মুশফিকের প্রত্যাশা— বাংলাদেশকে একদিন বিশ্বকাপ জেতাবেন আকবর
১০ মে ২০২০ ০১:১৮
যুগের পর যুগ ব্যর্থ হয়ে একটি শিরোপার জন্য বুভুক্ষু হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। ২০১২ ও ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠাই ছিল পুরুষ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও শিরোপাশূন্য ছিল টাইগাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল সেমিফাইনাল।
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে যুব বিশ্বকাপের হট ফেভারিট মেহেদি হাসান মিরাজের বাংলাদেশ সেমি পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল। এর আগে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালরা সেটাও পারেননি। গত ফেব্রুয়ারিতে সব আক্ষেপ দূর করেছেন আকবর আলী, রকিবুল হাসান, তাওহিদ হৃদয়রা।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হট ফেভারিটদের হটিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল লাল-সবুজের দল। হোক না যুব পর্যায়ে, বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। বিশ্বকাপ দিয়ে শিরোপা ক্ষরা ঘুচেছে, এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারতো! বিশ্বকে আগমনী বার্তা দিয়ে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়, ফাইনাল ম্যাচ আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আকবর আলীর বীরত্বগাথা- এসব ভোলার মতো নয়। ফাইনালে কী অসাধারণ ধৈর্যের পরিচয়টাই না দিয়েছিলেন আকবর। ৭৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রান নয়, মুগ্ধ করেছে ১৮ বছর বয়সী যুবকের মনোযোগ আর ধৈর্য।
ফাইনালে ১৭৭ রানের জবাব দিতে নেমে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ হঠাৎই ১০২ রানের মাথায় ছয় উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায়। খোঁড়াতে খোঁড়াতে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের সেরা স্কোরার পারভেজ হোসেন ইমন যখন ফিরে যাচ্ছিলেন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। ব্যাটসম্যান বলতে যে তখন শুধু আকবরই অপরাজিত। ওদিকে ভারতীয় স্পিনার রবি বিষ্ণুয়ের প্রতি ডেলিভারিই সাপের ফনার মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। সেই সময়টাতে আকবর যা করেছেন সেটাই মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
তিন উইকেটে জয়ের জন্য রান লাগতো ৩৫, হাতে বল ছিল অনেক। আকবর রানের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেট আকড়ে পড়ে থাকার কৌশল অবলম্বন করেছেন। একটা পর্যায়ে টানা ২৫ বল রান পায়নি বাংলাদেশ। এই ধৈর্যই বাংলাদেশকে প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছে। জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মুশফিকুর রহিম বললেন, আকবর ‘গড গিফটেড’। মুশফিকের প্রত্যাশা একদিন জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেবেন এই তরুণ।
করোনাভাইরাসে আর্থিকভাবে বিপদে পড়া মানুষদের সহযোগিতার লক্ষ্যে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা সেই ব্যাট, জার্সি ও গ্লাভস নিলামে তুলেছেন আকবর। মুশফিকুর রহিম নিলামে তুলেছেন বাংলাদেশের হয়ে তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটটি। শনিবার (০৯ মে) রাতে অনলাইন লাইভ নিলামে যোগ দিয়েছিলেন দুজন। আকবর বিষয়ে মুশফিক এমন কথা বলেছেন সেখানেই।
তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আকবরের বয়সে আমি এতো ট্যালেন্ট ছিলাম না। ফাইনালে ও যে ইনিংসটা খেলেছে সেটা এক কথায় অসাধারণ। ওকে দেখে মনে হয়নি যে সে অধিনায়ক। মনে হচ্ছিল সাধারণ একজন যে খেলাটা শেষ করেই আসবে।’
মুশফিকুর রহিম যোগ করেন, ‘আকবর পুরোপুরিই গড গিফটেড। ও যেভাবে কথা বলে তাতে মনে হয় অনেক পরিণত। ও যতোটুকু পেরেছে করেছে (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়) তবে আমি মনে করি এটা শুরু। এটা তখনই শেষ হবে যখন ও ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাবে।’
লাইভ আলোচনায় মুশফিক, আকবরদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন দেশের নামকরা কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমও। ক্রিকেট মহলে কাছে ‘ফাহিস স্যার’ হিসেবে পরিচিত গুণী এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব বলেছেন, আকবর বড় ক্রিকেটার হবেন।
তিনি বলেন, ‘আকবরের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সেই ফাইনাল ম্যাচের সময়। ওই রকম একটা সময়ে অধিনায়ক হিসেবে মাঠে গিয়ে অমন একটা ইনিংস খেলে দলকে জেতানো, এটা অভাবনীয় একটা বিষয়। ও বোধ হয় এমন একজন যে চাপের মুখেও যেটা করা দরকার সেটাই করতে পারে। এটা একটা বিরল গুণ। আমি আর একটা কথা বলতে চাই, যখন ফাইনাল জিতে সে ফিরল তারপর যে আচার-আচরণ সে দেখিয়েছে তাতে আমার মনে হয়েছে ও ভবিষ্যতে বড় মাপের একজন খেলোয়াড় হবে।’