Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তবুও ঘাটতি ফিটনেসেই


২২ এপ্রিল ২০২০ ১৫:১৮

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসারদের একটি চিত্র সম্ভবত কারো নজরই এড়ায় না। দিনের প্রথম সেশনে তাদের মধ্যে যে তেজদীপ্ততা দেখা যায় দিনের শেষ সেশনে এসে তা যেন উবে যায়! দিনের প্রথম দিককার ডেলিভারিতে যে গতি, ক্ষিপ্রতা ও বৈচিত্র্যময়তা তারা দেখিয়ে থাকেন শেষের দিকে এসে তার লেশমাত্র দেখা যায় না! এতে করে পেস ইউনিটের কাঙ্খিত সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয় দল।

এমতাবস্থায় প্রশ্নের উদ্রেক হতেই পারে, কেন এমন হয়? না, অন্য কোনো কারণ নেই। বিষয়টি এমন নয় যে স্রেফ হেয়ালির বসেই এমনটি করে থাকেন। বরং এক্ষেত্রে পেসারদের ফিটনেস ঘাটতিকেই বড় করে দেখছেন লাল সবুজের অভিজ্ঞ পেসার শফিউল ইসলাম। তার মতে এদেশের পেসারদের ফিটনেস লেভেল আরেকটু ভালো হলে স্পিন বিভাগের মতো তাদের হাত ধরেও সাদা পোষাকে ভুরি ভুরি সাফল্য আসতে পারত। পাশাপাশি ইনজুরির মিছিল তো আছেই। গতি ও অ্যাকশনের নুন্যতম ব্যবহার করতে গিয়েও অনেকেই চোটে পড়ে মাসের পর মাস চলে যান মাঠের বাইরে।

বিজ্ঞাপন

অথচ পেসারদের ফিটনেস নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পদক্ষেপের ঘাটতি কখনোই দেখা যায়নি। স্থায়ী ফিটনেস ট্রেনার তো আছেনই বিশেষায়িত ফিটনেস ক্যাম্পও আয়োজন করতে দেখা গেছে বহুবার। সবশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবজারে জাতীয় দল ও এর বাইরে থাকা পেসারসহ মোট ১৫ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষায়িত ফিটনেস ক্যাম্প। তাছাড়া প্রতিটি সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তো আছেই। কিন্তু তবুও ফিটনেস ঘাটতি রয়েই গেছে বলে মত শফিউলের।

শফিউল কথাটি এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারতেন না যদি না তিনিও একই পথের পথিক হতেন। ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার ইনজুরিকে আলিঙ্গন করে নেওয়া এই পেসার নিজেকে দিয়েই দেখেছেন, নিজের মধ্যেই ফিটনেস ঘাটতি কতটা প্রকট। যা তাকেও মুহুর্মুহু দলের বাইরে ঠেলে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে সাম্প্রতিক পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে তিনি দারুণ আশাবাদী। বিশেষ করে রঙিন পোষাক ও সাদা পোষাকের পেস বোলিং স্কোয়াড আলাদা করে দেওয়ায় দল হিসেবে বাংলাদেশ ভীষণ উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করেন শফিউল। এবং তা ভারত সিরিজ থেকেই পেতে শুরু করে দিয়েছে বলে জানালেন ৩০ বছর বয়সী এই ডান হাঁতি পেসার। বিসিবি’র এই পদক্ষেপ অনাগত দিনে এদেশের ক্রিকেটকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।

মুঠোফোনে সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেকথাই জানালেন ৩০ বছর বয়সী মিডিয়াম পেসার। কথা বলেছেন নিজের এবং দলের নানান দিক নিয়েও। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো-

সারাবাংলা: বারবার ইনজুরিতে না পড়লে আপনার ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ হতে পারত। আপনি একমত?

শফিউল: তাতো অবশ্যই। প্রথম তিন চার বছর খুব ভালভাবে কেটেছে। এরপর চার পাঁচবছর ইনজুরি, ইনজুরি আর ইনজুরি। যখনই দলে ফিরেছি ইনজুরিতে পড়েছি। একটা সিরিজ খেলে বা সিরিজে যাওয়ার আগে। তো ইনজুরি না হলে হয়ত আরো বেশি খেলতে পারতাম বা দেশকে আরো বেশি দিতে পারতাম।

সারাবাংলা: এদেশে মাশরাফির পরে আপনাকেই মূলত সিম বোলার হিসেবে ধরা হয়। এই দক্ষতটা আপনি কি করে রপ্ত করলেন?

শফিউল: আসলে মাশরাফি ভাই মাশরাফি ভাইই। তবে সবারই কম বেশি দক্ষতা থাকে। আমি চেষ্টা করি সিমে বল ফেলতে। আসলে এটা অনুশীলন থেকেই হয়। আমি এটা নিয়ে কঠোর অনুশীলন করি বলেই পারি।

সারাবাংলা: সুইংটা নিশ্চয়ই উপভোগ করেন?

শফিউল: সুইং সবাই উপভোগ করে। সেটা করতে হলে নতুন বলে সিম ব্যবহার করাটাই আসল। তো আমি আসলে অনুশীলনে এটাই চেষ্টা করি।

সারাবাংলা: হাথুরুসিংহের সময় বাংলাদেশে চার পেসারের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পরে সেখান থেকে টিম ম্যানজমেন্ট সরে এল । আপনি কী মনে করেন সেটা এখনো বজায় থাকলে আপনার জন্য ভালো হত?

শফিউল: আসলে চার পেসার বা তিন পেসারের ব্যাপারটি পুরোপুরি কন্ডিশন ও দলের ওপর নির্ভর করে। দল যেটা ভালো মনে করে সেটাই করে। হয়ত হাথুরুসিংহের সময় আমরা দেশের বাইরে অনেক ম্যাচ খেলেছি। বাংলাদেশেও খেলেছি। তখন বাংলাদেশে সিমারদের কন্ডিশন ছিল। কন্ডিশনই বলে দেয় একটি দল সিমার খেলাবে নাকি স্পিনার খেলাবে। তাছাড়া ওই সময়টা সিমাররা ভালোও করেছে। আমার যেটা বিশ্বাস বাংলাদেশ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে কন্ডিশন সিম হোক বা স্পিন; বাংলাদেশ ভালো করবে।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের বোলারদের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পেসাররা। যেহেতু এদেশে পেসবান্ধব উইকেট হয় না। এক্ষেত্রে আপনি কী তাই মনে করেন?

শফিউল: এখানে আমি একটা কথা বলব, সবাই কিন্তু ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে চায়। যেটা দেশের জন্য বা দলের জন্য ভালো সে সেটাই করার চেষ্টা করে। আমাদের স্পিন বিভাগটাও কিন্তু ভালো। আমরা এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সাথেও জিততে পারি। তো বাংলাদেশের উইকেটটাও ওভাবেই করা হয়, যেন সর্বোচ্চ সুবিধাটা নেওয়া যায়। আপনি দেখবেন দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া একটু হলেও স্পিনে দুর্বল। আমরা যেমন ওদের দেশে খেলতে গেলে ওরা সিমিং উইকেট তৈরী করে সুবিধা নেয় তেমনি আমরাও স্পিন উইককেট তৈরী করে নেই। আসলে দলের জন্য যেটা ভালো সেটা করার চেষ্টাই করা হয়। তবে আমাদের পেসাররা এখন বাংলাদেশ কিংবা বাইরেও ভালো করছে। তাছাড়া আমাদের দলটা আগের তুলনায় এখন অনেক শক্তিশালী। এখানে অভিজ্ঞ সিমার, ব্যাটসম্যান ও অলরাউন্ডার আছে। আমার কাছে মনে হয় আমাদের দলটা এখন অনেক পরিপূর্ণ।

সারাবাংলা: টেস্টে দেখা যায় আমাদের পেসরারা ভালো করে না। যেহেতু দেশে সিমিং উইকেট নেই সেহেতু তারা উইকেটও পায় না। আর উইকেট না পেলে পেস বোলিংয়ের সস্কৃতিও গড়ে ওঠে না। এই ব্যাপারটা আপনি কীভাবে দেখেন?

শফিউল: আমার কাছে একটা জিনিসই মনে হয় আমাদের পেসারদের ঘাটতি একটাই সেটা হলো আমরা সকালে যে পেসে বল করি দিনের শেষ বলটা সেই পেসে হয় না বা করতে পারি না। আমাদের চেষ্টা থাকে হয়ত ওই পেসটা হয় না। আমরা ফিটনেস লেভেলটা যদি আরেকটু উন্নতি করতে পারি তাহলে হয়ত এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আপনি দেখেছেন ভারতে কিন্তু আমাদের পেসাররাই বেশি উইকেট নিয়েছে। সত্যি বলতে উইকেটের সহায়তা পেলে আমাদের পেসরারও কিন্তু ভালো করেত পারে। রাহি (আবু জায়েদ) ভালো করছে। তবে এখন পেস বোলারদের ক্ষেত্রে আমাদের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যেমন; ওয়ানডে ও টেস্টে আলাদা আলাদা পেস স্কোয়াড এটা কিন্তু খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।

সারাবাংলা: বোলিংয়ের ক্ষেত্রে জুটি আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়?

শফিউল: অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিংয়ে যেমন জুটি গুরুত্বপূর্ণ, বোলিংয়েও কিন্তু তাই। পার্টনারশিপ বোলিং করলে দলের জন্য ভালো। রান চেক দেওয়া যায়। দেখা যায় একজন একদিক দিয়ে ভালো বল করল, আমিও পারফর্ম করলাম। এতে করে দল উপকৃত হয়। আসলে পার্টনারশিপে বোলিং করলে ব্যাটসম্যান কিছু না করার চেষ্টা করে। তখন সে শটস খেলতে গিয়ে আউট হয়। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি; পার্টনারশিপ ব্যাটিং বা বোলিং ‍খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সারাবাংলা: সংক্ষিপ্ত সংস্করণে পেসারদের ভালো করতে কী করতে হবে?

শফিউল: আমার কাছে মনে হয় ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে নিখুঁত লাইন-লেংথ ও বোলিং বৈচিত্র্যটা গুরুত্বপূর্ণ। যে যত তাড়াতাড়ি মাথাটা ব্যবহার করতে পারবে সে তত ভালো করবে। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে খুব দ্রুতই কন্ডিশন বদলে যায়। এক ওভারে এক রকম, পরের ওভারেই দেখা যায় আরেক রকম। এই পরিস্থিতিতে যে যত মাথা খাটাতে পারবে সে তত ভালো সাফল্য পাবে। ব্যাটসম্যান ভালো করলে হয়ত কোনো বোলার একদিন ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু এতে করে ধারাবাহিক ভালো করার সুযোগই বেশি। আবার আত্মবিশ্বাসও এই ফরম্যাটে দারুণ কাজে দেয়। এখানে জোরে বল করে ভালো করা সম্ভব না। এর চাইতে বৈচিত্র্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সারাবাংলা: আপনার শারীরিক গঠন শুকনা প্রকৃতির হলেও চোখে বেশ ক্ষিপ্রতা আছে। বোলিংয়ের সময় এটা আপনার বিশেষ অস্ত্র কিনা?

শফিউল: যেখানেই খেলতে যাই না কেন আমি চাই জিততে। এইরকম একটা মানষিকতা থাকে বলেই হয়ত মনের অজান্তে চোখে তা ফুটে উঠে। তবে আমি সবসময়ই আমার সেরাটি দিতে চাই। শারিরীক কোনো বিষয় এখানে মূখ্য না। সবকিছুই আসলে নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে শারীরিক গঠনের ওপরে নয়। তবে হ্যাঁ, আগ্রাসনটা এমনি এমনিই চলে আসে।

সারাবাংলা: আপনার চোখে পেসারদের ফেরাতে এদেশে সবচে ভালো অধিনায়ক কে?

শফিউল: আমি মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই; মুশফিক ভাই; রিয়াদ ভাই; সবার সাথেই খেলেছি। অধিনায়কত্বের দিক থেকে সবাই কোনো না কোনো দিক থেকে সফল। আমি যার সাথেই খেলেছি, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি এবং এখনো করি। আমাকে আসলে কেউই চাপ দেয় না। বরং সাহস দেয়। এদের সবার মধ্যেই বোলারদের ফেরানোর সামর্থ্য আছে। শুধু পেসার না, স্পিনারদেরও। সবাই আমাকে খুব সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করেছে।

সারাবাংলা: জনশ্রুতি আছে সাকিবের সঙ্গে আপনার রসায়ন বেশ ভালো। রহস্যটা কী?

শফিউল: আমার সাথে কিন্তু সবার সম্পর্কই ভালো। আমার অধিনায়ক কে সেটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে হ্যাঁ আমি যখন প্রথম খেলা শুরু করি তখন সাকিব ভাইকে পেয়েছি। ওই সময়টা তার সঙ্গে আমার ভালো যাচ্ছিল। সাকিব ভাই যেটা বলত আমি হয়ত সেটা করতে পারছিলাম। এবং সফল হচ্ছিলাম। মানে ভালো একটা সময় যাচ্ছিলো। এরপর রিয়াদ ভাই’র (মাহমুদউল্লাহ) সাথে বিপিএলে খুলনাতে দুই বছর খেলেছি; ওয়ানডেও খেলেছি। উনি যেভাবে বলতেন আমিও সেভাবে করতাম। আমি আসলে পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে পারতাম যেটা দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতো। মুশফিক ভাই’র সাথেও এভাবে কেটেছে। আমাকে যে যেটা বলত আত্মবিশ্বাস নিয়ে করার চেষ্টা করতাম এজন্য সবার সঙ্গেই ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

সারাবাংলা: করোনার সময়টা কি করে কাটছে?

শফিউল: আমি ঢাকাতে। সারাদিন বাসাতেই আছি। এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। আর যতটুকু সম্ভব মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আর ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

শফিউল: আপনাকেও।

টপ নিউজ পেসার শফিউল ফিটনেস ঘাটতি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল শফিউল ইসলাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর