এর আগে যেসব কারণে স্থগিত হয়েছিল মহাদেশীয় ফুটবল আসর
১৮ মার্চ ২০২০ ১১:৪১
সর্বশেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত ফুটবল মৃতপ্রায়। ফুটবলের আঁতুড় ঘর ইউরোপে এখন সব ধরনের ফুটবল স্থগিত। অবশ্য কেবল ইউরোপই নয় পুরো বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে স্থগিত হয়ে পড়েছে জন জীবন। আর তাই তো স্থগিত সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্টও। ইরোপিয়ান ফুটবলের সব থেকে বড় আসর ইউরো-২০২০ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে তা আয়োজিত হবে ঠিক এক বছর পর ২০২১ সালে। কেবল ইউরোই নয় স্থগিত হয়েছে এ বছর আয়োজিত হতে যাওয়া দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল আসর কোপা আমেরিকাও।
অবশ্য ইউরো-২০২০’ই প্রথম কোনো মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট নয় যেটা অনিবার্য কারণ বশত স্থগিত ঘোষিত হলো। এর আগে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশীয় ফুটবলের সব থেকে বড় আসর কোপা আমেরিকাও স্থগিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। এবং আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ ফুটবল টুর্নামেন্ট আফ্রিকা কাপ অব নেশনসও স্থগিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে কখনোই এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ স্থগিত ঘোষণা করা হয়নি এখন পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা জানিয়ে দিয়েছে এ বছর জুনে বসছে না ইউরোর আসর। করোনাভাইরাসের করাল ঘাতে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ হাজার। স্পেনে সংখ্যা ৫শ ছাড়িয়েছে আর যুক্তরাজ্যে সে সংখ্যা ১শ ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা জারি করেছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশগুলোই। আর তাই তো স্থগিত করতে হচ্ছে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরগুলো। যার বাইরে নয় ইউরোও।
তবে ইউরো প্রথমবারের মতো স্থগিত ঘোষণা করা হলেই এটিই প্রথম টুর্নামেন্ট নয় যেটি টুর্নামেন্টের আগ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা করতে হয়েছে। এর আগে কোপা আমেরিকা, আফ্রিকান কাপ অব নেশনসও স্থগিত ঘোষণা করতে হয়েছিল।
বিশ্বকাপ:
১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালে টানা দুই বার ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ মাঠে গড়ায়নি। এর পেছনের কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৫০ সালে আবারো মাঠে গড়ায় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। সেবার ২০ বছর পর ব্রাজিলের মারাকানায় ঐতিহাসিক ফাইনাল জিতে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মাতে উরুগুয়ে। আর ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে যুক্ত হয় এক কালো অধ্যায়।
কোপা আমেরিকা
কোপা আমেরিকা ফুটবলের সব থেকে প্রাচীন ফুটবল টুর্নামেন্ট। বেশ কিছু কারণে এই টুর্নামেন্ট বিভিন্ন সময়ে স্থগিত হয়েছিল অতীতে। ১৯২৮ সালে সর্ব প্রথম এই টুর্নামেন্টটি স্থগিত হয়। সেবার টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল আর্জেন্টিনায়। তবে চিলি, উরুগুয়ে এবং আয়োজক আর্জেন্টিনা ১৯২৮ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করায় স্থগিত করা হয় সেবারের টুর্নামেন্ট। এরপর অবশ্য ১৯২৯ সালে পুনরায় আয়োজিত হয় কোপা আমেরিকার ১২তম আসর।
এরপর অবশ্য ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল এই টুর্নামেন্ট। এর পেছনের ইতিহাসটি অবশ্য বেশ রোমাঞ্চকর। ১৯৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। আর ফাইনাল হেরে উরুগুয়ের সঙ্গে ফুটবলের সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে আর্জেন্টিনা। আর তাই তো এই ছয় বছর সময়ের মধ্যে কোপা আমেরিকার আর কোনো আসর বসেনি। তবে সেই সম্পর্ক শিথিল হলে ১৯৩৫ সালে পুনরায় শুরু হয় কোপা আমেরিকা।
এরপর আবারো ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কোপা আমেরিকার আয়োজন স্থগিত ছিল। আর এ সময়েই দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল আসরের নামকরণ করা হয় ‘কোপা আমেরিকা’। এর আগে এই টুর্নামেন্টের নাম ছিল ‘সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ’।
এই বছরের ১২ জুন থেকে ১২ জুলাই লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়রদের নিয়ে এই টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী টুর্নামেন্ট হতে পারে পরের বছর (২০২১) ঠিক একই সময়ে।
আফ্রিকা কাপ অব নেশনস
প্রথমবারের মতো আফ্রিকার সর্বোচ্চ ফুটবল টুর্নামেন্ট অ্যাফকন স্থগিত হয় ১৯৬০ সালে। সেবার এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার কথা ছিল ইথিওপিয়ার। তবে ঠিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের আগ মুহুর্তে ইথিওপিয়ার শাসক হেইলি সেলেসিকে ক্ষমাচ্যুত করে দখল নেয় সামরিক বাহিনী। আর তাতে স্থগিত করতে হয়েছিল সেবারের অ্যাফকনের আসর। এরপর অবশ্য অপেক্ষা করতে হয় ২ বছর। আর দুই বছর পর আবারো সেই ইথিওপিয়াতেই আয়োজিত হয় অ্যাফকন। আর সেবার টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শিরোপাও জয় করে ইথিওপিয়া।
এরপর ২০১৩ সালের অ্যাফকন আয়োজনের ভার পড়েছিল লিবিয়ার ওপর। তবে টুর্নামেন্ট শুরু আগেই লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। তবে এবার আর টুর্নামেন্ট স্থগিত করেনি আফ্রিকার ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। এবার লিবিয়া থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয় গ্যাবন অ্যান্ড ইকুয়াটরিয়াল গুয়েনাতে। এর ঠিক দুই বছর পর মরোক্কা আফিরকার ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ক্যাফ’কে (সিএএফ) অ্যাফকন স্থগিত করতে অনুরোধ করে। এর পেছনের কারণ হিসেবে মরোক্কো দেখায় ইবোলাকে। সে সময় আফ্রিকা জুড়ে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে মরোক্কোর কথা আমলে নেয়নি ক্যাফ। উল্টো অ্যাফকন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় মরোক্কোকে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এশিয়া কাপ
১৯৫৬ সালে এশিয়ার ফুটবল দলগুলো নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এশিয়া কাপ। তবে ৬৪ বছরে এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপ এখন পর্যন্ত স্থগিত হয়নি। যদিও উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বেশ সময় ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলছিল। এছাড়াও ইরান-সৌদি আরবের মধ্যেও সম্পর্ক দাঁ-কুমড়া হলেও স্থগিত হয়নি এশিয়া কাপ। তবে ১৯৭৪ সালে ইসরাইলকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হলে তারা ওশেনিয়া ফুটবল ফেডারেশনে (ওএফসি) যোগদান করে। আর এর ঠিক পরের বছর ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (উয়েফা) নাম লেখায়।
আফ্রিকান নেশনস কাপ ইউরো এশিয়া কাপ কোপা আমেরিকা ফুটবল স্থগিত স্পোর্টস স্পেশাল