Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হোম কোয়ারেনটাইন করতে গিয়ে আটকা পড়েছেন জাহানারা


৬ মে ২০২০ ১৬:০৪

করোনাভাইরাস এদেশে প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর শুরু থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ মার্চ বিসিবি’তে এক সংক্ষিপ্ত সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত বলবৎ হয়। বিসিবি সভাপতির আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণাটি পাওয়া মাত্রই ছেলে ক্রিকেটারদের মতো অধিকাংশ মেয়ে ক্রিকেটাররাও নিজ নিজ জেলায় ফিরে গেছেন। তবে থেকে গেছেন কেবল জাহানারা। অবশ্য থেকে গেছেন বললে ভুল হবে, তিনি মূলত ঢাকায় আটকা পড়েছেন। সেটা অন্য কারণে নয়, হোম কোয়ারেনটাইন করতে গিয়ে।

বিজ্ঞাপন

৪ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ফিরে সপ্তাহখানেক বিশ্রামের পর জাতীয় লিগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লাল সবুজের নন্দিত এই প্রমীলা পেসার। তখনই খুলনা থেকে পরিবারের ফোন এল, ‘বিশ্বকাপ থেকে এলে বাসায় আসবে না?’ জাহানারা বললেন, ‘২৬ মার্চ থেকে জাতীয় লিগ শুরু। সেটা শেষ করে আসি।’ এর পেছনে কারণ ছিল খেলা শেষে একবারে বিশ্রাম নেওয়া।

যা হোক, সেই মোতাবেক দেশে ফেরার ৮ দিন পর তিনি মিরপুর জাতীয় একাডেমিতে জিম ও স্কিল প্রস্তুতি শুরু করলেন। ঠিক তখনই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। উ্দ্ভুত পরিস্থিতিতে সপ্তাহখানেক বাদে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের খেলাধূলা বন্ধ ঘোষণা করলেন। তখনও বাস্তবতা বুঝে উঠতে পারেননি জাহানারা। ভেবেছিলেন, খেলা বন্ধ তো অসুবিধা নেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যাবে। এবং পরিস্থিতি বুঝে পরে পরিবারের কাছে যাওয়া যাবে।

কিন্তু আসল ধাক্কাটি খেলেন যখন বিসিবি সভাপতি সব ধরনের ক্রিকেট স্থগিত ঘোষণা করলেন। কেননা মাঠে খেলা নেই মানে অনুশীলন, ফিটনেসও নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাও হোম অব ক্রিকেটে করতে যাবেন পেছন থেকে চোখ রাঙাচ্ছিল করোনা। অগত্যা খুলনাতেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

কিন্তু হঠাৎ করেই তার অনুধাবন হলো, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরলাম কিন্তু হোম কোয়ারেনটাইনে তো থাকলাম না। তৎক্ষণাৎ পরিবারকে ফোন দিয়ে বললেন, আমি হোম কোয়ারেনটাইন শেষ করে আসছি। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছি কোয়ারেনটাইনে না থাকলে তোমরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। তার পরিবারও তাতে সায় দিল। কিন্তু ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন যখন শেষ হলো তখন দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। ফলে আর পরিবারের কাছে যাওয়া হয়নি জাহানারার। ঢাকায় আটকা পড়ে গেলেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে সেই কথাই জানালেন লাল সবুজের এই নন্দিত প্রমীলা পেসার।

‘আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে বিশ্বকাপ খেলে ৪ মার্চ বিকেলে ঢাকায় ফিরি। ফিরে ভাবলাম একটা সপ্তাহ বিশ্রাম নেই। পরে কাজ শুরু করব। আমি যথারীতি একটা সপ্তাহ বিশ্রাম নিলাম। এরপর আমি চাইলে বাসায় যেতে পারতাম কিন্তু যাইনি কারণ ২৬ মার্চ থেকে কক্সবাজারে আমাদের জাতীয় লিগ ছিল। বাসায় বললাম লিগ শেষ করে আসি। কারণ তখন লম্বা ছুটি পাওয়া যাবে। যা হোক লিগের কথা ভেবেই ফেরার অষ্টম দিনে আমি জিমে গেলাম, ৯ নম্বর দিনে আমি রানিং করেছি। তারপরে স্কিল করেছি। এমনকি ছেলেদের সাথে ম্যাচও খেলেছি। ওই ম্যাচে আমি চার উইকেটও পেয়েছি। তখন দেশে একজন দুজন করে করোনা রোগী বাড়ছে। তখন অবশ্য অতটা বুঝতে পারিনি। এরপর যখন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী খেলাধুলা বন্ধ করে দিলেন, মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিলেন চিন্তা করলাম খেলাধুলা যখন বন্ধ ফিটনেসটা তো করা যাবে। তবে বড় ধাক্কাটি খেলাম যখন পাপন স্যার (নাজমুল হাসান পাপন) অনির্দিষ্টকালের জন্য খেলা বন্ধ করে দিলেন। ভাবলাম এভাবে কীভাবে সম্ভব। আমার তো তখন কান্নাকাটি অবস্থা, কীভাবে কী করব। তখন আমি অনুধাবন করলাম আমি যে বিদেশ থেকে এসেছি কিন্তু ১৪ দিনের হোম কোয়ারেনটাইন তো করিনি। আমি যদি নূন্যতম হলেও ভাইরাসটি বহন করে থাকি তাহলে তো বাসায় গিয়ে পরিবারকে সংক্রমিত করব। আমি বাসায় বললাম আগে কোয়ারেনটাইন করি এরপরে বাসায় ফিরি। আমার বাবা-মা বললেন ঠিক আছে। আমি ঢাকার বাসায় কোয়ারেনটাইন শুরু করলাম। কিন্তু যখন শেষ হলো তখন আর উপায় নেই। দেশে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে।’

কোয়ারেনটাইন করতে গিয়ে ঢাকায় থাকায় যেটা হয়েছে সেটা হলো লম্বা সময় প্রিয় পরিবারের সান্নিধ্যে থাকার সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেছে দেশসেরা এই পেসারের। সতীর্থরা যখন নিজ নিজ জেলায় পরিবারের সঙ্গে আনন্দঘণ মুহুর্ত কাটাচ্ছেন তখন ঢাকায় একা নিঃসঙ্গ কাটছে জাহানারা আলমের করোনাকাল। মিস করছেন প্রিয় পরিবারকে।

‘দেখেন আমরা খেলাধুলার মধ্যে থাকি বিধায় পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সময় পাই না। সারাবছরই ব্যস্ত থাকতে হয়। আমি খুলনায় এক দুই দিন কিংবা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের ছুটিতে যাই। এটা একটা বড় সুযোগ ছিল বাবা-মা’র সঙ্গে থাকার। কিন্তু কোয়ারেনটাইন করতে গিয়ে পারলাম না।’

ঢাকায় একা আছেন সত্যি তবে একটি জায়গা তার স্বস্তি আছে। সেটা হলো, তিনি ও তার পরিবার সুস্থ আছেন। ‘আমার বাবা-মা বলছেন সুস্থ আছ, ভালো আছ ওখানেই থাক। এটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া। কেননা সুস্থ থাকলে পরিবারকে অনেক সময় দিতে পারব। কিন্তু অসুস্থ হলে তো আর সেটা সম্ভব না।’

তবে পরিবার থেকে দূরে থেকেও করোনার সময়টা নেহায়ৎ মন্দ যাচ্ছে না জাহানারার। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন, নিজে নিজে কাউন্সিলিং করছেন এবং সর্বপরি সময়টা পুরোপুরি উপভোগ করছেন। দৈনন্দিন রুটিনে অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

‘সবকিছু মিলিয়ে নিজেকেই নিজে আত্মবিশ্বাসী রাখার চেষ্টা করছি। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এসময়টা যদি মানসিকভাবে সুস্থ না থাকি সামনের দিনগুলোতে ভালোকিছু করতে পারব না। প্রতিটি মুহুর্তে নিজে নিজে কাউন্সিলিং করছি, প্রতিটি মুহুর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। রাত জাগছি রাতেও ফ্রি হ্যান্ড (ব্যায়াম) করছি।’

করোনার সময় ছেলে ক্রিকেটেরদের মতো দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাহানারা আলম। গত ১ এপ্রিল জাহানারার ২৭তম জন্মদিন ছিল, আর হোম কোয়ারেনটাইন করতে গিয়ে ঢাকায় আটকে পড়া জাহানারা জন্মদিনে ঘরে বসে না থেকে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দিয়েছেন বাড়ির পাশের দুঃস্থ মানুষদেরকে।

করোনাভাইরাস কোয়ারেনটাইনে ক্রিকেটার জাহানারা জাহানারা আলম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর