Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কোচের চেয়ে খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি ভালো লাগে’


৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৩

ঢাকা: মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশেও এর ছোবলের দরুণ প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে সকল ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বন্ধ। এমন থমথমে অবস্থায় দেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে সারাবাংলাডটনেট। আজকের আয়োজনে আছেন দেশের টেনিস জগতের ‘গ্লামার গার্ল’ আফরানা ইসলাম প্রীতি।

আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) ওমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লুটিএ) অধীনে জুনিয়র সার্কিটে খেলেন প্রীতি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ এশিয়ান টেনিস ইভেন্টে নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন প্রীতি। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে একক আধিপত্য বিস্তার করে সিনিয়র লেভেলেও আধিপত্য বজায় রেখে চলেছেন। টানা চার বার জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চীনে প্রথম বাংলাদেশি কোচিং করাতে যান প্রীতি। গত নভেম্বরে দেশে ফিরেছেন। দেশের টেনিস জগতের এই গ্লামার গার্ল তার চীন অভিজ্ঞতা, খেলোয়াড় জীবনের পরিকল্পনা ও কোচিং ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।

সারাবাংলা: কোয়ারেনটাইনে সময় কেমন কাটছে?

প্রীতি: চীন থেকে ফিরেছি গত বছরের নভেম্বরে। এরপর সেখানে করোনা নিয়ে বড় বিপর্যয় গেলো। যাওয়া হলো না। এখন দেশেই থাকছি। এপ্রিলের এক তারিখ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ গেমসের। সেটারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি বাসায় অবসর সময় কাটাচ্ছি।

সারাবাংলা: অবসরে ফিটনেসের কাজ করছেন?

প্রীতি: বাসায় যতটুকু পারি টুকটাক করছি। জিমনেসিয়ামসহ সবকিছুই বন্ধ এখন। সেভাবে ফিটনেসের কাজ করা হচ্ছে না।

সারাবাংলা: টেনিস ফেডারেশন থেকে কীভাবে সহায়তা পাচ্ছেন বা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন কিনা?

প্রীতি: যোগাযোগ হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমরা গেট টুগেদার করতে পারছি না। আর টেনিসে যোগাযোগটা সেভাবে হয় না আমাদের। নিজ তাগিদেই কাজ করতে হচ্ছে। প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। অন্যান্য খেলায় যেমন কোচ বা অফিসিয়ালরা সবসময় একটা দিকনির্দেশনার মধ্যে রাখেন সেভাবে টেনিসে হয় না।

সারাবাংলা: মাঝখানে একবছর চীনে ছিলেন কোচ হিসেবে। সবশেষ কোন টুর্নামেন্ট খেলেছেন?

প্রীতি: সবশেষ ২০১৮ সালে ক্লাব কাপ আর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল। সেখানে রেজাল্ট করেছি। এর মাঝে গত বছর আমাদের কোনো টুর্নামেন্ট ছিল না। জুনিয়রদের আন্তর্জাতিক কিছু টুর্নামেন্ট হয়েছে। সিনিয়র লেভেলে কিছু হয়নি।

সারাবাংলা: করোনা বিপর্যয় শুরু হওয়ার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন?

প্রীতি: গত দু’বছর টেনিস ফেডারেশনের সংস্কার কাজ চলেছে। এখনও কাজ শেষ হয়নি। অফ ছিল। দুই বছর যাবৎ খেলোয়াড়রা সবাই অফ টাইমই কাটাচ্ছেন। যার সামর্থ্য হচ্ছে সে প্র্যাকটিস করতে পারছে। যার সামর্থ্য হচ্ছে না সে করতে পারছেন না। আমাদের ফেডারেশন ছাড়া বাইরে প্র্যাকটিস করতে খরচ করতে হয় বেশিরভাগ খেলোয়াড়রা যারা ছেলেরা তারা বল বয়। তাদের তো এবিলিটি নেই খরচ করে প্র্যাকটিস করার। তাদেরকে যদি কেউ নিয়ে যাচ্ছে পার্টনার হিসেবে সেভাবেই হয়তো অনুশীলন করছে। সবাই পারছে না। আমি চীন থেকে এসে নিজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় অনুশীলন করছি। ফেডারেশন থেকে বলটলও দিচ্ছিল না। হঠাৎ করে দেশে এখন সবকিছু বন্ধ। আমিও প্রস্তুতি নিতে পারছি না।

সারাবাংলা: নভেম্বরে চীন থেকে এসেছেন। দেশের বিপর্যয়টা আসে মার্চ মাসে। এসময়টা কীভাবে কেটেছে আপনার?

প্রীতি: মাঝখানে আমি একটু ইনজুরিতে ছিলাম। পায়ে একটু সমস্যা ছিল। ডান পায়ের টিস্যু ছিড়ে গিয়েছিল। এখন একটু ঠিক আছি। টেনিস খেলতে অবশ্য সমস্যা হবে না। তবে আমি এখনও পুরোপুরি ফিট না।

সারাবাংলা: টেনিসে কারোরই বাইরে কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। দেশের প্রথম আপনি চীনে গিয়েছেন কোচ হিসেবে। এক বছরের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

প্রীতি: আমিতো খেলোয়াড় ছিলাম। কোচিংয়ের কিছু জানতাম না। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি চীন থেকে। তবে এর মাঝে চাইনিজ ভাষা শিখতে হয়েছে। চীনে ইংরেজি সেভাবে প্রচলিত না। তাই চাইনিজ ভাষা শেখাটাও একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে বলতে পারেন।

সারাবাংলা: খেলোয়াড় হিসেবে টেনিস আর কোচ হিসেবে টেনিস খেলার দর্শনটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

প্রীতি: অবশ্যই পার্থক্য আছে। কারণ একটা প্লেয়ার তো খেলছে। সেখানেই মনোযোগ। আর একজন কোচকে খেলোয়াড়দের নিয়ে আগের দিনই বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। পরেরদিন কি কার্যক্রম হবে। খেলোয়াড়দের নিয়ে কীভাবে দিনটা অতিবাহিত হয় সেটা নিয়েও দীর্ঘসময় কাজ করতে হয়।

সারাবাংলা: সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে কোচিংয়ের উপরে?

প্রীতি: আমি লোকাল কিছু ওয়ার্কশপ করেছি। বাংলাদেশেও কিছু ওয়ার্কশপ করেছি। লেভেল -১ কোচিং করা হয়নি। তখন বাংলাদেশেই ছিলাম। কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে কোর্স করতে পারিনি।

সারাবাংলা: চীনে সবথেকে বড় অর্জন তাহলে কি হয়েছে আপনার?

প্রীতি: আমার খেলাধুলাই সবকিছু। আমার প্লেয়ারের জায়গাটাই আমার প্রিয় জায়গা। আমি কোচ হিসেবে নয় খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিতে এখনও বেশি ভালোবোধ করি আর ইনজয় করি।

সারাবাংলা: আপনি বলছেন খেলোয়াড় হিসেবে বেশি ভালো লাগে পরিচয় দিতে। তো চীনে কিভাবে কোচ থেকে খেলাটা ঝালিয়ে নিতে পেরেছেন?

প্রীতি: আমার পরিকল্পনা করতে হয়েছিল। দুটা টোটালি ডিফারেন্ট। আমাকে শিডিউল করে নিজের খেলাটাকে ঝালিয়ে নিতে হয়েছে। তবে আমার এসময়ে বিশেষকরে বাচ্চাদের খেলা শেখাতে হয়েছে। বাচ্চাদের খেলা শেখানো খুবই কঠিন কাজ। তাদের কিভাবে ট্রেইন করবো এটা বড় চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা ছিল। যেগুলো বাংলাদেশে থাকলে আমি বুঝতে পারতাম না।

সারাবাংলা: চীন থেকে বাংলাদেশের পার্থক্য কি দেখলেন এই এক বছরে?

প্রীতি: ওদের তৃণমূল পর্যায়ে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। বিশেষকরে শিশুদের দিকে, তাদের হাতেও র্যাকেট-বল তুলে দেওয়ার যে অনুপ্রেরণা, পরিবেশ আর পরিচর্যা করা হয় সেটা বাংলাদেশে নেই। আমার একটা স্টুডেন্ট ছিল যে সাড়ে চার বছরের। ঠিকমতো কথাও বলতে পারতো না। তাকে শেখাতে হয়েছে টেনিস খেলা। তাদের জন্য অবশ্য র্যাকেটও আলাদা দেওয়া হয়। বলটাও আলাদা। আমাদের দেশে এমনটা হয় না। তৃণমূলের কাজটা চিন্তা করা যায় না এ দেশে।

সারাবাংলা: চীনে থাকাকালীন কোনো টেনিস প্লেয়ারদের সঙ্গে কোনো সখ্য বা খেলার কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা?

প্রীতি: আমি যে ক্লাবে থাকতাম সেখানে সেভাবে সময় পেতাম না একেবারেই। আর ভেকেশনেও ব্যস্ত থাকতে হতো অনেক। ওরা ভেকেশনেই খেলাধুলা নিয়ে বেশি সিরিয়াস। তবে মাঝেমধ্যে ওদের দেশের ভালো খেলোয়াড়রা আমাদের ক্লাবে আসতো। তাদের সঙ্গে কিছুটা খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের ট্রেনিং দেখার সুযোগ হয়েছে।

সারাবাংলা: কোচিং নিয়ে আপনার দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা আছে?

প্রীতি: আমার জীবনে হঠাৎ করে টার্ন এসেছে। হঠাৎ করেই চীনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে আমার নিজেরও।

সারাবাংলা: করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন বাংলাদেশ গেমসের জন্য?

প্রীতি: আমি নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকু দিবো। টেনিস হলে যেকোনো স্যাক্রিফাইস করতে রাজি আছি। আর বাংলাদেশ গেমস তো প্রতিবছর হয় না। তাই সেটার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিবো। ফেডারেশন সাহায্য করুক আর না করুক আমি আমার মতো করে প্রস্তুতি নিবো।

সারাবাংলা: ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রীতি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) ওমেন্স ওমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লুটিএ) ওমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লুটিএ) জুনিয়র সার্কিট টেনিস খেলোয়াড় প্রীতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর