মুশফিক সেদিন খেলছিলেন হাতুরুসিংহের বিপক্ষে!
৩ মে ২০২০ ১৪:১৫
২০১৮ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ সেই ১৪৪ রানের বীরত্বগাথা ইনিংস এবং তামিম ইকবালের ভাঙা হাতে ব্যাটিং মনে আছে? বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকরা হয়তো কখনোই ভুলবে না ম্যাচটা। লঙ্কানদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল জানালেন, একটা জিদ নিয়েই ওই ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (২ মে) রাতে ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসেছিলেন তামিম-মুশফিক। আধাঘণ্টার আড্ডায় ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দুই বন্ধু। উঠে এসেছে স্মরণীয় সেই ম্যাচটির কথাও।
বাংলাদেশের কোচ থাকাকালীন অবস্থায় হাথুরুসিংহের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের শীতল সম্পর্কের খবর শোনা যাচ্ছিল। লাইভে কৌতুকের ছলে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন তামিম। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। শ্রীলঙ্কা ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ খেলেছে তার অধীনেই।
সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওভারেই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ফর্মে থাকা তামিম চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। সেই বিপর্যয়ে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দিয়েছিলেন মুশফিক। ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে মুশফিককে সঙ্গ দিয়েছিলেন তামিম।
ইনস্টাগ্রামের লাইভ আড্ডায় ওই ম্যাচের প্রসঙ্গ তুলে তামিম হাসতে হাসতে বলেন, ‘সেদিন তোর এত ভালো খেলার রহস্য কি ছিল? সেদিন বাংলাদেশ খেলছিল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, আর মুশফিক খেলছিল হাথুরুসিংহের সঙ্গে!’ তামিমের কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন মুশফিক। হাসিমুখে বলেছেন, ‘না না, ওরকম কিছু না…।’
সেদিন মুশফিকও চোট নিয়ে খেলেছিলেন।পাঁজরের চোট বয়ে বেড়িয়েছেন পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই। শ্রীলঙ্কার ম্যাচের আগে চোট বেড়ে যায়। তবুও খেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন। মুশফিক বলেন, ‘ফিজিওর সঙ্গে স্ক্যান করতে যাওয়ার সময়ই আমি বুঝে গেছি, ফ্র্যাকচার আছে। পরে রিপোর্টে সেটিই ধরা পড়ল। আমি ভেবেছিলাম, খেলা হবে না। ম্যাচের আগের রাতে ডিনার করছিলাম মাশরাফি (তৎকালিন অধিনায়ক) ভাই, রিয়াদ ভাইদের সঙ্গে। তখনই মনে হলো, কালকের ম্যাচটা খেলা জরুরি। ব্যথা যতই থাকুক, খেলে ফেলব।’
ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ের স্মৃতিচারণ করলেন তামিমও। তামিম বলেন, ‘আমি হাসপাতাল যাচ্ছিলাম আর মোবাইলে স্কোর দেখছিলাম। আমাদের দুই-তিনটা উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গেলো। তোর (মুশফিক) আর মিথুনের একটা দারুণ জুটি হলো। আমি যখন আবার ফেরত আসছিলাম তখন আবার একটা ধ্বস নামলো। ব্যাটসম্যানরা সবাই আউট। ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখি তুই ব্যাটিংয়ে। আর দলের স্কোর কোনোমতে এগিয়ে যাচ্ছে।’
‘আমাদের সবার জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন পাগলামি ভর করে। হয়তোবা তুই নিজেও জানিস না যে, তুই কি করতে যাচ্ছিস! ওই পাঁচ সেকেন্ড আমার ওটাই হয়েছিলো। আমি ব্যাট নিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। আমাদের কোচ স্টিভ রোডস পেছনে দৌড় দিয়ে এসেছিলো। আমাকে থামিয়ে বলে, ‘‘তুমি কি করতে যাচ্ছো? আমি বললাম, ‘আমি যাই।’ ও আমায় আবার বলল, ‘এটা তো পরিকল্পনা ছিলো না।’ আমি বললাম, ‘আমি ম্যানেজ করতে পারবো।’ তখন ও আমাকে আমার দায়িত্ব নিতে বলে।’
‘আমার মতে ওই মুহূর্তে আমি ঠিক কাজটা করেছি। আর ওই সময়ে আমাকে সবচেয়ে সহজ বলটাই ওরা করেছে। বোলার যদি আমাকে ইয়র্কার বা উইকেটে বল করতো তাহলে কঠিন হয়ে যেতো। তুই জানিস যে, আমার সব পরিসংখ্যান, সব ইনিংস মনে থাকে। কিন্তু তোর ওই ইনিংস আমার মনে নেই। এত ব্যথায় ছিলাম যে আমি কিছু মনে রাখতে পারিনি। যেভাবে চার-ছয় মেরেছিলি আমার কোনো ধারণাতেও ছিল না।’
মুশফিকের ১৪৪ রানে শেষ পর্যন্ত ২৬১ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৪ রানেই। এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা মুশফিক বনাম হাথুরুসিংহে মুশফিকুর রহিম