত দ্রুত উন্নতির শিখরে যাওয়া যায়।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুমি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জানো। কতটা উন্নতি করেছে বলে তুমি মনে করো?

শন উইলিয়ামস: বাংলাদেশ ক্রিকেট দারুণ উন্নতি করেছে। বিশেষ করে আমি বলবো তাদের কোচিং স্টাফ। যে ধরনের স্টাফ তারা পেয়েছে তারা সবাই প্রজ্ঞাবান। নেইল ম্যাকেঞ্জির কথাই ধরুন না। সে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটকেও দু হাত ভরে দিয়েছে। ডমিঙ্গোর কথা তো বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সিস্টেমের সঙ্গে সে যে ভাবে মিশে গিয়েছে নি:সন্দেহে সেটা দলটির জন্য মঙ্গলজনক। আমি প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলাম ২০০৫ সালে। আমি এই ক্রিকেটকে বড় হতে দেখেছি, বদলে যেতে দেখেছি। দিন দিন ওরা উন্নতি করছে। আমি এখানে আসতে ভালবাসি, খেলতেও ভালবাসি। বিপিএল খেলতেও আমি এখানে এসেছি। তবে খেলতে পারিনি। মাশরাফি আমার অধিনায়ক ছিল। আমি ওর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। আমার চোখে সে অসাধারণ একজন অধিনায়ক। আমি বারবারই এখানে আসতে চাই।

সারাবাংলা: এক সময় জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ হারত। এখন চিত্র পুরো উল্টো। বাংলাদেশের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে পেরেই উঠছে না। এর পেছনে কী কী কারণ আছে বলে তুমি মনে করো?

শন উইলিয়ামস: আমার মনে হয় তুমি জানো যে মাঝে আমাদের ক্রিকেট বোর্ড বড় ধরনের চড়াই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। তাছাড়া আগের দলের অনেক প্লেয়ারকেই আমরা হারিয়েছি। যেমন ফ্লাওয়ার ব্রাদার্স, হিথ স্ট্রিক, হেনরি ওলঙ্গা, ডগলাস হন্ডু। ওদের হারনোয় আমাদের দলের গভীরত কমে গেছে। তবে এটাও ঠিক এই দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ প্লেয়ার আছে। এখন আমাদের যেটা প্রয়োজন; কিছু উপযোগী সিদ্ধান্ত ও কার্যকরী পরিকল্পনা। তবে বর্তমান দলে যারা আছে তাদের নিয়েও  আমরা কিন্তু বাংলাদেশকে হারিয়েছি। তোমার প্রশ্নটা কঠিন। তবে আমি মনে করি বাংলাদেশকে হারানোর সামর্থ্য আমাদের এখনো আছে। সেজন্য সিনিয়র প্লেয়ারদের এগিয়ে আসতে হবে। এবং আমি আশা করি খুব শিগগিরই  আমরা তা ‍শুরু করতে পারব।

সারাবাংলা: এক সময়ের দাপুটে দল হওয়া সত্বেও তোমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ খেলতে পারছো না। এটা তোমার জন্য কতটা কষ্টের?

শন উইলিয়ামস: ভীষণ কষ্টের। এটা আমাকে পীড়া দেয়। তুমি জানো যে আমরা খুব একটা টেস্ট খেলি না। তবে আমাদের ক্রিকেট যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটা আমাকে মেনে নিতে হবে।

সারাবাংলা: তুমি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের একজন আইকনিক ক্রিকেটার। সেই অনুযায়ী যে ধরনের পারিশ্রমিক তোমার পাওয়ার কথা সেটা কি তুমি পাচ্ছ?

শন উইলিয়ামস: তোমাদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের চেয়েও আমি কম বেতন পেয়ে থাকি। আমাদের গ্রাউন্ডস, ঘরোয়া ক্রিকেটের অবস্থা ভালো না। আমার মনে হয় আমি যা পাই তার চাইতে বেশি পাওয়া উচিত। এবং এও আশা করি, আমাদের ক্রিকেট আবার আগের দিনে ফিরে যাবে।

সারাবাংলা: এবার কয়েকটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। তোমার গাড়ি আছে?

শন উইলিয়ামস: আছে।

সারাবাংরা: কয়টা?

শন উইলিয়ামস: একটা ফরচুনা গাড়ি আছে আমার।

সারাবাংলা: তোমার চোখে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান কে?

শন উইলিয়ামস: আমার মনে হয় তামিম ইকবাল। আমি তামিমের  একজন বড় ভক্ত।  তবে এই মুহুর্তে মুশফিক বাংলাদেশের সেরা।

সারাবাংলা: সেরা বোলার কে?

শন উইলিয়ামস: ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে সাইফ উদ্দিন। আর টেস্টে তাইজুল ইসলাম।

সারাবাংলা: তুমি বললে ২০০৫ থেকে বাংলাদেশে আসছো। তোমার চোখে বাংলাদেশের সেরা শহর কোনটি?

শন উইলিয়ামস: চট্টগ্রাম! আমি ঢাকা পছন্দ করি কিন্তু চট্টগ্রামই আমার চোখে সেরা নগরী। আমি ওখানে থাকতে পছন্দ করি, খেলতেও পছন্দ করি। ওখানকার উইকেটও দারুণ। আমি ওখানে বেশ কিছু রান করেছি। তাই ওই শহরটি আমার চোখে সেরা।

সারাবাংলা: এদেশের কোন খাবারটি তোমার পছন্দ?

শন উইলিয়ামস: অনেক খাবার খেয়েছি তাই নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে সোনারগাঁও হোটেলের পিৎজা আমার ভীষণ পছন্দ।

সারাবাংলা: বাংলাদেশে আসতে তোমার কেমন লাগে?

শন উইলিয়ামস: ‍খুবই লাগে। এটা আমার দ্বিতীয় বাড়ির মতোই। ২৪ মাস আগে এখানে এসেছি। আবার এলাম। তো বলার অপেক্ষাই থাকছে না। হয়ত পেশাগত কারণে আসতে হয়। কিন্তু আমি নির্দিধায় বলতে পারি, এদেশটি অসাধারণ।

কম আয় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক নাসির হোসেন বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে সাব্বির রহমান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর