এদিন কথা রেখেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
১২ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২৯
‘আমি কথা দিচ্ছি, এই রাত রূপকথার রাত হবে।’ উলফসবার্গের বিপক্ষে ২০১৬ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের উদ্দেশে এটাই বলেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এর আগে প্রথম লেগে ঘরের মাঠ ভোকসওয়াগন অ্যারেনায় রিয়াল মাদ্রিদকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল উলফসবার্গ। আর তাই তো সেমি ফাইনালে পৌছাতে হলে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালকে জিততে হত কমপক্ষে ৩-০ গোলের ব্যবধানে।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উলফসবার্গের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জেতাটা বেশ কষ্টসাধ্যই বলে মনে হচ্ছিল সে সময়। তবে যে দলের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকেন নিশ্চয়ই তারা শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেননা। এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু’তে পা রাখার আগেই সমর্থকদের উদ্দেশে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেছিলেন, আমি কথা দিচ্ছি এই রাতটা রুপকথার রাত হবে।
রোনালদো কথা রেখেছিলেন। উলফসবার্গের এফিটাপ রচনা করেছিলেন একাই। তখন সদ্যই রাফা বেনিতেজের ব্যর্থ সময়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে কিংবদন্তী জিনেদিন জিদানের হাতে। তার হাত ধরেই রিয়ালের নতুন পথ চলার শুরু। আর সেই পথ চলার প্রথম বাধা আসে জার্মান ক্লাব উলফসবার্গের কাছ থেকে।
তবে রূপকথার রাতের ওই ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের রাজত্ব পুনরুদ্ধারে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এই রাতটা ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রাত। এই রাত ছিল রোনালদোর প্রতিজ্ঞা পালনের রাত। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক রিয়াল। তাই তো অপেক্ষা করতে হয়নি খুব বেশি সময়। ম্যাচের সময় ১৪ মিনিট গড়াতেই রোনালদোর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত উলফসবার্গ। দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান কমালেন রোনালদো।
এর ঠিক মিনিট দুয়েক বাদে টনি ক্রুসের দুর্দান্ত এক সেট পিস থেকে মাথা ছুঁয়ে ২য় গোল এনে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর তাতেই বাঁধন ভাঙা উল্লাসে রোনালদো আর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ৮০ হাজার দর্শক। অ্যাগ্রিগেট তখন ২-২, তবে তখনও বাকি সেমি ফাইনালের টিকিট নিশ্চিতের। তখনও বাকি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদর প্রতিজ্ঞা পুরো করার। তখনও বাকি রোনালদোর আরো একটি হ্যাটট্রিকের।
ম্যাচের তখন ৭৬ মিনিটের খেলা চলছে। ডি বক্সের বাইরে করা ফাউলে ফ্রিকিক পেয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। আর সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের চীরচারিত ভঙ্গিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একবার বলের দিকে তাকাচ্ছেন আর একবার তাকাচ্ছেন গোলবারের দিকে। এরপর রেফারির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে একটু দম নিয়ে দৌড়ে গিয়ে বল মারলেন উলফসবার্গের রক্ষণভাগের গড়া দেওয়ালের মাঝখান দিয়ে। নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে উলফসবার্গ গোলরক্ষক দেখলেন বল জালে জড়াতে।
আর তাতেই রচিত হলো রূপকথা। রোনালদো রাখলেন তার প্রতিজ্ঞা। আর ম্যাচ শেষে তাই তো জিনেদিন জিদান প্রশংসায় ভাসালেন তার সতীর্থদের। জিদান বললেন, ‘রোনালদোর ব্যাপারে আমি কি বলতে পারি আসলে? সে দেখিয়ে দিল কেন সে বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সে আসলেই বিশেষ একজন।।’
অবশ্য কেবল রোনালদোকেই স্তুতিতে ভাসাননি জিদান। সেই সঙ্গে ভাসিয়েছিলেন পুরো দলকেই। ‘রোনালদোর পুরো দলকেই প্রয়োজন পড়ে। আমি বলতে চাই এই দলটাই আজকে জিতেছে। পুরো দলের চেষ্টাতেই এই জয় সম্ভব হয়েছে।’
এই ম্যাচের পর দুর্দান্ত দাপটে ফাইনাল খেলে শিরোপা জেতে রিয়াল। আর রূপকথার মতো অর্জনের টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথমটি জয় করে রিয়াল। ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে টাই ব্রেকারে হারিয়ে নিজেদের ১১তম চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয় করে লস ব্ল্যাঙ্কোস। আর জিনেদিন জিদান কোচ হিসেবে নিজের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও জয় করেন।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নক আউট পর্ব রিয়াল মাদ্রিদ বনাম উলভসবার্গ রোনালদো হ্যাটট্রিক