শুধু কোচ নয় অভিযোগের তীর জাভেদ ওমরের দিকেও
২ মে ২০২০ ১৬:০৭
গায়ে তাদের এশিয়ার চ্যাম্পিয়নের তকমা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা দেখে মনে হলো বুঝি কোনো নবাগত দল খেলছে! গ্রুপ পর্বে চারটি ম্যাচ খেললো বটে কিন্তু একটিতেও জয়ের সোল্লাসে ভেসে মাঠ ছাড়া হলো না সালমা অ্যান্ড কোংদের। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ এলেও তা মুঠো গলে বেড়িয়ে গেল! আবার বিশ্বমঞ্চে বিবর্ণ বাংলাদেশ! টানা তিন বিশ্বকাপে জয়হীন থাকল এশিয়ার চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপে খেলতে আবার পার হতে হবে বাছাই পর্ব।
কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। কেন এমন হলো? হঠাৎ করেই কি তাহলে সালমা, রুমানা, জাহানরাদের সব স্কিল উধাও হয়ে গেল?
না, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। মূলত টিম ম্যানেজমেন্টের সমন্বয়হীনতা ও কোচিং স্টাফদের স্বেচ্ছাচারিতা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের চালক হিসেবে কাজ করেছে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন ম্যানেজার এক কথা বলেছেন তো কোচিং স্টাফ বলেছেন অন্যকথা। এমন ঘটনা খুব কমই আছে যে কোনো বিষয়ে তারা সম্মত হতে পেরেছেন। নামান্তরে যা বাংলাদেশ নারী দলকে আবারো একটি জয়হীন বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে। তবে সবচে বেশি উঠে আসছে কোচিং স্টাফের বসগিরির কথাই। কেউ আবার টিম ম্যানেজারকেও কাঠগড়ায় তুলছেন।
টিম ম্যানেজার ও কোচিং স্টাফদের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার শুরু সেই বিশ্বকাপের আগে থেকেই। অভিযোগ আছে। হাঁটুর চোটে পড়ে প্রায় দুই মাস মাঠের বাইরে ছিলেন বলে দলের কান্ডারি রুমানা আহমেদকে ছাড়াই নাকি বিশ্বকাপে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ম্যানেজার জাভেদ ওমর বেলিম। কিন্তু কোচিং স্টাফ তাকে ছাড়া বিশ্বকাপে যেতে চাননি।
আরো অভিযোগ আছে অস্ট্রেলিয়ায় দলের সঙ্গে রুমানা অনুশীলনে নামলেই নাকি ম্যানেজারের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যেত! কোচদের কাছে জাভেদ ওমর বলতেন ‘ও তো লম্বা সময় ম্যাচেই ছিল না। আমার মনে হয় এই ম্যাচে ওকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়াই ভালো।’ আবার রুমানার সামনা সামনি হলে বলতেন ‘ও তুমি!! হ্যাঁ হ্যাঁ খেলছো।’ পুরো বিশ্বকাপেই ম্যানেজারের এমন দ্বৈত আচরণ দেখতে ও সহ্য করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলের ভাইস রুমানা আহমেদকে।
রুমানার প্রতি ম্যানেজমেন্টের বৈষম্যের শেষ এখানেই নয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা খুশি তাই করেছেন হেড কোচ আনজু জেইন। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি রুমানাকে নিজের অর্ডারে ব্যাট করতে দেননি! ইনজুরিতে দুই মাস রুমানা মাঠের বাইরে ছিলেন এই ছুতোয় বিশ্বকাপ আসরেই তাকে আটে ও ছয়ে নামিয়েছেন! অথচ রুমানা ব্যাটিং করে থাকেন তিনে কি চারে কখনো বা পাঁচে নেমে। কিন্তু পাঁচের নিচে তিনি কোনোদিনও ব্যাটিং করেননি।
বলা বাহুল্যই হবে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় থাকা জয়টা স্রেফ হেড কোচের একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মুঠো গলে বেরিয়ে গেল! বোলিংয়ে নেমে অসাধারণ করছিলেন রুমানা। দুই ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৮ রান। কিন্তু অজানা এক কারণে তাকে আর বোলিংয়েই পাঠাননি হেড কোচ আনজু জৈন।
