আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছে বিসিবি
১২ মে ২০২০ ১৫:৩১
পরিসংখ্যান বলছে দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নয় হচ্ছে অবনতি। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। গতকালের কথাই ধরা যাক না। ১ হাজার ৩৪ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ল! যা কীনা এদেশে করোনা প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পরে একদিনে সর্বোচ্চ। মৃতের সংখ্যাও নেহায়ৎ কম নয়, ১১ জন। এতে ধরে নেয়াই যায় সামনে আরো খারাপ খবর আসতে পারে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ মাঠে ফেরাতে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের বিকল্প দেখছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি। এছাড়া সরকারি নির্দেশনাকেও সবিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে টাইগারদের এই অভিভাবক সংস্থা।
কেননা গত ১৬ মার্চ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমেই অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সকল খেলাধুলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। শুরু করতেও তাদের অনুমতি লাগবে। তারা যখন মনে করবেন মাঠে খেলা ফেরানোর মতো পরিস্থিত দেশে তৈরি হয়েছে তখনই আবার সব ধরনের ক্রিকেট ফিরবে।
অনেকের মনেই প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, দেশের করোনা পরিস্থিতি যখন চরম আকার ধারণ করেছে তখন কেন মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর আলোচনা? তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, গেল সপ্তাহে সরকারের নেওয়া বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ (স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন অফিস ও শপিং মল খুলে দেওয়া) ক্রিকেটার ও ক্লাব কর্তৃপক্ষের মনে আশার সঞ্চার করে। তারা ভাবতে শুরু করেন তাহলে নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বন করে ঈদের পরে অর্থাৎ জুনের প্রথম সপ্তাহে মাঠে খেলা ফেরানো সম্ভব। এবং বিষয়টি তারা ক্রিকেটারদের ভালোমন্দ দেখভাল করার সংগঠন কোয়াবকে (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) অবহিত করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে গত শনিবার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের পরে লিগ ফেরানোর আলোচনা করে। আলোচনা শেষে গত রোববার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কমিটি-সিসিডিএম বরাবর চিঠি পাঠায় কোয়াব। কোয়াবের দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতেই দেশের ক্রান্তিকালেও মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর আলোচনাটি উঠেছে। এবং এর প্রেক্ষিতেই বিসিবি’র মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জালাল ইউনুস কথাগুলো জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ মে) সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছি। দেখতে চাচ্ছি পরিস্থিতির আশু উন্নয়ন হয় কিনা। আপনার কী মনে হয় করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে ঈদের পরে লিগ শুরু করা সম্ভব? আগামি এক সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা আপনি আমি কেউই জানি না। গতকালও ১ হাজার ৩৪ জন শনাক্ত হলো। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কি ঝুঁকি নিতে চাইবে? ১৬ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতএব ঘরোয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব ধরনের খেলা ফেরাতে সরকারের অনুমতি লাগবে। বিষয়টি এমন না বিসিবিকে বললেই খেলা ফেরানো সম্ভব।’
‘আমরা আগে দেখি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। জুনে না হোক জুলাই পর্যন্ত দেখি। তখন তো পরিস্থিতি বুঝতে পারব তাই না? সরকার যখন মনে করবে খেলা শুরু করা সম্ভব আমাদের নির্দেশ দেবে। তখন আমরা শুরু করতে পারব। তাছাড়া ক্লাব কর্তৃপক্ষ এখন টাকা দেবে কোথা থেকে? করোনায় তিন মাস তাদের কোনো ব্যবসা নেই। তাদেরও তো টাকাটা যোগাড় করতে হবে। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। আমরাও চাই খেলা হোক। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নয়।’
প্রসঙ্গত, ১৫ মার্চ মাঠে গড়িয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকটের ২০১৯-২০২০ মৌসুমের খেলা। কিন্তু ওই মাসের শুরুতেই দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকলে প্রথম রাউন্ড শেষে অনির্দিষ্ট কালের জন্য লিগ বন্ধ ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পান। ১৯ মার্চ বিসিবিতে সংক্ষিপ্ত সভাশেষে দেওয়া এই ঘোষণার সময় তিনি আরো বলেছিলেন, ‘দেখি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয় কীনা। যদি হয় তাহলে ভেবে দেখব খেলা ফেরানো যায় কীনা।’
কিন্তু তখনও পরিস্থিতির উন্নতি হলো না বলে সিসিডিএম নিজেরদের মধ্যে আলোচনা করে আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য লিগ স্থগিত করে দেয়। যা আজও বলবৎ আছে।