মাশরাফি কী বেদনা লুকালেন?
৭ মার্চ ২০২০ ০৪:১৬
সিলেট থেকে: অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি জিতে মাশরাফি সংবাদ সম্মেলনে এলেন লিটন দাসকে নিয়ে। কারণ তিনি এই ম্যাচের পারফর্মার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লিটন ১৪৩ বলে ১৭৬ রানের এক রেকর্ড ইনিংস খেলেছেন। ক্রিকেটীয় প্রটোকলে তার আসাটা তাই অযৌক্তিক নয়। মাশরাফি কেন এসেছেন সেটা সবারই জানা। আজ ছিল অধিনায়ক হিসেবে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শেষ ম্যাচ। তাছাড়া সিরিজ শেষে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসাটা তার বাঞ্ছনীয়।
যা হোক সংবাদ সম্মেলনের শুরুটা হল লিটন দাসকে দিয়ে। মিনিট তিনেকের ভেতরে তার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে শুরু হয় মাশরাফি পর্ব। যেখানে প্রথমেই জানতে চাওয়া হল, তার কেমন লাগছে? কিছুটা আনমনা ম্যাশ বললেন, অসম্ভব ভালো।
শুনে তো সবার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। অধিনায়ক হিসেবে যার এতটা আলো ঝলমলে অধ্যায়, যার হাত ধরে এদেশের ক্রিকেট আজ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, নিপুণ নেতৃত্বে দেশকে দুর্লভ এক একটি জয় এনে দিয়ে যে মানুষটি ১৬ কোটির ছোট্ট এই বদ্বীপের সবচে প্রিয় হয়ে উঠেছেন, সেই তিনিই কি না বিদায় বেলায় বলছেন, অসম্ভব ভালো লাগছে! তার কি অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে কোনো বেদনা নেই! তার কি একবারও মনে হচ্ছিল না, আজই লাল সবুজের ব্যাটন হাতে তার গর্বিত অধ্যায়ের শেষ!
কিন্তু কেন? কোনো বেদনা লুকাচ্ছেন না তো ম্যাশ? বিশ্বকাপে পারফর্ম করতে পারেননি বলে প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, প্রিয় সতীর্থ ও এদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো তাকে অধিনায়কত্ব ছাড়া করতে যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছিল তাতে কি তিনি আহত? যা তিনি প্রকাশ করতে চাইছেন না। হয়তো তাই। কিন্তু তার কথায় তা স্পষ্ট বোঝা গেল না।
তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হলো তার আসলেই ভালো লাগছিল। এর প্রথম কারণ হল, দল জিতেছে তাই। কেন না শেষ ম্যচটিতে প্রত্যাশিত জয় ধরা দিয়েছে বলেই অধিনায়কত্বের শেষ পরীক্ষায়ও একশতে একশ (হোয়াইটওয়াশ) নম্বর পেলেন মাশরাফি। দ্বিতীয়টি হল, সিরিজটিতে তিনি বল হাতে পারফর্মও করেছেন। তিন ম্যাচে তার উইকেট চারটি।
আর শেষ কারণটি হল, নেতৃত্ব ছেড়ে গুরু দায়িত্ব থেকে রেহাই পেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা এই দলপতি। আর যাই হোক এখন থেকে দেশ ও জাতির মান বাঁচানোর ভার তাকে নিতে হচ্ছে না। এতে করে নিজের বোলিংয়ের প্রতি আরও মনযোগী হতে পারবেন, যা তার ক্ষুরধার পারফরম্যান্সের জ্বালানি যোগাবে। আর পারফরম্যান্স থাকলে তো কথাই নেই, প্রিয় ক্রিকেটের সঙ্গে তার প্রণয় আরও প্রলম্বিত হবে।
শুক্রবার (৬ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্বে শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিদায়ী অধিনায়ক এসব কথা জানালেন।
মাশরাফি বললেন, ‘অসম্ভব ভালো লাগছে। কারণ জিতেছি। একটা কাজ কমে গেল। অনেক বড় দায়িত্ব ছিল, তা কমে গেল। সাধারণত এই সময়ে কারও ভাল লাগে কারও খারাপ লাগে। অবশ্যই আমারও মিশ্র দুইটা ব্যাপারই ঘটছে। সত্যি কথা বলতে আমার কাছে ভালো লাগছে এই ভেবে যে একটা ভালো জায়গায় এসে শেষ করেতে পেরেছি। জিতে শেষ হয়েছে এটা ভালো।’
তার কথাতেই স্পষ্ট একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তার ভেতরে কাজ করছে। ৩-০ সিরিজ জয়ের গর্বিত ভাল লাগাটি অবলীলায় বলে গেছেন সত্যি কিন্তু নেতৃত্ব ছাড়ার যে বেদনা তা তিনি নিজের ভেতরেই রেখে দিলেন।
ও ভালো কথা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেরে অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে লিটন দাসের রেকর্ড ভাঙা ১৭৬ ও তামিম ইকবালের ১০৯ বলে অপরাজিত ১২৮ রানে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ৪৩ ওভারে ৩/৩২২ রানের পাহাড় গড়েছিল বাংলাদেশ।
৩৪২ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে সফরকারী দলটি গুটিয়ে যায় ২১৮ রানে। তাতে ১২৩ রানের উদ্ভাসিত জয়ে শেষ হয় মাশরাফির অধিনায়কত্বের অধ্যায়।