ব্যাটিংয়েও অর্ডার পুরোপুরি উল্টো গেল! ক্যারিয়ারজুড়ে যে মানুষটি তিন, চার কিংবা পাঁচে ব্যাটিং করে এসেছেন, এখান থেকেই দলকে সাফল্যে ভাসিয়েছেন সেই তাকেই নামানো হল আটে ও ছয়ে! এমন কান্ড কে দেখেছে কোনো কালে? বিষয়টি নজর এড়ায়নি এদেশের সাধারণ দর্শকেরও। ম্যাচ শেষে তাই অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলেন।
রুমানার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের বিষয়টি বিস্মিত করেছে খোদ অধিনায়ককেও। তাই কোচকে অনুরোধ করেছেন যেন রুমানাকে তার নিজ অর্ডারে পাঠানো হয়। কিন্তু কোচ তাতে কান দেননি।
সারাবাংলাকে সেকথাই জানালেন নারী দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন। ‘রুমানাকে কেন খেলায়নি এটা কোচের সিদ্ধান্ত ছিল। আমার কথা হলো রুমানা দুই মাস মাঠের ছিল তার মানে তো এই না তাকে এত নিচে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হবে। উনি কোনটা বুঝে এই কাজ করলেন সেটা উনিই জানেন। আমি অধিনায়ক হিসেবে তাকে বললাম রুমানাকে ওর অর্ডারে খেলান। কিন্তু উনি আমার কথা শোনেনি। আমার কথা যেহেতু শোনেনি আমি আর কি আর করতে পারি বলেন?’
এদিকে দলের ম্যানেজার জাভেদ ওমর বেলিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রুমানা আহমেদ সম্পর্কে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ‘দেখেন রুমানা প্রসঙ্গে আমাকে নিয়ে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। রুমানা হচ্ছে নারী দলের সাকিব। ওকে ছাড়া আমি কেন বিশ্বকাপে যেতে চাইব।’
কোচিং স্টাফদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। জানা গেছে দলের অভ্যন্তরীণ নানান বিষয়েও তারা আধিপত্য বিস্তার করতেন। এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজেদের সিদ্ধান্তও প্লেয়ারদের ওপর চাপিয়েও দিয়েছেন।
তবে জাভেদ ওমর বলছেন অন্যকথা। ‘কোচিং স্টাফদের নিয়ে আপনারা যা বলছেন যে তারা স্বেচ্ছাচারিতা করেছে আমি বলব ঠিক তা না। আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি যাতে করে বিশ্বকাপটা ভালো যায়।’
নারী দলের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের কাছে চিত্রটি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগগুলো করছেন আমরাও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগগুলো শুনেছি। এছাড়াও আরো অভিযোগ আছে। চেয়েছিলাম বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পরে ম্যানেজার, কোচ ও অধিনায়ক নিয়ে বসব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। শেষ হলে আমরা টুর্নামেন্টের প্রতিবেদন নিয়ে সবার সঙ্গে সামনা সামনি বসব। তখন যেটা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্ত নিব। তবে এটা ঠিক এই বিশ্বকাপে দল করার ব্যাপারে জাভেদ ওমরের খুব বেশি ভূমিকা ছিল না। আমাদের দলটা গত দুই বছর যে জায়গায় গিয়েছিল তাতে আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে ভালো করা। কিন্তু সেট হয়নি।’
অভিযোগের তীর কোচ জাভেদ ওমর বেলিম টপ নিউজ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ ব্যর্থতা বিশ্বকাপে ব্যর্থ