Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘লিগে ভালো করেও জাতীয় দলে ডাক না পাওয়া কষ্টের’


২২ এপ্রিল ২০২০ ২০:২৯

জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: বিপিএলের গত মৌসুমের ঢাকার ডার্বিটা মনে আছে নিশ্চয়ই। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাকর এই দ্বৈরথে ঢাকা আবাহনীকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল মোহামেডান। সেই ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে যেন একাই গুড়িয়ে দিয়েছিলেন একজন দেশি ফুটবলার। জোড়া গোল করে আক্ষরিক অর্থেই একাই ডার্বির সব আলো কেড়েছেন তিনি। দেশি স্ট্রাইকারদের গোলখরার যুগে ফের আলোর ঝলকানি তোলা সেই ফুটবলারের আক্ষেপটা যেন ছাপিয়ে গেছে সবকিছুকেই।

বিজ্ঞাপন

তার নাম তকলিস আহমেদ। দেশের ঘরোয়া ফুটবলে এক পরিচিত নাম। গত মৌসুমে মোহামেডানের জার্সিতে সাত গোল করে এবার শেখ রাসেলে নাম লেখানো এই ফুটবলারের আক্ষেপের নাম ‘লাল-সবুজ’। জাতীয় দলের গোলখরার মরুভূমিতে এক চিলতে পানির ঝলকানির সুযোগ থেকেও ডাক না পাওয়াটাই যেন একটু টুকরো আক্ষেপের নাম হয়ে গেছে ২৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের।

জাতীয় দলে অনেক কিছু দেয়ার তাগিদটা এখনও জোরালো বলেই লিগে মাঠের পারফরম্যান্সে তেড়ে-ফুড়ে খেলেছেন গত মৌসুমে। মোহামেডানে ডাগআউগে তখন শন লিনকে দায়িত্ব দেয়া হলো। ফলটাও বদলাতো শুরু করলো সাদা-কালো জার্সিধারিরা। এই ব্রিটিশ কোচের অধীনে হারিয়ে যেতে বসা নিজেকে গোল করার ধারটাও যেন চমৎকারভাবে ফিরে পেলেন তকলিস। প্রথম লেগে গোলের দেখা না পাওয়া এই সিলেটের ফুটবলার দ্বিতীয় লেগে গোলের পর গোল করে গেছেন সাদা-কালো জার্সিতে। একে একে ঢাকা আবাহনী-শেখ রাসেলের মতো বাঘা বাঘা দলগুলোকে পরাস্ত করেছেন।

ভেবেছিলেন হয়তো এবার ডাক পাবেন জাতীয় দলে। লাল-সবুজ দল ভুগছে গোলখরায়। এটা পুরনো রোগ যদিও। তারপরেও লিগের পারফরম্যান্স দেখে কোচ জেমি ডে সাফ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য ক্যাম্পের ডাক দিলেন। সুযোগ এলো না তকলিসের। লিগে ঝকঝকে পারফরম্যান্স করেও ফেরা হলো না জাতীয় দলে!

এই আক্ষেপটাই যেন ঝড়ে পড়লো তকলিসের কণ্ঠে, ‘জাতীয় দলে ফেরার তাগিদটা সবসময় থাকে। সবার স্বপ্ন থাকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। দ্বিতীয় লেগে সাত গোল করে ভেবেছিলাম ডাক পাবো। কেননা তখন জাতীয় দলে স্ট্রাইকার দরকার ছিল। কিন্তু ডাক পেলাম না। ৩০ জনের স্কোয়াডে থাকতে পারি না!’ তবে এর থেকেও বড় আক্ষেপ দেখেন তকলিস, ‘যখন দেখি লিগে দুয়েকটা গোল করেও জাতীয় দলে ডাক পায় আর আমরা যারা গত লিগে ভাল করেছি তারাই ডাক পাই নাই। কষ্টতো হবেই’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় দলে খেলার থেকে গৌরব আর হয় না মনে করেন তকলিস। ২০১৩ সালে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল এই ফুটবলারের। মাত্র ১৮ বছরেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এরপর এশিয়ান গেমস, এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ ও রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বসহ ১৫ ম্যাচেরও বেশিবার জার্সি চাপিয়ে মাঠে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ভুটানের কিংসকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এই ফুটবলার গত দুই বছরে নিচেকে যেন চিনিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ জামালের হয়ে দুবার লিগ ও ফেডারেশন কাপ জয়ী এই ফুটবলার এখনও জাতীয় দলে ফিরতে উন্মুখ। সেজন্য নিজেকে আরো ঢেলে সাজাতেও রাজী আছেন, ‘স্বপ্নকে তাড়া করাই আমার কাজ। আমি ক্লাবে ভাল পারফরম্যান্স করে যেতে চাই। ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। ফুটবলার হিসেবে আমার কাজটা করে যেতে চাই।’

তবে গত মৌসুমের মোহামেডানের তকলিসকে যেন এবার শেখ রাসেলের ডেরায় একটু অচেনাই লাগছে। নীল জার্সিতে যে এখনও গোলের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। পয়েন্ট টেবিলেও নিচের দিকেই ঝুলছে তার দল। এ নিয়ে দলের সমন্বয়ের অভাব দেখছেন তকলিস, ‘এবার দলের কম্বিনেশন ঠিক হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদেশি ফুটবলাররাও তাদের সেরাটা দিতে পারছে না। সমন্বয়হীনতায় পুরো দলের মতে আমার পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে।’

এবার দারুণ বার্তা দিয়ে লিগটা শুরু হয়েও করোনার কারণে স্থবির হয়ে গেছে। এইবার ছোট দলগুলোও বড় দলগুলোকে হারিয়ে দিচ্ছে। যা অতীতে ৮ বছর ফুটবল ক্যারিয়ারে কখনও দেখেননি বলে জানালেন তকলিস, ‘আগের লিগগুলো দেখেন একটা দল রাজত্ব করে। কিন্তু এবারের লিগটা একটু ভিন্ন। ছোট দলগুলো বড় দলকে হারানোর সামর্থ রাখে। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ লিগ দেখেছি। যেটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হয়। পয়েন্ট টেবিলের ছোট দলগুলোও হারিয়ে দেয়ার সামর্থ রাখে বড় দলগুলোকে। কিন্তু করোনা যেন এই সম্ভাবনাকে মুচড়ে দিল।’

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হয়েছে এক মাস হলো। লিগের ভাগ্য শঙ্কায়। লিগ বাতিলের পক্ষে বেশিরভাগ ক্লাবই। করোনাক্রান্তি শেষ হলে তাই শুধু দেশি নিয়ে লিগ চালু করার পক্ষে তকলিসের প্রস্তাব, ‘বিদেশি ফুটবলারদের চুক্তি হয় মাসভিত্তিক। তাদের সঙ্গে চুক্তি সেড়ে ক্লাবগুলো চাইলে শুধু দেশিদের নিয়ে লিগ শেষ করতে পারে। এতে দেশের স্থানীয় ফুটবলারও সুযোগ পেল। জাতীয় দলের জন্যও অনেক ফুটবলারের পরীক্ষার পথ তৈরি হলো।’

এমন প্রস্তাবের কথা বলেছেন জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ। জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে’ও এমন একটা প্রতিযোগিতার কথা প্রস্তাব আকারে বাফুফেকে জানিয়েছেন বলে জানা যায়। যেখানে শুধু স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে লিগ করার কথা বলা হয়েছে। সে পথে কি হাটবে ক্লাবগুলো? তবে তকলিস আছেন নিজের ফিটনেস নিয়ে। ঘরেই বেয়াম করে সম্ভাব্য লিগের জন্য প্রস্তুতি রেখে দিচ্ছেন তিনি। মাঠে বল গড়ালেই যাতে ফিটনেসটা থাকে সেটারই প্রস্তুতি সেড়ে নিচ্ছেন তকলিস।

সারাবাংলা/জেএইচ

করোনা জাতীয় দল জেমি ডে তকলিস আহমেদ মোহামেডান শন লিন শেখ রাসেল স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর