রোমাঞ্চ জাগিয়েও পারলেন না মেহেদি
১৬ মার্চ ২০২০ ১৯:৫৭
দলীয় ১৩০ রানেই নেই গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান! বস্তুত এর মধ্য দিয়েই দলটির মৌসুমের প্রথম জয়ের সকল আশা ভরসার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মৃতপ্রায় সেই ইনিংসে প্রাণ ফেরালেন আটে নামা তরুণ মেহেদি হাসান।
চওড়া ব্যাটে ৪৯ বলে ছয় চার ও তিন ছয়ে খেললেন অপরাজিত ৫৬ রানের প্রলয়ী এক ইনিংস। তাতে হারের নিঃশ্বাস দূরত্বে চলে যাওয়া দলটিতে জয়ের রোমাঞ্চ জেগে উঠল। কিন্তু ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সেই গন্তব্য আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি। ৯ রানের ঘাম ঝরানো জয়ে মৌসুম শুরু করল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
অথচ জয়ের মঞ্চটি গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের জন্য প্রস্তুতই ছিল। খুব বেশি না, সেজন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ২৫২ রান। তবে দলের ইনফর্মড ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা দূরের বাতিঘর হয়েই রইল। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের পেস তোপে রানে সালাহউদ্দিনের শিষ্যরা গুটিয়ে গেল কোচ সালাহউদ্দিনের শিষ্যরা গুটিয়ে গেল ২৪২ রানে। বিজয়ের মঞ্চে মৌসুমে দারুণ শুরুর হর্ষে ভাসল কোচ সারোয়ার ইমরানের শিষ্যরা।
মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অ্যান্ড কোং। ৫ রান তুলতেই হারায় ওপেনার জাকির হাসানকে। দ্বিতীয় ওভারে নাঈম হাসানের তৃতীয় বলটি ঘূর্ণ নাচন তুলে তার পায়ে আছড়ে পড়লে জোরালো আবেদন ওঠে। তাতে আম্পায়ার সাড়া দিলে ক্রিজ ছাড়া হন জাকির।
দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল-সৌম্যর দুর্দান্ত রসায়নে বেশ দ্রুত গতিতেই রান আসছিল। সেই চাকা অবশ্য খুব বেশিক্ষণ সচল রাখতে পারেননি এই দুই টপ অর্ডার। দলীয় ৫৪ রানে শরিফুল ইসলামের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটি আত্মঘাতী শটসে ডিপ পয়েন্টে রনি তালুকদারের তালুবন্দি হন মুমিনুল হক। তার আগে নামের পাশে যোগ করেন ২৪ রান।
মুমিনুলের বিদায়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার গুরু দায়িত্ব বর্তায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকারের কাঁধে।
দুঃখজনক হলেও সত্য দুজনের কেউই সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৪৯ ও দলীয় ১০৫ রানে নাহিদুলের বল সৌম্য সরকারের ব্যাট প্যাডের মাঝ দিয়ে চুমু খায় স্ট্যাম্পে। ফিরে যান সৌম্য। এরপর দুই বল পরে সেই নাহিদুলই এক রানে ইয়াসির আলী রাব্বিকে সাজঘরের পথ দেখান। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ইনিংসের এপিটাফ লিখে দেন দলীয় ১৩০ ও ব্যক্তিগত ৩২ রানে। কাপালি ঘূর্ণিতে তামিম ইকবালের ক্যাচ বনে যান।
অবর্ণনীয় এক চাপ ভর করল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সে। ষষ্ঠ উইকেটে এসে অবশ্য সেই চাপ জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলপতি আকবর আলী। তার দৃষ্টি নন্দন স্ট্রেইট ড্রাইভ ও পুল শটসে জয়ের স্বপ্নও বুনছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তার দল। কিন্তু ৩১ রানে যখন তিনি রান আউট হলেন, সেই স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে এল। ক্রিজের অপরপ্রান্তে আরিফুল হক ছিলেন সত্যি তবে তার ব্যাট ছিল নিস্প্রভ। ৩৭তম ওভারে যা একেভারেই নিভিয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। দারুণ ফলো থ্রুতে করেন কট অ্যান্ড বোল্ড। বস্তুত এর মধ্য দিয়েই দলটির জয়ের সকল আশা উবে যায়।
কিন্তু অনিশ্চয়তার ক্রিকেটে শেষ বলে যে কিছু নেই তা আবার প্রমাণ করলেন দলের টেল এন্ডার মেহেদি হাসান। তাদের দাপুটে ব্যাটে মিইয়ে যাওয়া জয়ের আশাও এক পর্যায়ে উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় জয়ের বন্দরে তরী ভেড়াতে পারেনি গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। সেটা না হলে হয়ত ম্যাচের গল্প ভিন্নই হতো। ৪৯ বলে এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডার অপরাজিত ছিলেন ৫৬ রানে। ৫০ ওভার শেষে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের সংগ্রহ ২৪২ রান।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে বল হাতে অলোক কাপালি, মোস্তাফিজুর রহমান ও নাহিদুল ইসলাম ২টি করে, নাঈম হাসান ও শরিফুল ইসলাম নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
সোমবার (১৬ মার্চ) মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিংয়ে নেমে শুরুটা উড়ন্তই করেছিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। রানের খাতা খোলার সুযোগ না দিয়ে ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে শূন্যহাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দ্বিতীয় উইকেটে রনি তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে বড় সংগ্রহের পথে ব্যাটিং রথ ছোটাতে চেয়েছিলেন দলপতি তামিম ইকবাল। কিন্তু সেখানে বাঁধ সাধেন নাসুম আহমেদ। ব্যক্তিগত ১৯ রানে দেশ সেরা এই ব্যটসম্যানকে তুলে দেন নাসুম আহমেদের হাতে। প্রাইম ব্যাংকের দলীয় সংগ্রহ তখন ৪৬ রান।
তামিমের ফেরায় রনিকে সঙ্গ দিতে তৃতীয় উইকেটে এসেছিলেন রকিবুল হাসান। বিধি বাম হলে যা হয়। কেন না তিনিও উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেননি। দলের সঙ্গে ৯ রান যোগ করেই নাসুমের দ্বিতীয় শিকার বনে যান। যাওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেন পাঁচ রান।
চতুর্থ উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় শত রানের কোটা পার করেন রনি তালুকদার। দুজনের চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিং প্রাইম ব্যাংককে আরও বড় সংগ্রহের স্বপ্নই দেখাচ্ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে দেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ১১০ রানে মিঠুনকে এলবির ফাঁদে ফেলে জানান দেন, এতটা সহজ নয়। আরও কাঠখড়ি পোড়াতে হবে। ২৭ রানে ইনিংসের ফুলস্টপ টেনে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন মিঠুন।
মিঠুন ফেরার পর নিজের ফিফটি তুলে শতকের পথে ব্যাট ছোটান সেট ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার। কিন্তু পারেননি। ব্যক্তিগত ৭৯ রানে মাহমুদউল্লাহ তাকে ক্লিন বোল্ড করে দলকে ম্যাচে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চার ওভার পরে আবার আঘাত হানেন মাহমুদউল্লাহ। এবারের শিকার অলোক কাপালি। ব্যক্তিগত ১৭ রানে তাকে মেহেদি হাসানের হাতে তুলে দিলে প্রাইম ব্যাংকের গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপারে হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু সেই সময়কে থমকে দেন মিডল অর্ডার নাহিদুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাদের ৯৬ রানের জুটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫১ রানের সংগ্রহ পায় তামিম ইকবাল ও তার দল।
৪৩ বলে নাহিদুল অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে। আর নাঈম হাসান ৩৬ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন ৪৬ রানে।