Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহীদ জুয়েল ছিলেন একজন স্বাধীনতাকামী ক্রিকেটার: রকিবুল হাসান


২৬ মার্চ ২০২০ ১০:৩৯

ঢাকা: নামটা আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল হলেও এদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে তিনি শহীদ জুয়েল নামেই অধিক পরিচিত। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড সংলগ্ন যে গ্যালারিটি আপনারা দেখেতে পান সেটা তার স্মৃতির উদ্দ্যেশ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশ মাতৃকার মুক্তি কামনায় যিনি ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পাক হানাদারদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন।

এই সেই জুয়েল ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে যিনি পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ক্রিকেটে অসাধারণ প্রতিভাধর এই ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করতেন ওপেনিং অর্ডারে। খেলতেনও দুর্দান্ত। দারুণ স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ে সবার নজর কাড়তেন। কিন্তু তবুও পাকিস্তান ক্রিকেট দলে তার কখনোই জায়গা হয়নি। হবেই বা কী করে বলুন? তিনি যে এদেশের (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) সন্তান! এই একটি কারণই তার ক্রিকেটীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রতিভার বিকাশের পথে বাধার দেওয়াল তৈরি করেছিল।

বিজ্ঞাপন

জুয়েল তখনই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এদেশের ক্রিকেটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জন্মভূমির স্বাধীনতার বিকল্প নেই। এবং সেই ভাবনা থেকেই হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন, ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। অবশ্য ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের সেই লাল সূর্য্য তিনি দেখে যেতে পারেননি। কেননা ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্টে গভীর রাতে তিনি পাক হানাদারবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তৎকালীন তেজগাঁওয়ে এমপি হোস্টেলের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি।

জনশ্রুতি আছে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কথিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার আগে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে তাকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। সেই তালিকায় আরও ছিলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ, আজাদ, বদি, রুমিসহ আরও বেশ কয়েকজন।

বিজ্ঞাপন

শহীদ জুয়েল ছিলেন ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুনের একজন সক্রিয় সদস্য। প্লাটুনের সদস্য হিসেবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ধ্বংসের মিশনে। সেখানে পাক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তিনি হাতের আঙুলে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকেই আহত জুয়েলকে আটক করে পাকিস্তানি হায়নার দল।

কোনো এক স্বাজাতির করা বিশ্বাসঘাতকতায় ২৯ আগস্ট গভীর রাতে মগবাজারের রেলক্রসিং সংলগ্ন আজাদের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কাছ থেকে ক্র্যাক প্লাটুনের তথ্য ও সবার পরিচয় জানার জনতে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। যে হাত দিয়ে তিনি ব্যাট ধরতেন, সে হাতের দু’টি আঙুল কেটে ফেলা হয়। এমন নির্যাতনের পরেও একটি তথ্যও তার মুখ থেকে বের করে নিতে পারেনি পশ্চিম পাকিস্তানের হায়নার দল।

কথাগুলো বলছিলেন আর আবেগে গলা ধরে আসছিলো শহীদ জুয়েলের বন্ধু ও লাল সবুজের ক্রিকেটের সাবেক দলপতি রকিবুল হাসানের।

জুয়েল যখন এইচএসসিতে পড়েন তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান ক্লাস এইটে। তিনি যখন ঢাকা আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলেন তখন রকিবুল হাসান সেখানে অনুশীলন করতেন। এক পর্যায়ে দুজনই পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন। একই কক্ষে কেটেছে তাদের আনন্দঘন সময়। স্বর্ণালী সেই স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক এই অধিনায়ক। স্বর্ণালী সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শোকে কিয়ৎক্ষণ এর জন্য স্তব্ধ হয়ে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটারে এই সাবেক অধিনায়ক।

‘ক্রিকেটের সুবাদেই তার সাথে আমার পরিচয়। উনি আজাদ বয়েজে খেলতেন আমিও তখন আজাদ বয়েজে অনুশীলন করতাম। পরবর্তীতে জুয়েল আজাদ বয়েজ থেকে চলে যায় মোহামেডানে। আমি আজাদ বয়েজেই থেকে যাই। যখন ক্লাস নাইন কি টেনে পড়ি তখন পূর্ব পাকিস্তান একাদশে সুযোগ পেয়ে যাই। সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কায়েদ-ই-আজমট্রফিসহ আরও অনেক টুর্নামেন্ট খেলা হতো। এই কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে প্রতিনিধিত্ব করার মতো যোগ্যতা জুয়েলের ছিলো এবং তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন।’

জুয়েল ছিলেন একজন নিখাঁদ বাঙালি এবং একজন স্বাধীনতাকামী, উল্লেখ করে রকিবুল আরও বলেন, ‘তার ভেতরে স্বাধীন সত্তা ও বাঙালিত্ব প্রবল ভাবে কাজ করতো। পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সে অনেক আঘাত পেয়েছে। তখন থেকেই তার মধ্যে বাঙালীর মুক্তি, বাঙালির স্বাধীনতা কাজ করত। তাদের কেন স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না বারবারই তার ভেতরে এই প্রশ্নের উদ্রেক হত। ওই সময় খেলাধুলা ছাড়াও আরও নানানক্ষেত্রে আমাদের বঞ্চনা মেনে নিতে হতো। এটা সে বুঝতো এবং বিষয়টি তাকে নাড়া দিতো। সে ছিলো দারুণ স্বাধীন চেতা ও স্বাধীনতাকামী।’

শহীদ জুয়েলর জন্ম ১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৭৩ সালে শহীদ জুয়েলকে মরণোত্তর বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়।

মিরপুর শের-ই-বাংলায় অবশ্য আরও এক শহীদ ক্রিকেটারের নামে একটি গ্যালারির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি শহীদ মোস্তাক। তার উৎসর্গের কথা না হয় আমরা অন্য কোনো দিন জানব!

ক্রিকেট ক্র্যাকপ্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জুয়েল শহীদ জুয়েল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড স্বাধীনতা দিবস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর