মোনেম মুন্নার সেই জার্সি নিলামে উঠছে আগামিকাল
৮ মে ২০২০ ২০:৫০
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশের জনপ্রিয় ফুটবল তারকার অকালমৃত্যুর ১৫ বছর পরেও দেশে এই করোনাভাইরাস সংকটে দুস্থদের সহযোগিতার মাধ্যমে যেন আরেকবার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে মোনেম মুন্না। ১৯৮৯ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ লাল দলের অন্যতম সদস্য কিংব্যাক খ্যাত এই ফুটবলারের সেই জার্সির নিলামের পুরো অর্থ দেয়া হবে মহামারী কবলিত অসহায় মানুষদের সাহায্যে বলে জানিয়েছেন তার সহধর্মিনী সুরভী মুন্না।
তার সেই জার্সি নিলামে উঠছে আগামী শনিবার (৯ মে)। সামাজিক যোগাযোগ পেজ ‘অকশান ফর একশন’ থেকে তার জার্সি নিলামে তোলা হচ্ছে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের ব্যাট এই পেজ থেকেই নিলামে তোলা হয়েছিল।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার মোনেম মুন্না জার্সি নিলামে তোলা হচ্ছে। নিলামে ২ লাখ টাকা সেই জার্সির ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নিলামে অংশ নিয়ে তার সেই বিরল জার্সি লুফে নিতে পারেন আপনি।
জার্সির অর্থ পুরোটাই গরীব-দুস্থদের মানবিক সেবায় কাজে লাগানোর ইচ্ছা মোনেম মুন্নার সহধর্মিনী সুরভী মুন্নার। এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘১০ টাকায় বিক্রি হোক কিংবা ১০ লাখ টাকায়-সেটা আমার কাছে কিছু না। আমি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জার্সিটি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছি। যে টাকায় বিক্রি হবে তা পাবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষ। তবে মোনেম মুন্না এই দেশের ফুটবলে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। আমি চাই জার্সির মূল্যটা মুন্নার নামের সঙ্গে মানানসই হোক। একটা সম্মানজনক দামেই কেউ যেন ওটা কিনে নেন’
এই জার্সিসহ মোনেম মুন্নার বেশিরভাগ খেলা সামগ্রী স্মৃতি জমিয়ে রাখার গল্প জানালেন তিনি, ‘আমরা যখন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসি তখন মুন্নার অনেক জিনিসই এনেছিলাম। বিভিন্ন খেলার জার্সি, বুট, বল। এগুলো আমি খুব যত্ন করে রেখেছিলাম। মুন্না মারা যাওয়ার পর থেকে তার সব কিছুই আমার কাছে আমানত হিসেবে আছে। তার একটি জার্সি আমি মহৎ কাজের জন্য বিক্রি করতে যাচ্ছি। জার্সিটি নিলামে ওঠাবো সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বের করে দেখলাম এখনো চকচকেই আছে। ধুয়ে, আয়রন করে রেখে দেয়ার কারণে সুন্দরই আছে এখনও। তবে জাতীয় পতাকার সবুজ রংটা একটু ফ্যাকাশে হয়েছে। অনেক দিনের তো তাই।’
নারায়ণগঞ্জে মোনেম মুন্নার খেলা জীবনের সব স্মৃতি-অবদানের গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেয়ার একটা সংগঠন আছে। তার নাম ‘মুন্না স্মৃতি সংসদ’। এই সংগঠন দিয়ে নিলামের অর্থ দেয়ার ইচ্ছা মোনেম মুন্নার অর্ধাঙ্গীর, ‘আমি ভেবে রেখেছি, যে টাকায় বিক্রি হোক তার বড় একটা অংশ ‘মুন্না স্মৃতি সংসদের’ মাধ্যমে গরীব মানুষকে দেয়া হবে। এ ছাড়া আমার এবং মুন্নার অনেক পরিচিত মানুষ আছে যারা এখন কষ্টে, তাদেরও আমি সাহায্য করবো। সব কিছুর মালিক আল্লাহ। দেখা যাক কি হয়।’
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা রক্ষণভাগের ফুটবলার মোনেম মুন্না খেলোয়াড় জীবনে দাপটের সঙ্গেই রাজত্ব করেছেন জাতীয় দল ও ক্লাবে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কয়েকটি শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। মারদাকা চার জাতি টুর্নামেন্ট, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের শিরোপাসহ অনেক শিরোপায় অনন্য ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৮৯ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের শিরোপাজয়ী সেই ‘২’ নম্বর জার্সিটি নিলামে তোলা হচ্ছে।
প্রিমিয়ার লিগে ক্লাব পর্যায়ে ঢাকা আবাহনীতেই তার পুরো ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন মুন্না। ১৯৯৯ সালে দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায় তার। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করলেও বেশিদিন সুস্থ থাকতে পারেননি তিনি। ২০০৫ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান এই কিংব্যাক।
শনিবার একই দিনে (৯ মে) মোনেম মুন্নার জার্সির সঙ্গে নিলামে তোলা হবে সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসানের জার্সিটিও। ২০১৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল তৈয়ব পরিচালনা করেছিলেন এই জার্সিটি পরেই। নিলামের অর্থ দান করা হবে দুস্থ মানুষদের জন্য।
সারাবাংলা/জেএইচ