ভাত খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন সাঁতারু আরিফুল!
১৩ এপ্রিল ২০২০ ২২:১৯
জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশেও এর ছোবলের দরুণ দেশের সকল ঘরোয়া ক্রীড়া টুর্নামেন্ট বন্ধ। এমন থমথমে অবস্থায় দেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সারাবাংলাডটনেটের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার আয়োজনে আজকে থাকছেন সাঁতার জগতের উদীয়মান তারকা ক্রীড়াবিদ আরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার মাইল দূর ফ্রান্সে আছেন আরিফ। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের স্কলারশিপ নিয়ে গত দেড় বছর ধরে রুয়ার ক্লাব দ্য ফাইকিং সাঁতার কমপ্লেক্সে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে ফ্রান্সে ঘরবন্দী জীবন কাটছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০টি স্বর্ণপদক জয়ী আরিফুলের। মৃত্যুপূরীতে থেকেও দেশের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ফ্রান্সেই থেকে গেছেন এই সাতারু। প্রবাস থেকেই নিজের অভিজ্ঞতা, ক্যারিয়ার, বিসর্জন ও বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে জানালেন নেপাল এসএ গেমসে তিন পদক পাওয়া কিশোরগঞ্জের তারকা সাতারু আরিফুল।
সারাবাংলা: কোয়ারেন্টাইন সময় কেমন কাটছে ফ্রান্সে?
আরিফুল ইসলাম: একটা রুমের মধ্যে সারাদিন। ঘুমাই। নিজে রান্না করি। খাই। ব্যায়াম করি। মুঠোফোনে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলি। সারাদিন এভাবেই কেটে যায়।
সারাবাংলা: জিম করেন। কতখন সময় দেন এবং কিভাবে?
আরিফুল ইসলাম: প্রতিদিন এক ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করি। রানিং করি। স্কেপিং করি। তিনদিন ওয়েটলিফ্টিং করি।
সারাবাংলা: বাংলাদেশে তো আসতে পারতেন?
আরিফুল ইসলাম: হুম সুযোগ হয়েছিল। ফ্রান্সে ১৭ মার্চ বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তার আগেই দেশে ফিরতে পারতাম। পরিবারের কথা চিন্তা করে যাওয়া হয় নাই। আমি চাই না আমাকে দিয়ে কারও স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হোক। সেজন্যই যাই নাই।
সারাবাংলা: ফেডারেশন আর অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে যোগাযোগ করছে?
আরিফুল ইসলাম: কথা হচ্ছে। নিয়মিত আপডেট নিচ্ছে। কি করছি না করছি খোঁজ নিচ্ছে।
সারাবাংলা: দুই বছরের জন্য স্কলারশিপে ফ্রান্সে গেলেন। অভিজ্ঞতা বলেন…
আরিফুল ইসলাম: এখানে ফ্যাসিলিটি অনেক। তাদের শিডিউল অনেক সুন্দর। এখানে ট্রেনিং অনেক কম করি। শুধু চার কিলোমিটার সুইমিং। ট্যাকনিক, ফুট রিকভারি, টাইমিং ইম্প্রুভমেন্ট নিয়ে কাজ করা হয় বেশি। ওরা পুরো এক বছরের শিডিউল করে ফেলে। প্রতিদিন কি করবো সেটার শিডিউল আগে থেকেই করা থাকে। সেভাবে কাজ করতে হয়। সবমিলে ভাল সময় কাটছে।
সারাবাংলা: দেড় বছরে কি ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
আরিফুল ইসলাম: টাইমিং ইম্প্রুভ হয়েছে। ট্যাকনিক ঠিক হয়েছে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এখানে তিন মাসেও একবার ভাত খাওয়া হয় না। যা খুবই স্ট্রিক্ট। ঘুমের অভ্যাসেও শিডিউল তৈরি হয়েছে। দিনে দু’বার ঘুমাই এখন। এগুলো একজন অ্যাথলেটের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
সারাবাংলা: টাইমিংয়ে কেমন পরিবর্তন হয়েছে দেখছেন?
আরিফুল ইসলাম: ফ্রান্সে যখন আসি তখন ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড সময় লাগতো ১০০ মিটার ব্রেস্টট্রোকে। এখন এটা ১ মিনিট ২ সেকেন্ড হয়েছে। যা গত চার বছরেও হয়নি দেশে। ২০১৪ সালে ১ মি সাত সেকেন্ড ছিলাম। দেড় বছরে অনেক কমেছে। আরও কমাতে হবে।
সারাবাংলা: টাইমিংয়ে আপনার টার্গেট কি?
আরিফুল ইসলাম: এক মিনিটের নিচে আনতে চাই। স্পষ্টকরে বললে ৫৯ সেকেন্ডে নিতে চাই। এটা সম্ভব। মাত্র ২১ বছর তো। আরও হার্ড ওয়ার্ক করলে সম্ভব।
সারাবাংলা: তাহলেতো অলিম্পিক স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে আপনার…
আরিফুল ইসলাম: হুম। অলিম্পিকে সুযোগ পেতে আমাকে ১ মিনিট ১ সেকেন্ডে ১শ’ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক পার করতে হবে। যেটা সম্ভব।
সারাবাংলা: এখন এই অবস্থায় সম্ভব?
আরিফুল: লকডাউন শেষ হলে ট্রেনিং শুরু করবো। হার্ড ট্রেনিং করবো অনেক। তাহলে ব্যাক করা যাবে। অলিম্পিক পিছিয়েছে এক বছর। আর আমার স্কলারশিপের সময়ও এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করি সম্ভব।
সারাবাংলা: এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ গেমসে আসার কথা ছিল আপনার…
আরিফুল ইসলাম: পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিবো। এখন দুই দেশেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে। গেমসের জন্য প্রস্তুতির সময় লাগবে।
সারাবাংলা: ফ্রান্স আর বাংলাদেশের সাঁতারে কি ধরনের পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন? আর সাঁতারে আরও উন্নতি আনতে কি প্রয়োজন?
আরিফ: শীতের সময়টা ট্রেনিংটা কম করি বাংলাদেশে। ইউরোপে ট্রেনিং করা হয়। দেশে আগের চেয়ে ফ্যাসিলিটি ইকুপমেন্ট সরবরাহ বেশি করতে হবে। প্লাস ফুড কেয়ারটা। তিন মাসে একবারও ভাত খাই কিনা সন্দেহ। এখানে ফুড কেয়ার খুবই স্ট্রিক্ট। সকাল কপ্লাস দুধ কফি, দুপুরে শাক চিকেন ব্রুকলি। রাতেরও নির্দিষ্ট মেন্যু আছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রিত হলে আরও ভাল করা যাবে।
সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ
আরিফুল: আপনাকেও
সারাবাংলা/জেএইচ